মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের পূর্ব উত্তর পাড়া এলাকায় গত সোমবার রাত ২টার দিকে হঠাৎ বাড়ির দরজায় এলোপাতাড়ি লাথি ও চিৎকার করে দরজা খুলতে বারবার বলে। বাড়িতে মা ও তার মেয়ে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ১০-১৫ জনের একদল সন্ত্রাসী। ৩০ বছর বয়সী এক নারী ও তার কিশোরী মেয়েকে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে চিৎকার করলে শুরু হয় নির্যাতন। মা-মেয়ে দুই জনকে হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় দিয়ে দেয় এলোপাতাড়ি লাথি,কিল ও ঘুষি। একপর্যায়ে দুই জনকে বিবস্ত্র করে সন্ত্রাসীরা ঘরের মালামাল বাইরে ফেলে দেয়।
এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং সচেতন মহলের নিন্দার ঝড় উঠেছে।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়,গত ২২ এপ্রিল সোমবার গভীর রাত ২টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ পূর্ব উত্তর পাড়া এলাকার নুর মুহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের বাড়িতে টোকাই আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০-১৫ সন্ত্রাসী বাড়ির দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে মা ও মেয়েকে হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল ও ঘুষি।মা মেয়ে দুজনকে বিবস্ত্র করে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ,টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বিষয়ে কাউকে বলা হলে মেরে ফেলবে বলে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়৷
এই অসহায় পরিবারটি নিরুপায় হয়ে অবশেষে ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় একটি লিখিত একটি এজাহার দায়ের করেছে৷
শাহপরীরদ্বীপের অনেকে জানান, শাহপরীর দ্বীপ ডেইল পাড়া এলাকার জহির আহমদ এর ছেলে (রোহিঙ্গা) আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১৫ জন সন্ত্রাসী বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে নিরহ লোকজনকে অস্ত্র মুখে জিম্মি করে মানসিক শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মত কোন জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মী নেই বললেও চলে। ফলে এই আয়ুব খান বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয় দিয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।
কেহ প্রতিবাদ করলে নিজেদের গায়ে চুরি দিয়ে আঘাত করে উল্টো স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে হয়রানী করে।
শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা ছৈয়দ বলেন,আয়ুব খান একজন সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা। এর আগে আয়ুব খান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের দলে ছিল। শাহপরীরদ্বীপ এসে ১০-১৫ জনের মতো একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তুলে। তাদের লিডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সাবরাং ইউনিয়ন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বকসু,রাকিব, শাহপরীরদ্বীপের সাবেক মেম্বারের পুত্র শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মোঃ হেলাল,সাবরাং কচুবনিয়া এলাকার ইউসুফ আলী, আয়ুব খানের বন্ধু হাবিবুর রহমান, ইয়াহিয়া। জানা গেছে, তাদের এই বাহিনী শাহপরীর দ্বীপকে জিম্মি করে রেখেছে৷
আরও জানা যায়, এই সাদ্দাম সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে,শাহপরীরদ্বীপ থেকে মিয়ানমারে পাচার করা হয় বাংলাদেশী বিভিন্ন খাদ্য পণ্যসহ অকটেন,বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে মাদকের বড় বড় চালানসহ গরু-মহিষ,ইতি পূর্বেও শীর্ষ মাদক চোরাকারবারি সাদ্দামের মালিকানাধীন ৪টি বড় বড় মহিষ শাহপরীরদ্বীপ বিজিবির হাতে আটক হয়েছিলো।
গভীর রাত হলে তাদের অস্ত্র মহড়ায় দিয়ে নিরহ মহিলাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে জোরপূর্বক নির্যাতন করাসহ স্বর্ণ,টাকা ছিনিয়ে নিয়ে আসে৷ এই আয়ুব খানের নেতৃত্বে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় অপরাধ জগতের আখড়া পরিনত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে অপরাধ জগতের সম্রাট সাদ্দাম হোসেন বকসু, মেম্বারে পুত্র হেলাল,আয়ুব খান,ইয়াহিয়া, হাবিবুর রহমান,ইউসুফ আলী বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে দেদারসে।জানা গেছে,তাদের পেছনে রয়েছে শেল্টারদাতা জনপ্রতিনিধিসহ উপর মহলের হাত।
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন,সন্ত্রাসী আয়ুব খান বাহিনীর ১০-১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে র্যাব পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বাহির করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়ে কাশমিনের স্বামীর বাড়ি থেকে বেড়াতে আসে। আমার সেই মেয়েকে জোরপূর্বক নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলবে বলে চলে যায়।
আয়ুব খান কয়েক বছর আগেও কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, ঘুম করে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় চলে আসে। পরে শাহপরীর দ্বীপে গড়ে তুলেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এরা রীতিমত ধরাকে সরা করা যাদের কাজ হয়ে পড়েছে। কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্তার সাথে সখ্যতার মাধ্যমে সকল প্রকার অপকর্ম করে বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। বিপাকে পড়েছে এলাকাবাসী।পান থেকে চুন কষলেই এলাকায় অরজগতা করে এলাকাবাসীকে নীরব থাকতে বাধ্য করে বলে এলাকাবাসীর সুত্রে জানা গেছে। এমনকি শান্তপ্রিয় এলাকা শাহপরীর দ্বীপকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার এসআই মোঃ সোহেল বলেন, আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড