• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নতুন চ্যালেঞ্জের অর্থনীত

  বিশেষ প্রতিবেদক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:০০
নতুন চ্যালেঞ্জের অর্থনীত

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনসাধারণের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে বাজার দর নিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির ফলে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সব উপকরণের দাম আরে দফা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। সেই সাথে ডলার সংকট, এলসি খোলায় সমস্যার সাথে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার উপক্রম হবে। তাছাড়া এর ফলে মূল্যস্ফীতি লাগাম টেনে ধরা কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এ খাতে লুটপাটের সুযোগ বাড়াবে।

গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও ভোক্তা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ভোক্তা পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ করে বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এবার দাম বাড়তে পারে সাত থেকে আট শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়তি দামের কারণে সব পণ্য উৎপাদনে খরচ আরো বাড়বে। ফলে এসব জিনিসের দাম আরো বাড়বে। একদিকে উৎপাদন খরচ এবং অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যটি ন্যায্য দামে বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের বেশ বেগ পেতে হবে, লোকসানও গুণতে হতে পারে। এসব কারণে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানার টিকে থাকা কষ্টকর হবে। ক্ষুদ্র কারখানাগুলো বন্ধের আশঙ্কাও রয়েছে।

গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, গণশুনানির পরিবর্তে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি জনগণের প্রতি অবিচার আর প্রতারণা। আর এভাবে ভোক্তার বোঝা বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে লুণ্ঠন করার সুযোগও তৈরি করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বলা যেতে পারে আমরা শেষ সময়ে পৌঁছে গেছি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতাহীন বিনিয়োগকারী আর সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর মুনাফা হলো। তাদের এই অন্যায় ও অযৌক্তিক আয় বৃদ্ধিকে এভাবে সরকার সুরক্ষা দিতে দিতে আমরা আজ এই পর্যায়ে এসেছি। এতে ভোক্তাদের অধিকার বঞ্চিত হলো।

তিনি আরো বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে আগের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। অথচ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিপুল অপচয় রোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপচয় রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। এই দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এই দাম বাড়ানোর ফলে সবচেয়ে বড় প্রভাব জনজীবনের ওপর পড়বে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত দাম দিয়েই তা জনগণকে কিনতে হবে। আমাদের সবার ভোগান্তি আরো বাড়বে। আগে থেকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলএনজি আমদানিতে বিপুল টাকা চলে যাচ্ছে। এই টাকা উঠানোর একটি প্রক্রিয়া হিসাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতাই নেই। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফিতি আরও বাড়বে, ফলে মানুষের ভোগান্তিও বাড়বে।

তিনি বলেন, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগামী। সেখানে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সবক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। এর কারণে মূল্যস্ফীতির ওপরে একটা নতুন চাপ আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থাকতে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোটাই অযৌক্তিক। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর ফলে জনগণের জীবনযাত্রায় ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে। যে সব বিদ্যুৎ কোম্পানি গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তারা তাদের বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেবে। কলকারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং জনগণকে এই বাড়তি দামেই প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে হবে।

কেপিসি স্বত্বাধিকারী কাজী সাজেদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কাঁচামালে ৬১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, এলসি জটিলতা আর ডলার মূল্যবৃদ্ধির বোঝার চাপে মাঝারি থেকে এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। তিনি বলেন, আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হবে। এই খরচ দিয়ে টিকে থাকতে পারবো কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা এবং কলকারখানায় ব্যবহার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বাড়িয়ে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য গ্যাসের নতুন দাম প্রতি ঘনমিটারের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা এবং শিল্পের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে। চলতি মাস থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড