• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পোশাক শিল্পে সাফল্য যেন অব্যাহত থাকে

  সম্পাদকীয়

১৪ মে ২০১৯, ২০:২১

প্রধান রপ্তানি-পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত৷ অথচ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক দেশই বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর মান, কাজের পরিবেশ, শ্রমিকস্বার্থ রক্ষা ইত্যাদি নানা দিক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঘটে যায় পৃথিবীর এযাবৎকালের তৃতীয় বৃহৎ শিল্প-দুর্ঘটনা৷ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মারা যান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। এ ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে বাংলাদেশের জন্য বলবৎ জেনারেলাইজ্ড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) বা অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা তুলে নেয়। এসব কারণে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে গুণগত নানান পরিবর্তন ও মানোন্নয়নের প্রচেষ্টা চলে আসছে। আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স এবং ন্যাশনাল ট্রাইপার্টিড প্ল্যান অব অ্যাকশনের আওতায় তৈরি পোশাক শিল্পে নানাবিধ ইতিবাচক সংস্কারের প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি শর্তপূরণ সাপেক্ষে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে।

কলকারখানা স্থাপনে বর্তমান পৃথিবীতে সবচাইতে আধুনিক ধারণাটি হচ্ছে 'গ্রিন' কারখানা। পরিষ্কার বাংলায় এটাকে 'পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা' বলা যেতে পারে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) পৃথিবীব্যাপী সবুজ কারখানার সনদ প্রদান করে থাকে৷ ইউএসজিবিসি প্রদত্ত এ সনদের নাম লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি)।

পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা ধারণাটিতে কারখানা স্থাপনে অনেকগুলো সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা স্থাপন করা হবে, তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হয় সবুজায়নের জন্য। কারখানার চারপাশে খোলা জায়গাসহ সবুজ বাগান থাকতে হয়; কারখানার ভেতরেও থাকতে হয় খোলা জায়গা।

শ্রমিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এক শ্রমিক থেকে অন্য শ্রমিকের অবস্থানে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্বও থাকতে হয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কারখানার শ্রমিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখতে হয়। কারখানার ভেতরে রাখতে হয় আবাসন ব্যবস্থা। শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য থাকতে হয় বিশেষ সুবিধা; চিকিৎসা ভাতাসহ রেশনিংয়েরও ব্যবস্থাও বলবৎ থাকতে হয়।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবকিছুই অটোমেশনে হতে হয়। মেশিনারিজ হতে হয় অত্যাধুনিক। থাকতে হয় সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী এলইডি লাইট। এছাড়া, পানি রি-সাইক্লিংয়ের সুব্যবস্থাও থাকতে হয়।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে সাধারণ কারখানার চেয়ে অধিক ব্যয় হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের জন্যই লাভজনক হয়ে ওঠে৷ কেননা এ ধরনের কারখানাগুলোতে শতকরা ২৪ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়, পানির অপচয়ও রোধ হয় প্রায় ৫০ শতাংশ। তাছাড়া কারখানায় শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করায় যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে পোশাকের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্য হারে৷

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে এলইইডি সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা ৬৭টি৷ এক্ষেত্রে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে শীর্ষে৷ বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০টি গ্রিন কারখানা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়৷ ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র ৫টি৷ কেবল সংখ্যায় সর্বোচ্চই নয়, বিশ্বের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে সেরাদের তালিকায়ও বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষণীয়৷ সনদপ্রাপ্ত শীর্ষস্থানীয় ১০টি কারখানার ৭টিই বাংলাদেশে৷ এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার স্বীকৃতিও অর্জন করেছে বাংলাদেশের প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড।

ইউএসজিবিসি এর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদত্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশের আরও ২৮০টি পোশাক কারখানা অচিরেই এলইইডি সনদ পেতে পারে। বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের স্বার্থে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাগণ সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে অধিক বিনিয়োগ করার কারণেই এ সাফল্য এসেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

এ সাফল্য দেশের অর্থনীতির জন্য দারুণ সুখবার্তা বয়ে এনেছে৷ এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক খাত আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছতে পারবে সন্দেহ নেই। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে যে পোশাক খাত থেকে, তার মানোন্নয়ন ধরে রাখতে যত ধরনের প্রণোদনা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড