• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্কুল ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কী হবে? 

  অধিকার ডেস্ক    ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৮

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না৷ একটি বিশেষ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে৷ শুরুতেই এ সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রাখছি৷ আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে, দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটিতেই আমরা সবচাইতে বেশি হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি৷ যার কারণে আমাদের পঠনপদ্ধতি, পরীক্ষাপদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি— প্রায় সকল ব্যবস্থাই বছর বছর পরিবর্তন করতে হয়৷ আর এর ফল ভোগ করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের৷

কিন্তু প্রকৃত বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয় সময় নিয়ে যথার্থ গবেষণার পর, সিদ্ধান্তগুলো হতে হয় দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োগযোগ্য৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্টই ঘাটতি আছে বলতে হবে৷ তাই পরীক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী হলেও তা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ও প্রয়োগযোগ্য কি না তা যথেষ্ট বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে— এ ব্যাপারে আমরা আশ্বস্ত হতে চাই৷ যদি যথেষ্ট গবেষণা ও এর নানান ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়ে থাকে, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এটিকে গুণগত পরিবর্তনের একটি শুভসূচনা বলে চিহ্নিত করা যেতেই পারে৷ এটা তো সন্দেহাতিতভাবে সত্য যে, পরীক্ষাভীতি শিশুর শিক্ষাগ্রহণ ও মানসিক বিকাশের পথে একটি বাধা৷

শিশুকালে পড়াশোনার মধ্যে যে আনন্দ থাকা উচিত, সে বিষয়টি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একেবারেই অনুপস্থিত তো বটেই, উপরন্তু অতিরিক্ত বই ও পরীক্ষার চাপে আমাদের সন্তানদের শিশুকাল হয়ে উঠছে বিভীষিকাময়৷ একদিকে স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত বইয়ের চাপ, অপরদিকে মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষার কারণে একটি চার বছর বয়সী শিশুকেও পরীক্ষায় প্রথম বানাতে এবং এ প্লাস পাওয়াতে অভিভাবকদের অযৌক্তিক তৎপরতা— এ দুইয়ের মিশ্রণে শিশুদের জীবন অত্যন্ত পানসে ও ভীতিকর হয়ে উঠলেও তাদের মান যে বাড়ছে না, তার দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের করা একটি জরিপে৷

সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের দেশের শিশুরা জীবনের প্রথম ১১ বছরে যা শিখছে, তা আসলে সাড়ে ছয় বছরেই শিখে ফেলার কথা; সে হিসাবে, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের শিশুরা সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে৷ সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে— এত এত চাপ প্রয়োগের পরেও যদি আমাদের বাচ্চারা এত পেছনে পড়ে থাকে, তাহলে এত এত পরীক্ষা ও পড়াশোনা কোন কাজে আসছে? প্রকৃত অর্থে, এগুলো কোনো কাজেই আসছে না৷ সুতরাং, অহেতুক শিশুদের শৈশব-আনন্দ উপভোগের পথ রুদ্ধ করে তাদের জীবনের সবচাইতে সুন্দর সময়টাকে নীরস ও নিরানন্দ করে তোলার কোনো যৌক্তিকতাই নেই৷

উন্নত দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুলগুলোতে শিশুদের কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না৷ শিক্ষাদীক্ষায় পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত দেশ ফিনল্যান্ডের শিশুদের সাত বছর বয়স পর্যন্ত কোনো পড়াশোনাই করতে হয় না৷ সে সময় পর্যন্ত স্কুলে তাদের কেবল আচার-আচরণ ও নানান জীবনমুখী বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়৷ কোনো কোনো দেশে অষ্টম শ্রেণির পূর্বে কোনো পরীক্ষা দেয়া লাগে না৷ সেসব বিবেচনায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো৷ কিন্তু এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন৷ বিশেষত বিভিন্ন প্রাইভেট ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলে যথাযথভাবে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না সে বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে৷ কেবল স্কুলের বিভিন্ন সেমিস্টার পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ও ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা বন্ধ করলেই চলবে না, সবার আগে স্কুলভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷

যে বয়সে শিশুর মেধা তৈরি করার সময়, সে বয়সের শিশুদের পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা মানে অপেক্ষাকৃত চৌকশ বাচ্চাদের ভর্তি নিয়ে শিক্ষকদের নিজেদের ওপর থেকে চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা৷ কিন্তু একটি ভালো স্কুল তৈরি বাচ্চাকে নেয়ার চাইতে তাদের তৈরি করে নেবার দায়িত্ব গ্রহণ করবে— এটাই কাম্য৷ তাছাড়া, স্কুলের নিয়মিত পরীক্ষাগুলোর চাইতে ভর্তি পরীক্ষাগুলোই শিশু ও অভিভাবক উভয়কে অধিক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে৷ তাই এ ভর্তি পরীক্ষাগুলো বাতিল না করে কেবল স্কুলের নিয়মিত পরীক্ষা বন্ধ করলে খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হয় না৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব দিকেও নজর দেবেন— এটাই চাওয়া৷

ওডি/ আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড