• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বঙ্গ রাখালের পাঁচটি কবিতা

সোনাভান আমার কেউ না

  সাহিত্য ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:১৫
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

প্রিয় অন্ধতা আমার

প্রিয় অন্ধতা আমার, বাবারও প্রিয় কালো রং। আণ্ডারগ্রাউণ্ড পিতা রাতের আঁধারে চষে বেড়াতেন শেখপাড়া-শান্তিডাঙ্গার নদীক’লবর্তী জীবন। সেই বুঝহীন সময় থেকেই অন্ধকার ভালোবসি। বাবার মত আমিও রোগী-রোগশয্যায় বসে পলাতক কুকুরের মত শ্যাওলা ধরা স্বপ্ন মাথায় গুজে এখন রাত্রির অন্ধকারে পৃথিবীর পথে পথে হাঁটি-আঁচমকা অন্ধগলি ঢুকে যাই বুকের মধ্যে আর ল্যামপোস্ট থায় দাঁড়িয়ে বুকের মধ্যে শূন্যতা পুষে জ্বালিয়ে দেয় বাতি।

পদ্মকে মরণের মত ভালোবাসি, কোটিদেশ জড়িয়ে ধরে শুষেনি ওর বুকের উত্তাপিত ঘ্রাণ। গলা শুকিয়ে কাঠ। ক্ষণিক আলোয় চোখে, পিঠে পেঁচিয়ে ধরে কামনার বিষাধর সাপ। অসহ্য যন্ত্রণায় বিস্ফারিত বুক ফালি ফালি হয়। তাঁবুর নিচেয় অন্ধকার নৌকা পার করে ‘নিঠুর দরদিয়া বন্ধু রে’...এই সুতীব্র ভালোবাসাকে পদ্ম দুর্বলতা ভেবে-কাছে ডেকে ছিল গভীর অন্ধকার রাতে আর রাতের আঁধারে পেটিকোটের পাড়ছেরা ফিতের গিট খুঁলে অন্ধকারকে বিদ্ধফলার মত বুকের মধ্যে গেঁথে নিয়েছিল। কপালের ঘাম মুছিয়ে আমার বড় চুলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল অন্ধপল্লীর আশফাশ জীবন। সব কি ভ্রান্তি, সব কি ভুল, নাকি কুহক মায়ায় ও আমাকে কাছে ডেকে ছিল। আজ ওর বুক জুড়ে অন্য কেউ ঘুমায়। অন্য কেউ ওকে অর্চনা বলে ডাকে। একদিন আমিও ছিলাম ওর বুক জুড়ে-দু’ফোটা চোখের জল আর অব্যক্ত কথার ঝুলি আজ ওর ঢ্যাবকা চোখে জাগায় আস্বাদের নীলচর।

হাই রে নারী তুই বেসিয়ার নিচেয়ও লুকিয়ে রাখিস ছলনার বহুরূপী ছল।

সোনাভান আমার কেউ না

আমি স্বপ্নের ঘোরে আরশের ছায়ায় অন্ধ মানুষ সেজে ছিদামের বাড়িকে করি রক্ততিলক আর ছিদামের বউয়ের চুপসে যাওয়া বুকে রেখে মুখ নদীর কাছে যাই- তুলে নেই আচলা ভরে তৃষ্ণার জল। চোখে নিলাভ স্বপ্ন এঁকে অন্ধ ইতিহাসের পাতায় রেখে চোখ- কিসের যেন হারানো থৈ থৈ অসুখ। অসহ্য নদীর যন্ত্রণার সাথে ছুটে চলা তাড়নায় সিধুরামের ভবিষ্যৎ কতটা কষ্টের। ব্যর্থ আস্ফালনে চড়ুই উড়াই ঘর বাঁধার অন্তিমইচ্ছা নদীতে বুক বেঁধে। বোধহয় রাত হলে দীর্ঘ হয় তালাসের ঘর। সোনাভান আসে ... অসুখের বাগানে হাঁটে। কুঁড়িয়ে নেয় আনন্দ পাপ।

এই রাতেই সদরঘাটের নদী বেপরোওয়া হয়। ছুটে যায় সুপ্রাচীন মসলিনের দেশে।

অন্ধের বারুদ

এখন আমি আগের মত চলতে পারি না, হতে পারি না প্রিয় তোমার। কেবলই রুপের মধ্যে এক নিজেকে আটক রাখার ছবি। নিঃসঙ্গ আমি এখন একা একটু একটু করে চলি ...

অভিযোগ ছিল না কিছু। রাতে চুমু খেয়ে লুকিয়ে সকালে বাড়ি ফিরিনি আজও। পিদিমের আলোতে আমার অনেক ভয়,মা বলতেন- রসালো আলোয় চোখ নামিয়ে বলতে হয় ’আমরা এখন রাত জাগি না ,প্রতিটি প্রান্তজন আজ আমার সহকর্মী।

পদ্ম নিভে গেলে আমি জ্বলে থাকি। কাজীপাড়ার পালদের মুখে জলপাই প্রেমিকের গল্প ... সংসার কি সোজা কথা। সবকিছু জ্বালিয়ে দেয় অন্ধের ব্যক্তিগত বারুদ ।

দগ্ধমাটির বসতভিটা বৌ

গায়ের বধূ ঘট হাতে পুকুরের পাড়ে অজানা অসুখ বুকে করে লালন ছুঁতে চায় সুপ্রিয়ের ধান ভরা মাঠ কি অসুখ তার বুকে এ বধূই একদিন- ঘুরতে চেয়েছিল তমালের বোন- ফসলিজমিন পাড় হয়ে কুয়াশা মোড়ানো সকাল মাড়িয়ে দেখে যেতে চাইতো মুখ

আজও কি তোমার বুকে ভাসে যৌবনের নৌকা কিংবা শূন্যতার সুতা বহমান নদীতেও কি জাগে নীরব মনের ছাই চাপা আগুন। সেই অজানিত পৃথিবীর কাছে- দুর্বিনীত ইচ্ছারা খুঁজে নেয় মাঝির কণ্ঠে হারানো গান। সন্ধ্যাতারা বৈতালিক সুরে- মাতিয়ে রাখে পাখিদের পাড়া। কাথায় মুড়িয়ে দেহ-নাকফুল দোলায় আমার নাগরিক জোৎস্নায় দগ্ধমাটির বসতভিটা বৌ।

পদ্ম তোমাকে বলছি

নদীর ঈষৎ কল্পনায় মাটির চোখে জ্বলে ওঠে আলতারাঙানো নিথর পা। সে পায়ে জড়ানো নূপুর। লালশাড়ির ভাঁজে ভাঁজে বাবুর আগমনী ধ্বনি। ছল ছলিয়ে ওঠে নদীর ঢেউ। তৃষ্ণার্ত বাবু নিঃশব্দ্যে ঝুকে পড়ে-পদ্মের বুকে। ঘুমে ভেজা চোখের পাতা আর নেশাচুর রং চুয়িয়ে চুয়িয়ে পড়ে পদ্মের শরীর। সদ্যফোটা ব্রা’র নিচেয় সৌন্দর্য্যের ডালিম ছড়ায় যৈবতীকালীন হরিণীঘ্রাণ। নখর দেখিয়ে যে জানোয়ার প্রতিরাতে ধর্ষণ করে পদ্মের আনন্দোচ্ছ্বাস কিংবা তিলে তিলে গড়ে তোলা অরুপগল্পের ভেসে আসা সাম্পান। পদ্মের নদী জুড়ে অসুখ। সেই সাম্পানে আজ হন্তারক যাত্রী-ঝেপে ঝেপে মেপে নেয় বীর্যের গতি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড