• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মান্ধাতার আমল : কে এই মান্ধাতা?

  নিশীতা মিতু

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৪৮
মান্ধাতা
মান্ধাতার জন্ম হয়েছিল পিতৃগর্ভে (ছবি- প্রতীকী)

শুভ্রর হাতের ঘড়িটি দেখে বেশ উৎসাহিত হয়ে রাকা জানতে চাইল- কোথায় থেকে কিনেছ? কারণ সাধারণ ঘড়ির চেয়ে এই ঘড়িটি ভিন্নরকম। শুভ্র বলল, ‘আরে এই ঘড়ি সেই মান্ধাতার আমলের।’ কেবল শুভ্র নয় প্রায়ই আমরা সবাই এই শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি।

সাধারণত বেশ পুরনো বা অনেক বছর আগের কিছু বোঝাতে ‘মান্ধাতার আমল’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়। কখনো কি মনে প্রশ্নে জেগেছে, কে এই মান্ধাতা? কেন অনেক বছরের পুরনো কিছুকে বোঝাতে তার কথা ব্যবহার করা হয়? রহস্য জানতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে সেই মান্ধাতার আমলে।

পৌরাণিক যুগের একজন রাজা ছিলেন মান্ধাতা। তিনি ছিলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। প্রচলিত রয়েছে, মাতৃগর্ভ নয়, মান্ধাতার জন্ম হয়েছিল পিতৃগর্ভে। মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যুবনাশ্ব যোগ সাধনা শুরু করেন যেন তার একটি পুত্র সন্তান হয়। তার দীর্ঘ সাধনা মুনিদের তৃপ্ত করল। তারা যুবনাশ্বের জন্য এক যজ্ঞ আরম্ভ করলেন। যজ্ঞ শেষ করতে করতে মাঝরাত হয়ে গেল।

ঘুমানোর আগে একটি কলসিতে মন্ত্রপূত পানি ভরে বেদিতে রেখে গেলেন তারা। এই কলসির পানি যুবনাশ্বের স্ত্রী পান করলে, তবেই পুত্রসন্তান হবে তার। কিন্তু বিধিবাম। সে রাতেই তীব্র পানি তেষ্টা পেল যুবনাশ্বের। নিরুপায় হয়ে কলসি থেকে এক আঁজলা পানি পান করে ফেললেন তিনি।

সকালে মুনিরা এই ঘটনা শুনে ঘোষণা করলেন, পানি যেহেতু যুবনাশ্ব খেয়েছে তাই সন্তান তার গর্ভেই জন্মাবে! তবে নারীর গর্ভধারণের কষ্ট থেকে যুবনাশ্বরকে মুক্তি দেওয়া হলো। একশ বছর পরে জন্ম নিলেন মান্ধাতা। জন্মের পর থেকেই এক বিস্ময় শিশুর মতো বড় হতে লাগলেন তিনি।

দেবরাজ ইন্দ্রের আশীর্বাদে মাত্র ১২ দিনেই তিনি ১২ বছর বয়সী বালকের মতো পূর্ণতা পেলেন। আয়ত্ত করে ফেললেন চতুর্বেদ ও যুদ্ধশাস্ত্র। যাদব বংশীয় রাজকন্যা বিন্দুমতীর সঙ্গে বিবাহ হয় তার।

রাজা হওয়ার পর মান্ধাতা মাত্র একদিনেই জয় করেন মর্ত্যলোক। পাতাল জয়ের পরে অধিকার করলেন অর্ধ স্বর্গ। কার্যত ত্রিলোকের অধীশ্বর হলেন তিনি। মহাভারতে রয়েছে, সূর্যবংশীয় রাজা ছিলেন মান্ধাতা। দান-ধ্যান-অশ্বমেধ ও রাজসূয় যজ্ঞে প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি।

রাজা মান্ধাতা ও রানি বিন্দুমতীর তিন পুত্র ও ৫০ জন কন্যা সন্তান ছিল। তিন পুত্র হলেন পুরুকুৎস, অম্বরীশ ও মুচকুন্দ। মান্ধাতার পরে তার বড় ছেলে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হন।

মান্ধাতার মৃত্যু নিয়েও পৌরাণীক কাহিনীতে দ্বিমত রয়েছে। কোথাও বলা হয় তিনি ধনসম্পত্তি সব ছেড়ে বানপ্রস্থে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণুর চরণে। মহাভারতে রয়েছে, লবণাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন তিনি।

আরও পড়ুন : গুজবের শিকারে কোটিপতি থেকে দরিদ্র হয়ে গিয়েছিলেন যে নারী

রাজা মান্ধাতা ছিলেন সত্যযুগের রাজা। একেকটি দৈবযুগকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয় যার প্রথমটি ছিল এই সত্যযুগ। এরপর ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ পার হয়ে এখন চলছে কলিযুগ। পৃথিবী কিংবা মানুষের বছরের একেকটি দৈবযুগের মেয়াদকাল ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার বছর। এর মধ্যে প্রথম ১৭ লক্ষ ২৮ হাজার বছর হলো সত্যযুগ।

সবমিলিয়ে, বর্তমান সময় থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর আগের রাজা ছিলেন মান্ধাতা। আর তাই, মান্ধাতার আমল বলতে বেশ পুরনো কিছুকে বোঝানোই স্বাভাবিক।

তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট, পৌরাণিক বাগধারা, দ্য প্রেগনেন্ট কিং

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড