• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘দেবী’ ফিরে আসুক বারবার

  আসিফ রহমান

২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৪
দেবী
দেবী

মিসির আলী সাহেব নতুন বাসায় উঠেছেন। উঠতেই ঝামেলা বেঁধেছে সেখানকার কমোডটা নিয়ে। নষ্ট কমোড ঠিক করতে চাচ্ছেন, কিন্তু সেটা ঠিক করা সম্ভব নয়। তার বদলে মিস্ত্রি আরামকমোডের ব্যবস্থা করে দিলো। সেজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, গোবরে পদ্মফুল বাগধারার মতো কমোডে গোলাপফুলের চারা লাগাবেন।

আনিস আর রানু স্বামী-স্ত্রী। সুখের সংসার। বিয়ে করার একবছর অতিক্রম হয়েছে তাদের। আনিস চাকরি করে। সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে প্রায় রাতেই তাকে অদ্ভুত এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।

রানুর গল্পটা অন্যরকম। সে আট-দশটা সাধারণের মানুষের মতো ভাবতে পারে না। তার জীবনে তার স্বামী ছাড়াও আরো কিছু মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। সে তাদের কথা শুনতে পায়, তাদের দেখতে পায়, তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে আসে। তারচেয়ে বড় কথা, রানু বর্তমান, ভবিষ্যত কিংবা অতীত বলে দিতে পারে।

নীলু মিসির আলী সাহেবের ছাত্রী। নিজের মতো করে থাকে সে। বই পড়া আর বাবার চা বানিয়ে দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই বলেই জানায় সে। মাঝে মাঝে তাদের ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকা আনিস সাহেবের স্ত্রীর সাথে তার কথা হয়। মহিলাটিকে তার অদ্ভুত লাগে। কেমন যেন দেবীর মতো! এসবের বাইরে একাকী, নিভৃতে কাটানো নীলুর জীবনে ফেসবুকের মাধ্যমে একটি ছেলে আসে।

একদিন অফিস শেষে আনিস উপস্থিত হলো মিসির আলী সাহেবের বাসায়। এক কলিগের কাছ থেকে ঠিকানাটা পেয়েছে সে। মিসির আলী সাহেবকে প্রায় সময় আলসারের ব্যথায় কাবু হয়ে থাকতে হয়। সেজন্য তিনি একরকম নিভৃতে জীবন-যাপনের জন্য নতুন বাসায় উঠেছিলেন। তাতে বাগড়া দিয়ে দিলেন আনিস সাহেব। উদ্দেশ্য, স্ত্রীর সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করা।

মিসির আলী আনিস সাহেবের কথা শুনলেন। রানুর কথা শুনলেন। খটকা লাগলো কিছু জায়গায়। একজন মৃত মানুষ পাজামা টেনে খুলবে কিভাবে? রানু মিথ্যে বলছে না তো? তারপর যুক্তিবাদী মিসির আলী সাহেব বেরিয়ে পড়লেন যুক্তির খোঁজে।

বাকি খেলাটা প্রকৃতি আর মিসির আলীর।

উপন্যাসকে চলচ্চিত্রে রূপায়ন করতে গেলে অনেক দিকে নজর রাখতে হয়। তার উপর সেটা যদি হয় মিসির আলীর মতো চরিত্রকে ধারণ করার, তাহলে তো আর কথাই নেই। চঞ্চল চৌধুরী সেদিক দিয়ে সফল। ঘনঘন সিগারেট খাওয়া, কথার পিঠে কথা তুলে যুক্তির সাহচর্যে নিজের মতো করে প্রকৃতির সাথে লড়াইয়ে নামা, চঞ্চল যেন উপন্যাসের মিসির আলীকেই নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন। যদিও অন্য সব মিসির আলী থেকে দেবীর মিসির আলী চরিত্রের ব্যাপ্তি কিংবা ব্যাপকতা খোদ হুমায়ূন আহমেদই যেখানে সংকুচিত করে রেখেছেন, সেখানে দর্শক হিসেবে আমাদের এক-আধটু অতৃপ্তি কাজ করতেই পারে।

রানু চরিত্রে জয়া আহসান যেন অনবদ্য। এক্সপ্রেশন থেকে শুরু করে শারিরীক ভাষা, কোনোদিক দিয়েই এতটুক খুঁত রাখেননি তিনি। কাজটা জয়ার জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিলো, কিন্তু জয়া যেন হেসে-খেলে পর্দায় রানুকে ঠিক দর্শক যেমন চায়, তেমন করেই উপস্থাপন করেছেন।

শবনম ফারিয়াকে নিয়ে বলতে গেলে নীলু চরিত্রের গভীরতা এ সময়ে আর কেউ তার মতো করে ফুটিয়ে তুলতে পারতো বলে মনে হচ্ছিলো না। দর্শক যেন বুঁদ হয়ে ছিলো নীলুর একাকী আর দোদুল্যমান চোখ আর শারীরিক ভাষায়।

আনিস চরিত্রে অনিমেষ আইচ, আর সাথে ইরেশ জাকের। যেন বেছে বেছে বড় বড় মাছগুলোকে তুলে আনা হয়েছে দেবীকে পর্দায় তুলে ধরার জন্য। সবকিছুই ঠিকঠাক। অনম বিশ্বাস একরকম বেশ সাহসিকতার সাথেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কালার গ্রেডিং থেকে শুরু করে দৃশ্যায়ন, খুঁত রাখেননি কিছুতেই। তবে সংলাপে আরেকটু বেশি নজর দিলে হয়তো ভালোই হতো।

শেষ কথা, দেবী আবার আসুক। সাথে বারবার নতুন রূপে ফিরে আসুক জয়া আহসান, চঞ্চল আর অনম বিশ্বাসের হাত ধরে মিসির আলী। আমাদের মিসির আলী।

আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবো নতুন দেবীর, নতুন মিসির আলীর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড