• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডাইনি অপবাদে নারী হত্যা কেন?

  মো. সাইফুল ইসলাম

০২ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৮
ডাইনি
ডাইনি অপবাদে নারীদের হত্যা (ছবি : প্রতীকী)

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো ডাইনি অপবাদে নারীদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এসব অত্যাচার ও নিগ্রহের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর’ তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতে আড়াই হাজার নারীকে ডাইনি অপবাদে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ অনেক এলাকায়ই এই তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় না।

বাংলাদেশে ডাইনি অপবাদে নারী হত্যার মতো ঘটনা ঘটার তথ্য জানা যায়নি। তবে এ দেশে এখনো অনেক স্থানেই ডাইনি বা ভূত প্রেতের আছরের কথা বলে কবিরাজি চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসকরা নানাভাবে চিকিৎসা দেয়। এরা অনেক সময় ভূত তাড়ানোর জন্য রোগীকে নির্যাতনও করে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি দূরবর্তী গ্রামে ৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এই জাদুকরী চিকিৎসকের চিকিৎসায়।

ডাইনি অপবাদে নারী হত্যা শুধু আমাদের উপমহাদেশেই আছে এমন নয়। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশেও একসময় ডাইনি অপবাদে নারীদের হত্যা করা হতো। জানা যায়, সতের শতকে ঔপনিবেশিক ম্যাসাচুসেটসের সালেমে ‘সালেম উইচ ট্রায়াল’ নামে একটি কুখ্যাত বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই বিচার ব্যবস্থায় নারীদের ডাইনি হিসেবে বিচার ও শাস্তি প্রদান করা হতো। সে সময় ম্যাসাচুসেটসে মৃগীরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই মৃগীরোগীর জন্য সালেম গ্রামের অনেক নারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

অভিযুক্ত নারীদের ওপর শয়তান ভর করছে বলে জানানো হয়েছিল। এই অভিযোগে ১৬৯২ সাল থেকে ১৬৯৩ সাল পর্যন্ত ২০০ এর অধিক লোকের বিচার করা হয়। যার মধ্যে ৩০ জনের দোষ প্রমাণিত হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই ১৯ জনের মধ্যে ১৪ জনই ছিলেন নারী। যদিও পরবর্তী সময়ে ‘সালেম উইচ ট্রায়ালকে’ মানুষ আর মেনে নেয়নি তথাপিও এই কুখ্যাত বিচার ব্যবস্থার প্রভাব শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল।

নব্য ইংল্যান্ডের যেখানে ১৬৩৮ সাল থেকে ১৭২৫ সাল পর্যন্ত ডাইনির বিচার করা হতো সেখানেও অধিকাংশই ছিল নারী। লেখক ক্যারল এফ. কার্লসেনের ‘দ্য ডেভিল ইন দ্য শেফ অফ অ্যা উইমেন’ থেকে জানা যায়, নব্য ইংল্যান্ডে ৩৪৪ জন অভিযুক্তের মাঝে শতকরা ৭৮ ভাগই ছিলেন নারী। আবার যদিও কোনো পুরুষ ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত হয় তার সাথে কোনো না কোনো নারীর সংযোগ ছিলই।

তৎকালে পিউরিট্যান সম্প্রদায় অভিযুক্ত নারীর স্বামী ও ভাইকে জাদুকর হিসেবে আখ্যায়িত করত। এই সম্প্রদায়ে নারীদের ধর্মীয়ভাবে খুবই অবমূল্যায়ন করা হতো। এখানে নারীরা খুবই অসহায় ও অক্ষম বিবেচিত হতো।

পিউরিট্যানরা নারীদের কিছু নির্দিষ্ট কাজে আবদ্ধ রাখায় আগ্রহী ছিল। তাদের ভাবনা ছিল নারীদের বাচ্চা থাকবে, সেই সকল বাচ্চাদের দেখভাল করবে, গৃহস্থালির কাজ করবে ও স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করবে। পিউরিট্যানরা নারীদের ‘ইভ ও তার পাপী আপেলের’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বোঝাতে চাইত নারীরা শয়তানের দ্বারা অধিক প্রলুব্ধ হয়।

আমেরিকান সমাজে পিউরিট্যানদের নিয়মনীতি জোরপূর্বক চালানো হতো। যখন কোনো নারী এদের নিয়মের বাইরে যেত তখনই তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হতো। কোনো নারীর সম্পদ বেশি থাকলে ভাবা হতো পাপাচারের উপার্জন। আবার যদি টাকা-পয়সা কম থাকত তবে বলা হতো দুশ্চরিত্রের অধিকারী।

অপর দিকে যদি কোনো নারীর সন্তান বেশি হতো তাহলে শয়তানের সাথে মেলামেশার অভিযোগ দায়ের করা হতো। বেশি সন্তান হলে যদি দোষ হয় তবে কম সন্তান হলে কি নিস্তার পেত? বাস্তবে কম সন্তান হলেও অনুরূপ অভিযোগ থাকত যে শয়তানের সাথে মেলামেশার জন্য সন্তান হয় না। কোনদিকে যাবে নারী?

১৬৩৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে ষাট বছর বয়সী ওয়েবস্টার নামের এক নারীকে ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এই নারীর অভিযোগটা ছিল খুবই ভিন্ন। এই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল শয়তানের সঙ্গে মিলেমিশে স্থানীয় গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে শয়তানে পরিণত করত। তবে আদালত এই অভিযোগকে আমলে না নিয়ে অভিযুক্ত নারীকে নির্দোষ বলেছিল।

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান ভারতেও ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অপবাদ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নারীরাই। কিন্তু শুধু নারীই কেন ডাইনি তা ভাবতে গেলে সহজেই উত্তর মেলে।

আরও পড়ুন- অবিকৃত থাকবে যে ৫ নেতার লাশ

প্রথমত সংখ্যালঘু, দুর্বল ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়। দ্বিতীয়ত পুরুষ শাসিত সমাজব্যবস্থায় পুরুষরাই শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে চলে। এরা বরাবরই নারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

আজ হয়তো আমাদের দেশে নারীদের ডাইনি অপবাদে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় না। কিন্তু এদেশেও পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের অবহেলার চিত্র দেখা যায়। যেখানে পুরুষ, নারীকে বরাবরই অন্যায়ভাবে শাসন করতে চায়। কিন্তু ভালবাসতে চায় কি?

সূত্র- সায়েন্স অ্যালার্ট, ডি ডব্লিউ।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড