• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১৫ আগস্ট : একটি বিশ্বাসের মৃত্যু 

  আনিসুর রহমান

১৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৭
১৫ আগস্ট : একটি বিশ্বাসের মৃত্যু 

১৯২০ এর ১৭ মার্চ। টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করে একটি শিশু। মধুমতি-বাইগার নদীর পানিতে ভিজে, তাল-তমাল-হিজলের সবুজভরা হৃদয় নিয়ে, ক্রমেই বেড়ে ওঠে শিশুটি। শিশুটি পরিবারের সবার কাছে হয়ে ওঠে 'খোকা'।

গ্রামবাসীর কাছে হয়ে ওঠেন 'মিয়া ভাই'। সহপাঠী ও সহকর্মীদের কাছে 'মুজিব ভাই' হয়ে ওঠেন। সেই ছোট্ট শিশুটি একদিন পরিণত হন 'জাতির পিতায়'। এরপর অর্জন করেন বিশ্বনেতার খ্যাতি। তিনি শুধু একজন ব্যক্তির নাম নয় বরং স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান।

তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সুদীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আর কেউ নন। বাংলার 'চতুর্দশ লুই' খ্যাত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলায় যখন একজন গডোর প্রয়োজন ছিল। তখনি বাংলার মানুষের মুক্তির দিশারি হিসেবে আবির্ভাব হয় শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, দীর্ঘ দুই যুগের সংগ্রাম শেষে, ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এই পুরো সংগ্রামে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে গণতন্ত্র, শোষণ-বৈষম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, ৬-দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি যোগ করে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত করায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুকে সবসময় কবিতার দুটি লাইন গুনগুন করতে শোনা যেত- ‘আমার বাংলার মাটি, তোমায় আমি রাখব পরিপাটি।’ তাই দেশের প্রশ্নে তিনি কখনোই কারও সঙ্গে আপস করেন নি। দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ও কল্যাণচিন্তা তাকে সব সময় তাড়িত করত- অবশেষে দেশের জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশপ্রেমের চূড়ান্ত নজির রেখে যান বাঙালির সামনে।

বঙ্গবন্ধু শুধু যে বাংলাকে ভালোবাসতেন তা নয়, তিনি বাংলার মানুষকে তার নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। সাংবাদিক বরার্ট ফ্রস্ট একবার বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার সবচেয়ে ভালো গুণ কী? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি বাঙালিকে ভালোবাসি। রবার্ট ফ্রস্ট তাকে পুনরায় প্রশ্ন করেন, আপনার খারাপ গুণ কী? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালিকে আমি বেশি ভালোবাসি। বাঙালিকে বেশি ভালোবাসাই কাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। রাজধানীর মসজিদে মসজিদে ফজরের আযান ধ্বনিত হচ্ছিলো, "আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাঊম (ঘুম হতে নামাজ উত্তম)"। তখনি গুলি-বৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়িটিতে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় লিখিত হয়। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহ তার পরিবারের সকল সদস্যকে (দুই কন্যা ছাড়া) নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ঘাতক দালালেরা।

এ হত্যাকে কেন্দ্র করে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন, "নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরও বড়ো; করে যদি তার পুত্রসম বিশ্বাসভাজন; জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তারেই নিধন। নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরও গুরুতর।" পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে ‘ট্রেইটর’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘This time Mujib will not go unpunished’ ইয়াহিয়ার এই কথায় দুটো বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়- বাংলার স্বাধীনতাকামী আপসহীন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন পাকিস্তানিদের একমাত্র শত্রু এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ব্যাপারে পাকিস্তানিরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু পাকিস্তানি নির্মম সরকার যা করেনি, তা-ই করল বাংলাদেশের পাকিস্তান ফেরত সেনাসদস্যরা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর শুনে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো পুরো বিশ্ব। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সংবাদ শুনে উইলিবান্ট মন্তব্য করেছিলেন, "মুজিব হত্যার পর বাঙালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।" এছাড়াও ব্রিটিশ এমপি জেমসলামন্ড বলেছিলেন, "বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।"

একবার বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের একজন মানুষ তাকে বলেছেন, "তুমি সাবধানে থেকো। কখন কে তোমার ক্ষতি করে বসে!" তখন মুজিব হেঁসে বলেছিলেন, "আমার এ বুকে কোনো বাঙালি গুলি করবে? আপনি এটা বিশ্বাস করেন?" হায়! কি অগাধ বিশ্বাস ছিল তার বাঙালিদের ওপর। অথচ শেষমেশ তাদের হাতেই তাকে মরতে হলো। সেদিন ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হয়নি। মৃত্যু হয়েছিল তার বিশ্বাসের।

লেখক : আনিসুর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড