বাপ্পি লিংকন রায়
তরু-পল্লব ও মাটির সঙ্গে মানবের সম্পর্ক অতি আদি ও পরম। প্রকৃতির কাছে সকলেই যেন আমরা খুঁজে পাই হারানো স্মৃতি, নতুনের প্রেরণা ও শক্তি। মাটি যেন সকল শক্তির উৎস যেমনটা বলা হয় সূর্যকে।
যুগ যুগ ধরে শিল্পীরাও তাদের শক্তি ও সৃষ্টিকর্মের প্রধান উপপাদ্য গ্রহণ করেছেন প্রকৃতি থেকেই। ক্লদ মনে, ভ্যানগগ, র্যামব্যান্ট, জন টানার, জয়নুল আবেদিন, এস.এম সুলতান সকলেই শিল্পের রসদ গ্রহণ করেন প্রকৃতি থেকে। আর তা প্রকাশে পেয়েছে নান্দনিক সব বিখ্যাত শিল্পকর্ম।
ছাপচিত্রী শিল্পী ফারজানা রহমান ববি ভালবাসেন গাছ, তরুলতা ও অনুভব করেন নিজের মধ্যে এদের সঙ্গে সখ্যতা। শিল্পীর এই বৃক্ষ প্রীতিরই যেন প্রকাশ তাঁর ছাপচিত্রে। একজন দর্শক চিত্রের মাঝে নিজের কল্পিত রাজ্যে ভ্রমণ করবে। বিশাল ময়দানে আবার হঠাৎই থমকে যাবেন কোনো পল্লবের অনাবিল সৌন্দর্যে।
শিল্পীর প্রথম পর্বের কাজগুলো হলো- ‘ট্রি ট্রাংক, ফেলিয়েজ’ ইত্যাদি সিরিজের কাজ। যেখানে রেখাধর্মীতার প্রাধান্য বেশি ও অধিক ডিটেল/নিপুণ কাজ করার দিকেই অধিক মনোনিবেশ ছিল। তাঁর দ্বিতীয় পর্বের সিরিজ কাজগুলোর একটি ‘এগজিসট্যান’। এই সিরিজের কাজে শিল্পীর ধ্যান, সাধনা, প্রেরণা, নিরলস, নিমগ্রনতা, শ্রম ও নিবেদিত প্রাণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বনলতা ও পাতার আশ্রয়ে/সমন্বয়ে রেখা ও বুনটের যে শিল্প নির্মাণ করেছেন, তা যেন বাংলারই চিত্র। শুধুমাত্র প্রকাশে চিত্রশিল্পীর নিজস্ব বৈচিত্র্যতায় অর্ধ-বিমূর্তভাবে উপস্থাপন হয়েছে। এখানে যেন তিনি চিত্রের পিকটোরিয়াল স্পেসকে নতুন নতুন সব ফর্মে ভেঙেছেন। কর্মগুলো পাতা, ভূমি কখনো বা একটি গাছে আত্মকাহিনী হয়ে প্রকাশমান।
‘ফোলিয়েজ অন দ্যা রক’ সিরিজের কাজগুলো মিশ্র মাধ্যমে করা। তিনি এখানে ছাপচিত্র মাধ্যমের ছবিকে আশ্রয় করে পেনসিল, চারকোল ও অন্য মাধ্যমের সাহায্যে এক নাটকীয় ভাবের জন্ম দেন। চিত্রের সাদা রেখাগুলো দর্শককের মন ভ্রমণ করিয়ে চিত্রের গভীর থেকে গভীরে নিয়ে এক আনন্দঘন শীতল আবহাওয়া তৈরি করে। শিল্পীর সকল শিল্পকর্মেই রেখাধর্মীতা ও বর্ণের পরিমিত ব্যবহার, যা দার্শনিক ভাবনার প্রকাশ করে ব বর্ণের প্রয়োজনীয়তার ইচ্ছাই লোপ পাবে।
ফারজানা রহমান ববি একজন চিত্রশিল্পী ও ছাপশিল্পী। তিনি ছাপচিত্রের মতো একটি কঠিন মাধ্যমে দীর্ঘ দিন চর্চা করছেন। মোহাম্মদ কিবরিয়া ছাপচিত্র স্টুডিওতে নিয়মিত ছাপচিত্রের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন ও বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষের মাঝে ছাপচিত্র নিয়ে কাজ করেন। কিবরিয়া স্টুডিওতে ছাপচিত্র বিষয়ে পাঠদানে যেমনি তিনি নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল তেমনি নিজ কাজেও। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি স্টুডিওতে কিংবা বাসায় শিল্পের কাছ থেকে পিছু হটেন না। আর এই যাত্রায় তার সঙ্গী সাথী চিত্রশিল্পী তমাল। বাংলার চারুশিল্প অঙ্গনে দুজনই স্বগৌরবের স্থান অর্জন করে।
শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে “মাটির মায়া” শিরোনামে শিল্পী ফারজানা রহমান ববির একক চিত্র প্রদর্শনী চলছে। প্রদশর্নী চলবে আগামী ১৮ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত।
স্থান- শিল্পাঙ্গন গ্যালারি। বাসা- ২/৮(৫ম তলা), ব্লক- ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।
প্রদর্শনীর সময় প্রতিদিন বেলা ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা। প্রদর্শনীটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড