• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ম্যাক্রোকে বিপজ্জনক বিষয় নিয়ে খেলতে বারণ করলেন এরদোগান

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪৮
ম্যাক্রোকে বিপজ্জনক বিষয় নিয়ে খেলতে বারণ করলেন এরদোগান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো (ছবি : ইউরো নিউজ)

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো বিপজ্জনক বিষয় নিয়ে খেলছেন। তিনি এখন অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করছেন। তার সরকার মুসলমানদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আপত্তিজনক কার্টুন তৈরি ও তা প্রচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি বলেন, ফ্রান্স সরকার মনে হচ্ছে কিছুই দেখছে না, বরং বাক স্বাধীনতার নামে তারা মুসলমানদের পবিত্র মূল্যবোধ নিয়ে টানা হেঁচড়া করছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টির অপতৎপরতা ও মহানবী (সা.) এর ওপর আক্রমণে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ মুসলিম নেতা এরদোগান। ম্যাক্রোর এই উন্মত্ততার প্রতি ঘৃণা জানিয়েছে তুরস্কের জনগণ এবং তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

এরদোগান এরই মধ্যে ম্যাক্রোর বিপজ্জনক মানসিকতার ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতাদেরও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ম্যাক্রোর মনোভাব ইউরোপের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। ইউরোপের বুদ্ধিমান, নৈতিক ও বিবেকবান নেতাদের অবশ্যই ভয়ের দেয়াল ছিন্ন করতে হবে।

তুর্কি প্রেসিডেন্টের মতে, ইসলামফোবিয়া ও মুসলিমবিরোধী মনোভাব থেকে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে কথা বলতে হবে। ম্যাক্রোর নেতৃত্বে যে ঘৃণ্য প্রচারণা চলছে- ইউরোপের নেতাদের অবশ্যই অপতৎপরতার তাৎক্ষণিক ইতি টানতে হবে।

আরও পড়ুন : ফ্রান্সকে ইসলাম অবমাননা বন্ধের নির্দেশ রাশিয়ার

ফ্রান্স ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কথার যুদ্ধ তাদের সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। সিরিয়ার পর পূর্ব ভূমধ্যসাগর, লিবিয়া এবং নাগোরনো-কারাবাখ ও সর্বশেষ ইসলাম নিয়ে অবস্থান দুই নেতার মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো জানেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার কিছু আরব মিত্র দেশ ইসলাম ও নবী মোহাম্মাদ (স) এর বিরোধিতার তাৎক্ষণিক জবাব দেবে। এরপরও তিনি উস্কানিমূলক আচরণ করেই যাচ্ছেন। ইসলামফোবিয়া কমানোর পরিবর্তে ম্যাক্রো ফরাসি ধর্মনিরপেক্ষতাকে উসকে দিচ্ছেন। এমনকি ইসলামের ওপর তথাকথিত সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন।

ম্যাক্রোর উদ্দেশ্যমূলক অবস্থান ফ্রান্সে নতুন আইন তৈরি করছে যা মুসলমানদের জীবনযাপনে আরও নিপীড়ন সৃষ্টি করবে। তার সরকার আইন করে মুসলিম নারীদের হিজাব পরা, ইমামদের প্রশিক্ষণ ও আরবি ভাষার স্কুল বন্ধ করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের সঙ্গে যায় না; বরং এসব পন্থা ফ্রান্সের মুসলমানদের সমান্তরাল জীবনযাপনের জন্য হুমকি। এর কারণে সংঘাত-সহিংসতা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

আরও পড়ুন : ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১১ লাখ ব্যারেল তেল জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

ফরাসি মিডিয়াও ম্যাক্রোর ইসলামোফোবিক কর্মসূচিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং বামপন্থি গ্রুপ মুসলমানদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কেবল সন্ত্রাসী তৎপরতার অপবাদ নয়, মুসলমানদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট বানানো হচ্ছে।

ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদের নামে ম্যাক্রো একটা মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। ফ্রান্সে এরদোগানের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে এসব কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে এবং পুরো ইউরোপকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে, যার মূল উদ্দেশ্য তুরস্ক ও এরদোগানের অবস্থানকে দুর্বল করা।

বিশ্লেষকদের মতে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ম্যাক্রো আগামী ডিসেম্বরে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইউরোপের নেতাদের কান ভারি করে তুলছেন। উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, সিরিয়া ও ককেশাসে ফ্রান্সের কূটনৈতিক পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে ম্যাক্রো এরদোগানের ওপর ক্ষেপেছে।

আরও পড়ুন : উত্তেজনা বাড়িয়ে আমিরাতকে ৫০টি ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো ২০০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে খেলা করার মতো ঝুঁকি নিয়েছেন এবং দেশটির মুসলমানদের ওপর তার সংস্কার কর্মসূচি চাপিয়ে দিতে পারেন। ফ্রান্সের ৫ মিলিয়ন মুসলমানসহ ইউরোপের ৫০ মিলিয়ন মুসলমানের সমস্যাকে ম্যাক্রো কেন অবজ্ঞা করছেন, এটা তার জন্য নেতিবাচক তা তিনি কেন বুঝতে পারছেন না?

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইহুদিদের মতোই মুসলমানদের বিরুদ্ধে এখন একটি কিলিং মিশন চলছে’ এরদোগানের এই অভিযোগ ইউরোপ পাত্তা দেবে না। ইতোমধ্যে ফার রাইট ন্যাশনাল র‌্যালির সভাপতি ম্যারিন লি পেন দাবি তুলেছেন, ফ্রান্সে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নারীদের হিজাব পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। ইউরোপের রাজনীতিতে ফার-রাইট আন্দোলন ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সেন্ট্রিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা ক্রমশ বর্ণবাদ এবং ইসলামফোবিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় ২০১০ সালে সেবাস্তিয়ান কুর্জ ১৪ বছরের আগে মুসলিম নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করেন। ভবিষ্যৎ ইউরোপ একই দিকে ধাবিত হচ্ছে।রাজনৈতিক নেতাদের নতুন জেনারেশন ইউরোপকে ভালভাবে গড়তে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রিয়া ও জার্মানি ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইসলামকে নিজেদের মতো করে তৈরির চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন : 'ফ্রান্সকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার মুসলিমদের আছে'

একীকরণের নামে ইউরোপীয় সরকারগুলো ইসলামী বিশ্বাস এবং মুসলমানদেরকে জোর করে রূপান্তর, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কৌশল প্রয়োগ করছে।

মূলত রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ফ্রান্স, জার্মান ও অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামকে কোণঠাসা করার ফল ভাল হবে না। এতে তারা উল্টো বিপদের সম্মুখীন হবে এবং মুসলমানদের ওপর অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা কর্তৃত্বাবাদের পথকেই শক্তিশালী করছে। এটাই বিপর্যয়ের মূল কারণ হবে।

ম্যাক্রো ইউরোপে ইসলামে যে সংস্কার আনতে চাচ্ছে তা মূলত ইউরোপকে নিচে নামানোর ভয়ঙ্কর পথ। বিশ্বনবী (স.) এর অপমানের ঘটনায় সৌদি আরব কিংবা আরব আমিরাত কথা না বললেও পরিস্থিতির পরিবর্তন কিংবা ম্যাক্রোর 'ইসলামিক ইঞ্জিনিয়ারিং' প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন : ইসলাম অবমাননা ইস্যুতে ভারতীয়রা কেন ফ্রান্সের পক্ষে?

তারা তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঠিক ও বলিষ্ঠ প্রতিবাদও ঠেকাতে পারবে না। ম্যাক্রোর তৈরি করা সংকটের ব্যাপারে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইউরোপকে যেভাবে সতর্ক করলেন তা আমরা ভুলে যাব না।

সূত্র : ডেইলি সাবাহ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড