• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের উপযুক্ত সময় এবং গুরুত্ব

  আনিসুর রহমান

৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:৪৪
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের উপযুক্ত সময় এবং গুরুত্ব
আনিসুর রহমান (ফাইল ছবি)

বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে মানবতাবাদ, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা, সত্যানুসন্ধান, নতুন নতুন জ্ঞান অন্বেষণ, গবেষণা, দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, ইচ্ছা ও বুদ্ধির মুক্ত চর্চা সদগুণ এবং মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন, সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার সঠিক সময় এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে লিখেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান।

নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন এবং মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত হওয়ার অন্যতম প্লাটফর্ম হলো বিশ্ববিদ্যালয়। সুউচ্চ আকাশ পরিমাণ স্বপ্ন নিয়ে বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এখানে।

এখানকার প্রথম দিনগুলো স্বপ্নের মত হয়ে ধরা দেয় তাদের কাছে। নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় হয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও আত্ম-উন্নয়নমূলক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। অনেক শিক্ষার্থী যুক্ত হয় এমন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে। আবার অনেকে মনে করেন, সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট, পড়ালেখার ক্ষতি। সত্যিই কি তাই?

পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম একে অপরের সহায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শিক্ষা যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রয়োজন নিজেকে বিকশিত করার কার্যক্রম। আর সেটি সম্ভব হয় তখনই যখন পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে এগিয়ে নিতে প্রগতিশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে যুক্ত হয় শিক্ষার্থীরা।

এসব সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে। অনেকে আবার ক্যারিয়ার গড়ে তুলেন এই প্রতিভার আলোকেই।

সংগঠন করার আগ্রহ কম বেশি সকল শিক্ষার্থীর মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু কোনো সময় সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া উচিৎ? এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। অনেক শিক্ষার্থী দেখা যায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বর্ষে এসে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়। কিন্তু সংগঠনে যুক্ত হওয়ার সঠিক সময় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ। কেননা এই সময়টাতে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির সঠিক সময় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ হলো নেতৃত্ব অনুশীলনের সময়।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠন থাকে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা, স্কাউট, বিজ্ঞান ক্লাব, আইটি সোসাইটি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য, পরিবেশবাদী, ভাষা চর্চা, খেলাধুলা, বিতর্ক, ধর্মীয় ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন সংগঠন থাকে। প্রত্যেক সংগঠনের কাজ প্রত্যক্ষভাবে ভিন্ন ভিন্ন হলেও পরোক্ষভাবে কিন্তু একটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে।

সাংবাদিক সংস্থাকে বলা হয়ে থাকে "জ্যাক ইন অল ট্রেড"। সাংবাদিকতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী দেশের গণতন্ত্রের চর্চা, রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এছাড়াও এটি একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

বিতর্ক সংগঠন একজন শিক্ষার্থীকে তার্কিক যুক্তিবাদী চিন্তাধারা, বাগ্মিতা চর্চা, সময়-জ্ঞান, প্রমিত ভাষা চর্চা, চিন্তার প্রসার, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মর্যাদা এবং নানা ব্যক্তিগত অর্জনে সাহায্য করবে। এছাড়াও একটি যুক্তিবাদী সমাজ বিনির্মাণে এবং সময়ের সঙ্গে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

স্কাউট সব সময় অন্যের থেকে এক কদম এগিয়ে থাকে। স্কাউটিং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এবং দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। স্কাউটিং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা শেখায়। শেখায় কিভাবে দায়িত্বশীল হতে হয়। এছাড়াও এই সংগঠন শিক্ষার্থীকে সময়ানুবর্তিতা অর্জনে সহায়তা করে। অর্থাৎ স্কাউট একজন শিক্ষার্থীকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিকভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞান ক্লাব একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে অধিকতর আগ্রহ সৃষ্টি করা, বিজ্ঞানভীতি দূর করা, নিত্যনতুন বিজ্ঞানমূলক সৃজনশীলতা ও শিল্পকর্ম তৈরিতে উৎসাহ প্রদান এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিজ্ঞানের স্বরূপকে সঠিকভাবে জানতে সাহায্য করে।

সাহিত্য ক্লাবকে বলা হয় বাঙালি জাতি সত্তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার সংগঠন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে শিক্ষার্থীর মনে কৌতূহল তৈরি করা। বাংলা বানান ও উচ্চারণের সঠিক দিকগুলো সম্পর্কে জানানো। যে সকল শিক্ষার্থীর লেখালেখির প্রতি আগ্রহ রয়েছে সাহিত্য ক্লাব তাদের সেই আগ্রহকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ করে।

এছাড়াও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী তার আগ্রহ ও পছন্দ অনুযায়ী দুই একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী না বুঝেই অনেকগুলো সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। এটি অনুচিত।

কেননা একাধিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে কোনো সংগঠনের সাথে পূর্ণ সময় দেওয়া হয়না। ফলে সঠিকভাবে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে না। তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যে মানসিক প্রশান্তির ইচ্ছাশক্তি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী কাজ শুরু করে তা পূরণে ব্যর্থ হয়। এমনকি বিরক্ত হয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত নিজ বিভাগের সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি একটি কিংবা দুইটি সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা এবং সেই বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

সংগঠনে যুক্ত একজন শিক্ষার্থী সংগঠন না করা শিক্ষার্থী থেকে বহুক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। সংগঠন চর্চা করা একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলে। এই দক্ষতা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই নয় চাকরি জীবনেও তাকে সবার থেকে আলাদা করে তোলে।

বর্তমান কর্পোরেট কোম্পানিগুলো এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজকেই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাধারণ একজন শিক্ষার্থী থেকে ক্লাবিং বা সংগঠন চর্চা করা একজন শিক্ষার্থী তাদের প্রথম চয়েজ হিসেবে থাকবে।

লেখক : আনিসুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড