• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আইন দিয়ে কী হবে?

  রহমান মৃধা

১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০১
আইন দিয়ে কী হবে?
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

আমি সুইডেনে বিদেশি। আমার জন্মস্থান বাংলাদেশে সত্ত্বেও আমার চাকরি পেতে সমস্যা হয়নি, সে বহু যুগ আগের কথা।

যদি ভূমি বা বাসস্থানহীন বাংলাদেশি এখনো থেকে থাকে, তারা যদি জীবন বাঁচাতে এক শহর ছেড়ে অন্য শহরে আশ্রিত হয় এবং বহু বছর যাবত সেখানে বসবাস, শিক্ষা, কর্মে লিপ্ত থেকে থাকে এবং ট্যাক্স পে করে তাহলে সেটাই তাদের ঠিকানা হবার কথা। এখন যে কোটা সিস্টেম দেশে চালু করা হয়েছে যেমন এক জেলার বাসিন্দা অন্য জেলায় চাকরি পাবে না সেটা ঠিক রেখেও কিন্তু ভূমিহীন নাগরিকের জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিছু যায় আসে না যদি তার সেই জেলায় নিজস্ব ভিটাবাড়ি না থাকে।

এখন আসুন এবার আসপিয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি।

২০২০ সালে আসপিয়া বরিশালের সরকারি হিজলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তির জমিতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করেন তারা। নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১৫ বছর আগে আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে ভোলা থেকে হিজলায় আসেন।

জমি না থাকায় চাকরি হবে না, চাকরি না হওয়ার কারণ জানার জন্য ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আসপিয়া। ডিআইজি তাকে জানান, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের বিধি অনুযায়ী, প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু তার হিজলায় নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই আইন অনুযায়ী তাকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

বিষয়টি আমি জেনেছি। আমি এটাও জেনেছি খুলনা পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থেকেও জেলায় জমি না থাকায় পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না মীম আক্তার।

এসব ঘটনা আমাকে খুব মর্মাহত করেছে। পরীক্ষায় সবগুলো ধাপ উতরে গিয়েও ভূমিহীন হওয়ার কারণে মেয়ে দুটির চাকরি হবে না, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে হলেও মেয়ে দুটিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমি।

আমি শুনেছি জেলাভিত্তিক পুলিশে নিয়োগ হয়। এ ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীকে অবশ্যই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু আসপিয়ার এবং মীম আক্তারের জমি না থাকায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন : নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা

আমি জানিনে কেন যেন মাঝে মধ্যে হঠাৎ একটি ছোট বিষয়কে বড় করে দেখি। হাজারও সমস্যা চোখে পড়লেও বিশেষ একটি ঘটনা আমাকে তাড়া দেয়। আর তখনই সেটা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানার চেষ্টা। পরে দেখা যায় সিস্টেম সঠিক মত না থাকার কারণে সমস্যাটির উৎপত্তি। সমস্যার মূল কারণ যদি না জানা যায় তবে সমাধান হলেও সেটা টেকসহ হয় না। যার ফলে নতুন করে সমস্যা হয়ে সেটা আবার সমস্যা হয়েই সমাজে ফিরে আসে।

আর সেই কারণে দুই দিন পরপর দেশ ব্যাপী চিল্লাচিল্লি শুর হয়। যেমন- ঠিকানা বিহীন কাওকে চাকরি দিলেও ঝামেলা। দেখা গেল নিউজ হয়েছে কোথাকার কাকে চাকরি দিয়েছে যাদের ঠিকানার অস্তিত্ব নাই ইত্যাদি। পুলিশের চাকুরি যেহেতু জেলার কোটা অনুযায়ী নিয়োগ হয় সেহেতু এক জেলার লোক অন্য জেলা থেকে চাকুরী নেওয়ার কোন সুযোগ থাকেনা।

এ অবস্থায় নিজেদের কোন জমি না থাকলেও যোগ্যতার বিবেচনায় তাকে পুলিশে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুগ্রহ কামনা করছেন আসপিয়া। একই ঘটনার স্বীকার মীম আক্তার। জানিনে আরও কত মানুষ রয়েছে দেশে যাদের সমস্যা রয়েছে সমাধান নেই!

আমার প্রশ্ন একজন প্রধানমন্ত্রীই শুধু সব কিছুর সমাধান করবেন? বাকিদের কাজ কী? এত কিছুর পর স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে একটি প্রতিভা তার বিকাশ ঘটাবার সুযোগ পেল। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে।

সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তিকে অপব্যবহার করে এ দেশের একজন নাগরিককে তুলে আনার হুমকি দিয়েছেন, তার কন্যার বয়সী এক মেয়েকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলো না, অনেকটা নির্ভয়ে তিনি দেশ ছেড়েছেন। কানাডায় যদি তিনি বেগমপাড়া বানিয়ে থাকেন; তা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো না।

(এত কিছুর পরও যদি কানাড়া সরকার যদি তাকে আশ্রয় দেয় তবে আমি অবাক হব)। অথচ এ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বারবার চিকিৎসার আবেদন করেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন না। প্রত্যেকটি নাগরিকের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, চিকিৎসকেরা বলেও দিয়েছেন যে বাংলাদেশে রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন : শহর ছেড়ে গ্রামে বাস সবাই বলে সর্বনাশ

এ দুই ঘটনা থেকে এ দেশে আইনের শাসন ঠিক কতোটুকু বলবৎ রয়েছে সে বিষয়ে আর কারও সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়।

এ দিকে বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্র বার বার বলছে অতীতে যেমন এতিমের টাকা মেরেছে বা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার না করে বিদেশে সুযোগ সুবিধা দিয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা বিশেষ করে আমি এর সব কিছুর তিব্রনিন্দা করি। তবে ঠিক সেই একই ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি হয় এবং আমরা যারা তিব্রনিন্দা করছি ঠিক তারাই যদি একই কাজ করি তখন কি অবস্থা দাঁড়াল? শুধু নিন্দা করলেই হবে? ঝাঁটা দিয়ে মারলেও তো জাতির কাছে ক্ষমা পাওয়া যাবে না।

দেশ স্বাধীন পঞ্চাশ বছর হলেও দেশের অনেক আইন সেই ব্রিটিশ আমলের সময়কার, যার ফলে এখনো বলা হচ্ছে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য জেলার স্থায়ী নাগরিক হতে হবে এবং সম্পত্তি থাকতে হবে।

কী অদ্ভুত আইনি কাণ্ড! সংবিধান বলছে সকল নাগরিকের সমান অধিকার, আইন বলছে অন্যায় করেও দেশ ছেড়ে যেতে বাঁধা নেই বা সম্পত্তি না থাকলে কনস্টেবলের চাকরি হবে না! তাহলে আইন এবং সংবিধান পরিপন্থি এক নয়?

একজন নাগরিক কী সুযোগ-সুবিধা পাবে বা পাবে না সেটা তার সম্পত্তি বা সে গরীব তার উপর বিবেচনা করে নাগরিককে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে? তাই যদি হয় দেশ স্বাধীন করার সময় তো একথা শুনি নাই যে সম্পত্তি না থাকলে দেশ স্বাধীনে অংশগ্রহণ করা যাবে না? কি হবে এসব আইন দিয়ে যদি জনগণ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়? এই ভাবে আর কত দিন চলবে? সম্পত্তি আছে কি নাই তার ওপর নির্ভর করতে পারে না মেয়ে দুটির ভবিষ্যৎ। এই আইন আর এক দিনও চলতে পারে না দেশে!

ব্রিটিশ আইনেই যদি দেশ চলবে তাহলে কি দরকার আছে দেশের আইন ব্যবস্থার? এই অদ্ভুত ভয়ঙ্কর কুৎসিত বীভৎস বৈষম্যপূর্ণ আইন অবিলম্বে বাতিল করে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি!

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা। আমরা এক সঙ্গে মানুষের অগ্রগতি ও মানব স্বাধীনতার অগ্রযাত্রাকে আরও একবার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি স্বপ্ন ও সাহস সঞ্চার করব এ বিশ্বাস আমি করি। আমি এটাও আশা করি দেশে যারা আছে তারা যদি অপরাধ করে বিনা বিচারে দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি শতভাগ চেষ্টা করব যেন কেও অতীতের মত সে সুযোগ না পায় বিদেশে থাকার।

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড