• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিল পাস

  আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি

১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪৪
মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিল পাস
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদিন (ছবি : রয়টার্স)

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে মানবপাচার বিরোধী এবং অভিবাসীদের পাচার বিরোধী (সংশোধনী) বিল ২০২১ পাস হয়েছে। যার ফলে এখন থেকে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

সদ্য পাশ হওয়া এই সংশোধনীতে একটি মানবপাচার বিরোধী এবং অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী কাউন্সিল পুনর্গঠনসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য শাস্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘সংশোধনী মানবপাচার এবং অভিবাসীদের চোরাচালানের জন্য ১৫ থেকে ২০ বছর কারাদণ্ড বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত।

এটি ছাড়াও আরও গুরুতর অপরাধের জন্য, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তিও বাড়িয়েছে। যার মধ্যে বেত্রাঘাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদিন বিলটি পেশ করার সময় বলেছেন, সরকারি কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত থাকলে এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে; তারাও শাস্তি পাবে। এর মধ্যে রয়েছে- পাচারের শিকার ব্যক্তি গুরুতর আঘাত পেলে বা মৃত্যু ঘটলে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়া বা আত্মহত্যা করলে পাচারকারীর গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়াও শিশু এবং পঙ্গু ব্যক্তিকে পাচারের শিকার করলে গুরুতর অপরাধ হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার গুরুত্ব দিয়ে শুধু কারাদণ্ড বৃদ্ধি নয় বেত্রাঘাত শাস্তির বিধান রেখেছে। মানবপাচার বিরোধী এবং অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী কাউন্সিলের সদস্যপদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে, বলছে যুক্তরাষ্ট্র

মালয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সদস্যদের মধ্যে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং কমিউনিটি থেকে অন্তর্ভুক্ত হবে। মালয়েশিয়ান পরিবারের ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য এনজিও এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততার বিধান করা হয়েছে।

পার্লামেন্টকে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকে মানবপাচারের মোট এক হাজার ৯১৫টি এবং অভিবাসীদের এক হাজার ৫২টি পাচারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে মোট ১১ হাজার ৯৪২ ভুক্তভোগীকে রক্ষা করা হয়েছে এবং সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি মানব পাচার প্রতিরোধে সব পক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

মন্ত্রী বলেন, মানবপাচার বা অভিবাসী চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট বা এজেন্টদের টার্গেট করে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন আছে। ডেপুটি স্পিকার দাতুক মোহাম্মদ রশিদ হাসনন পরে ঘোষণা করেন, বিলটি পার্লামেন্টে (দেওয়ান রাকায়াত) কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়া জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার বন্ধে মালয়েশিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে মিলে একটি গাইড লাইন দিয়েছে। সম্প্রতি মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় জোরপূর্বক শ্রম এবং মানবপাচার সংক্রান্ত একশন প্লান বাস্তবায়ন শুরু করেছে। মালয়েশিয়ায় যে কোনো দেশি বা বিদেশি শ্রমিক বা কর্মীকে নিয়োগকর্তা বা কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করলে বা এ উদ্দেশ্যে পাচারের শিকার করা হলে মালয়েশিয়ার পুলিশ, শ্রম দপ্তর, মানবপাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল, ট্রেড ইউনিয়ন এবং নির্ধারিত বেসরকারি সংস্থায় রিপোর্ট করতে পারবে।

মানবপাচার সম্পর্কে মালয়েশিয়ার এন্টি ট্রাফিকিং ইন পারসন অ্যান্ড এন্টি স্মাগলিং অব মাইগ্রেন্ট আইন ২০০৭ উল্লেখ করা হয়েছে যে, trafficking in persons means all actions involved in acquiring or maintaining the labour or services of a person through coercion, and includes the act of recruiting, conveying, transferring, harboring, providing or receiving a person for the purposes of this act.

আরও পড়ুন : হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

এ আইন অনুযায়ী- কোনো ব্যক্তিকে জোরজবরদস্তি মূলকভাবে নিয়োগ করে, পৌঁছে দেয়, স্থানান্তর করা/পরিবহন করে, আশ্রয়/কোথাও রেখে দেওয়া এবং গ্রহণ করাকে মানবপাচার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়াও এসবের উদ্দেশ্যে বল প্রয়োগ করা বা হুমকি দেওয়া, জোর জবরদস্তি করে, অপহরণ করে, প্রতারণা করা, ভুল তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করে, দুর্বলতার সুযোগ নেয়, এ থেকে আয় করে এবং শোষণ করে তাহলে যেখানেই সংঘটিত হোক না কেন তা মানবপাচার এবং অভিবাসী স্মাগলিং অপরাধ সংঘটিত হবে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন এনজিও বিভিন্ন সময় বলেছে। এ কারণে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ইইউ মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়ার মানের অবনমন হয়েছে যা থেকে উত্তরণের জন্য এ ধরনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।

গাইড লাইনে উল্লিখিত ২২টি তথ্য হলো- কর্মক্ষেত্রে প্রকৃতি (কাজ, বেতন, আবাসন, নিরাপত্তা) এবং শর্ত সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল (বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে দেশে এরূপ করা হয়েছে); পাসপোর্ট, আইনি বা অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র আটকে রাখা; শারীরিক বা যৌন নির্যাতন/ সহিংসতা; সংবেদনশীল শব্দ বা মৌখিক/কথার দ্বারা নির্যাতন; নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহিংসতার হুমকি; কাগজপত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে (পুলিশ বা ইমিগ্রেশন) জানাতে বা ধরিয়ে দিতে হুমকি দেওয়া; বাড়িতে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া; কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করার হুমকি দেওয়া, ঋণ বা ধারদেনা করলে তা বৃদ্ধির হুমকি দেওয়া, কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্ট) করার হুমকি দেওয়া, অনুপযুক্ত শর্তাদির জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি বা নিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান, অতিরিক্ত রিক্রুটিং ফিস দিতে বাধ্য করা, বেতন আটকানো, অন্যায়ভাবে বেতন থেকে টাকা কাটা, অবরুদ্ধ থাকা, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে না দেওয়া, অতিরিক্ত কাজ করান, ছুটির দিন উপভোগ করতে না দেওয়া বা ছুটি নেওয়ার অনুমতি নেই, জীবনযাত্রার/বসবাসের অবনতি ঘটছে এবং পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যে আগুনে পুড়ে ৪ শিশুর মৃত্যু

উল্লিখিত ২২টি পয়েন্টের মধ্যে অতিরিক্ত শ্রম, বেতন কম, ওভারটাইম না পাওয়া, ছুটির দিনেও কাজ করা, ঋণ করে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা, অতিরিক্ত রিক্রুটিং খরচ দেওয়া, দেশে রিক্রুটমেন্ট সময়ে যে কাজের ও বেতনের কথা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে মিল না থাকা, দালাল এবং বাসস্থানের খারাপ অবস্থার তথ্য আমেরিকা কর্তৃক এবং ইউকের ইউনিভার্সিটি নিউ ক্যাসলের গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ধরনের প্রলুব্ধ করে কোনো ব্যক্তিকে অভিবাসন করা হলে তা মানব পাচার বলে গণ্য করা হয়েছে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড