• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিক্ষকতা পেশায় আসুক যোগ্য ও মেধাবীরা  

  সম্পাদকীয়

২৭ মার্চ ২০১৯, ১৩:৫৪
সম্পাদকীয়

যোগ্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসেন না বলে আমাদের আক্ষেপ চিরকালের৷ রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণ যে শিক্ষকেরা, দেশসেরা মেধাবীদের মধ্য থেকেই তাদের বাছাই করা উচিত— এ তো সন্দেহাতীত৷ শিক্ষাব্যবস্থাকে সুসংহত করতে এবং শিক্ষামান উন্নত করতে যত তৎপরতাই গ্রহণ করা হোক না কেন, দক্ষ মেধাবী শিক্ষক ব্যতীত তা বাস্তবায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ তাই শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের যুক্ত হবার কোনো বিকল্প নেই৷

প্রশ্ন হচ্ছে— অপেক্ষাকৃত অধিক মেধাবীরা কেন মহান এ পেশায় আসতে আগ্রহী নন? উত্তরটা খুবই সোজা— আর্থিক সুবিধা বিবেচনায় পেশা হিসেবে শিক্ষকতা আমাদের দেশে এখনও আকর্ষণীয় পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেনি৷ এ ক্ষেত্রে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে— কেবল অর্থই তো সব নয়, শিক্ষকতায় যে সম্মান-শ্রদ্ধা পাওয়া যায়, তা অন্য কোনো পেশাতেই সম্ভব নয়৷ কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই ভিন্ন৷ অর্থ উপার্জনের যথেষ্ট সুযোগ না থাকলে নিজ পরিবারেই কতটা অসম্মান ও অসহায়ত্বের সম্মুখীন হতে হয়, তার চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত দেশের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা৷ জানা যায়, এমপিওভুক্তির অভিন্ন দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষকেরা ইতোমধ্যেই ত্রিশ বারের মতো আন্দোলনে নেমেছেন৷ শিক্ষকেরা রাস্তায় বসে স্বচ্ছল জীবনের দাবিতে শ্লোগান দেবেন, জাতি হিসেবে এটাই কম লজ্জার নয়, তার ওপরে ত্রিশ বার একই দাবিতে পথে নামলেও তার সমাধান না হওয়াটাই প্রমাণ করে এ পেশায় থেকে শিক্ষকদের কতটা নিগৃহীত জীবন যাপন করতে হচ্ছে৷ কোনো কোনো শিক্ষকের কাছে এটাও শোনা গেল যে তারা গত পনেরো-বিশ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন৷ ব্যাপারটি মারাত্মকভাবে দুর্ভাগ্যজনক বৈ কি৷

সর্বশেষ গত বছর জুন মাসে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষকেরা আমরণ অনশন শুরু করলে এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়া হয়৷ পরবর্তীতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহান সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অক্টোবর মাসের মধ্যে বিষয়টি ফয়সালা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন৷ অর্থ মন্ত্রণালয় এ খাতে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল বলেও জানা যায়৷ কিন্তু গত বছরের সে আন্দোলনের পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি৷ যার ফলাফল হিসেবে পুনরায় একই দাবিতে সারা দেশের নন-এমপিও শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে সামিল হওয়া৷ পূর্ব আন্দোলনগুলোর অগ্রগতি বলতে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনপত্র গ্রহণের কাজটি কেবল সম্পন্ন হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে স্বীকৃত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪২টি৷ জমা পড়া ৬ হাজার ১৪১টি আবেদনের মধ্যে 'এমপিও নীতিমালা-২০১৮' এর সব শর্ত পূরণ করে 'যোগ্য তালিকা'য় স্থান পেয়েছে সারাদেশের ১ হাজার ৫৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির জন্য বছরে প্রয়োজন হবে ৭০৯ কোটি টাকা৷ আনুষ্ঠানিক হিসাবনিকাশ শেষ হয়েছে কয়েক মাস হলো, এখনও কেন কাজটি ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না— সেটি একটি যৌক্তিক প্রশ্ন৷

বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানান পর্যায়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে সত্য, তবে এটাও মানতে হবে যে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থব্যয়ে কোনোরূপ সংকোচ থাকা উচিত নয়৷ কেননা এটি রাষ্ট্রের ব্যয় নয়, বিনিয়োগ৷ শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করতে না পারলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে যথেষ্ট উদার হওয়া সম্ভব হবে না৷ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তিকরণে সর্বশেষ উদ্যোগটি ছিল আজ থেকে নয় বছর আগে৷ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল৷ এর কিছুকাল পর থেকেই এ আন্দোলনের শুরু৷ তাই যোগ্য বিবেচিত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তিতে আর কোনো দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়৷

শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা দিতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ কেবল তাই নয়, পরবর্তী সময়ে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষামান তদারকিতেও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে৷ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যে এক ধরনের অসন্তোষ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তা দূরীকরণে দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে৷ সামনের দিনগুলোতে শিক্ষকতা পেশাকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়— সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু করা হোক৷

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড