• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্মহত্যা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

  জবি প্রতিনিধি

১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:১১
মতামত প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা
মতামত প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

আত্মহত্যা একটা সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। সমস্যাটা হয়তো সাময়িক এবং এর সমাধানও ভবিষ্যতে বিদ্যমান। তবে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় সমস্যার মোকাবেলা না করে কাপুরুষের ন্যায় আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান প্রজন্মের মাঝে আত্মহত্যা একটি মহামারির ন্যায় দেখা দিয়েছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন- মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম।

হীনমন্যতা নয়, জয় করুন নিজেকে

আত্মহত্যার মাধ্যমে যারা মারা যায় তাদের প্রায় অর্ধেকের মধ্যে জটিল ডিপ্রেশন দেখা যায়। বাইপোলার ডিসঅর্ডার আত্মহত্যার জন্য ২০ গুণ বেশি ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণ সময়ের চেয়ে কোভিডকালে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এক বছরে বাংলাদেশে আত্মহত্যা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।

করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, মৃত্যু ভয়, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততার কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, আত্নীয় স্বজন বন্ধুদের সান্নিধ্য না পাওয়ায় বাড়ছে একাকিত্ব। অর্থাৎ হীনমন্যতা, একাকিত্ব থেকেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মহত্যাকে সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেয়।

কিন্তু নিজেকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে নিজের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সমস্যা সমাধান করতে পারি। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা না করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক আত্নচর্চার মাধ্যমে আমরা আত্মহত্যা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হব।

(আনন্যামা নাসুহা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়

বর্তমান করোনা মহামারির পাশাপাশি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য আরেকটি ভয়ানক ব্যাধি হচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। এই মহামারিতে আমরা বেশিরভাগ সময় ঘরবন্দি সময় পার করছি এবং আমরা খুব সহজেই কাউকে নিজেদের মনের কথা বলতে পারছি না আগের মতো। ফলে আমাদের মাঝে হতাশা দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে আমাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রিয়জন হারানোর ফলে, অনেকে চাকরি হারানোর ফলে আবার অনেকে সময় মতো লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের পাশে না দাঁড়াতে পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। ফলে তাদের কাছে জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। আর এই হতাশা থেকে তথাকথিত মুক্তি পেতে পরিবার ও আপনজনদের কথা না ভেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকে। আত্মহত্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকলেও, মূল কারণ কিন্তু একটাই, আর সেটা হচ্ছে চাপ, বিষণ্ণতা এবং হতাশা, যা তারা বহন করতে পারেন না।

কিন্তু আমাদের সকলের বোঝা উচিৎ আত্মহত্যা কোনো সমাধান না। এটি শুধুমাত্র পরিবার ও সমাজে অন্ধকার নিয়ে আসে।

(মোঃ ইসমাইল হোসেন তাফসীর, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)

আত্মহত্যার অন্তরায় দারিদ্র

আত্মহত্যা এখন প্রতিদিনের খবর। আত্মহত্যার কারণ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে দরিদ্রতা। অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে বিষণ্ণতায় ভোগে। দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন মানুষ আত্মহত্যা বেছে নেয়। আত্মহত্যায় নারীদের সংখ্যাই বেশি। পরিবারে কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমে প্রতারণা, ব্লাকমেইল, পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ না হওয়া প্রভৃতি কারণে আত্মহত্যা করেন তারা। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বেকার জীবনের ঘানি টানতে না পেরে, কারো পড়ালেখা বন্ধের নিশ্চিত পরিস্থিতি। পরিবারে অভাব অনটনে মেয়েদের বিয়ের তাড়া দেয়াও একটি কারণ আত্মহননের। আত্মহত্যায় ঝড়ে যায় সম্ভাবনাময় দেশের একেকটা প্রদীপ।

আত্মহত্যা ঠেকাতে নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে। কষ্ট, বিপদ, যন্ত্রণা না দেখে পরিবার ও সমাজের বৃহৎ স্বার্থ দেখতে হবে। তবেই বাঁচবে প্রাণ।

(সুমাইয়া সুলতানা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)

আত্মহত্যা কাপুরুষের কাজ

কেউ কেউ বলতে পারে, জীবনের প্রতি আমি যতখানি বীতশ্রদ্ধ- তার চাইতেও বাঁচার প্রতি আমার আকুতি বেশি, সে কারণেই আমি আত্মহত্যা করার মতো সাহস অর্জন করতে পারি না। হয়তো হতে পারে জীবনের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা আছে, নানা সময়ে নানা বিষয়ে হতাশা তৈরি হয়, নিজেকে নিয়েও আমার প্রচণ্ড হতাশা আছে, নিজের সারাজীবনের পাহাড়সম ব্যর্থতা শুধু নয়, সারাজীবনের যাবতীয় ভুল- অপরাধ- অন্যায় আমাকে ভোগায়, একই সঙ্গে সফলতার আকাঙ্ক্ষা আর নীতি-নৈতিকতার বোঝা আমাকে প্রচণ্ড ক্লান্ত করে- সমস্ত বৈপরীত্য আর টানাপোড়ন আমার কাছে মাঝেমধ্যে অসহ্য লাগে।

তারপরেও স্বীকার করি, জীবনের প্রতি একেবারেই বীতশ্রদ্ধ বলতে যা বুঝায়, সে অবস্থা আমার না। সারাক্ষণ বিষণ্ণ হয়ে বসে থাকি না, কিংবা বিষণ্ণতা এসে আমার অন্যসব আনন্দে ভাগ বসাতে পারে না। একটা ভালো বই, একটা ভালো সিনেমা, একটা বিতর্ক, আলোচনা, প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো, কিংবা একটিভিজম- এসবে তীব্র আনন্দের সাথে মগ্ন হতে পারি। ফলে, বলা যায়- আমার বিষণ্ণতা সাময়িক এবং নিঃসঙ্গ ও অবসর সময়ের অনুষঙ্গ। একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে নিজেকে মেরে ফেলতে পারে, সেটা আসলে আমাদের কারোই জানা নেই। একটা মানুষ কতটা দুর্বল হলে লড়াই না করে মরে যায়, সেটাও কিন্তু আমরা জানি না।

আত্মহত্যা একটি সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু আত্মহত্যা জীবনে সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়। আত্মহত্যার চেয়েও বড় কাপুরুষতা হলো আত্মহত্যাকারীকে আত্মহত্যা এর মুখে ঠেলে দেয়া।

(শাহজালাল আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড