• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে ক্রিকেট

  অধিকার ডেস্ক

০৩ জুন ২০১৯, ১৭:৫০
ক্রিকেট
ক্রিকেটে প্রযুক্তির নানা ছোঁয়া (ছবি : সংগৃহীত)

প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনে এসেছে নানা ধরনের পরিবর্তন। প্রযুক্তির কল্যাণে ধীরে ধীরে ক্রিকেটও বদলে গেছে। এতে করে একদিকে খেলায় উত্তেজনা বাড়ার পাশাপাশি মাঠে না-যাওয়া দর্শকরা ঘরে বসেই ক্রিকেটের পূর্ণ মজা পাচ্ছেন। ক্রিকেট খেলায় ঠিক তেমনি ব্যবহার করা প্রযুক্তির জানা অজানা দিক নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।

১.বল ট্র্যাকিং (হক আই) ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম হলো ‘হক আই’। কিছুদিন আগেও লেগ বিফোর উইকেটের (এলবিডাব্লিউ) সিদ্ধান্তের জন্য মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আর খালি চোখে দেখেই ব্যাটসম্যানের পায়ের সঙ্গে বলের সংযোগ কোন স্থানে হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হতো। এমনকি থার্ড আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার উপায়ও ছিল না।

তবে বল ট্র্যাকিং বা হক আই প্রযুক্তি আসার পর সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই বদলে গেছে। এই প্রযুক্তি সহজেই বলের গতিপথ বলে দিতে জানে। আর ক্রিকেট আইনও এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে বদলে গেছে। এলবিডাব্লিউয়ের ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে এখন ব্যাটসম্যান কিংবা বোলাররা রিভিউ চাইতে পারেন। সুইং বা সিম, বাউন্স কিংবা স্পিনের কারণে বলের গতিপথের পরিবর্তনও দেখে নিতে পারেন।

২.গান (স্পিডোমিটার)

গান বা স্পিডোমিটার প্রযুক্তি আসার আগে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গতিতে বল কে ছুড়েছেন, সে রেকর্ড কখনই জানা যাবে না। কেননা এই প্রযুক্তি আসার আগে বোলারদের বলের গতি মাপার কোনো উপায়ই ছিল না।

তবে প্রযুক্তির কল্যাণে স্পিডোমিটার আসার পর বোলারদের সক্ষমতা সহজেই মাপা যায়।আর কে কত জোরে বল ছুঁড়ছেন, তাও জানা যায়।

৩.স্পাইডার ক্যাম

এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরা মাঠের ওপর দিয়ে বিশেষ টানা তারের ওপর ভর করেই চলাচল করে।এটির কার্যক্রম দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ক্যামেরার সাহায্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময়ই খেলোয়াড়দের বিভিন্ন অ্যাকশন অনেক কাছ থেকে ধারণ করা যায়।

এই প্রযুক্তি শুধু যে টিভি সম্প্রচারকারীদের কাজের মান বৃদ্ধি করে তা কিন্তু নয়, একই সঙ্গে আম্পায়ারদের যেকোনো ঘটনা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে।

৫.স্নিকোমিটার এবং হটস্পট

অনেক সময়ই বোলিং এন্ডে দাঁড়িয়ে আম্পায়ারের পক্ষে বল ব্যাট ছুঁয়ে গেছে কি না, সেটা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। এই ‘স্নিকোমিটার’ হলো এক ধরনের মাইক্রোফোন, যেটা সামান্য শব্দও ধারণ করে তা গ্রাফ আকারে প্রকাশ করতে সক্ষম।

এলবিডাব্লিউ আইনের ক্ষেত্রে বল ব্যাটে লেগেছে কি না কিংবা ইনসাইড এজ হয়ে বল আগে ব্যাটে নাকি প্যাডে লেগেছে সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই স্নিকোমিটার প্রযুক্তির মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা যায়।

তবে এটি শব্দের ওপর নির্ভর করে। তাই ব্যাটসম্যানের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের শব্দের আধিক্য থাকলে এই প্রযুক্তির সাহায্যে পাওয়া টানা শব্দের গ্রাফ থেকে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। এছাড়া ব্যাট-বল সংযোগের সূক্ষ্ম হিসাব শুধু শব্দের সাহায্যে নির্ণয় করা যায় না। তাই এ সমস্যার সমাধান করেছে‘হটস্পট’ প্রযুক্তি।

এটি বলের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ব্যাটের ওই স্থানে সামান্য যে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়, সেটাও ভালোভাবেই ধরে ফেলতে পারে।

৬. স্ট্যাম্প ক্যামেরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের হিসাব-নিকাশ আরও সূক্ষ্ম হয়ে উঠছে। এজন্য আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নিতে আরও সাবধানতা অবলম্বন করছেন। অনেক সময় রান-আউট বা স্ট্যাম্পিংয়ের হিসাব মেলাতে ব্যাটসম্যানের পেছন থেকে শট ধরা হয়।

এজন্য মিডল স্ট্যাম্পে ক্যামেরা বসানো থাকে। এতে করে একদিকে যেমন ব্যাটসম্যানের পায়ের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেই সঙ্গে ক্যামেরার নড়াচড়া দেখে বল স্ট্যাম্পে আঘাত করার সঠিক মুহূর্তটাও বোঝা যায়।

৭.ওয়াগন হুইল ও পিচ ম্যাপ

ওয়াগন হুইলের মাধ্যমে একটা দলের খেলার ধরন বিশ্লেষণ করা হয়। একজন ব্যাটসম্যান মাঠের কোন কোন অংশ দিয়ে বল পাঠিয়ে রান করেছেন বা বল ওপর দিয়ে নাকি গড়িয়ে গেছে, সেটাও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখানো সম্ভব হয় ।

অন্যদিকে পিচ ম্যাপের মাধ্যমে পিচের কোথায় কোথায় বল পড়েছে, সেটাও এই পিচ ম্যাপের মাধ্যমে দেখা যায়। ফলে প্রতিপক্ষের বোলার সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

পাশাপাশি কোথায় বল ফেললে কোন ব্যাটসম্যান কিভাবে খেলবেন, সেটাও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।

৮.বোলিং মেশিন

ব্যাটসম্যানরা যেকোনো গতিতে বল এলে সেটা কিভাবে মোকাবিলা করবেন, তা অনুশীলন করতে এই বোলিং মেশিন ব্যবহার করেন।

গতিবিধি নির্দিষ্ট করে দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বল ছুঁড়তে থাকে।

৯.লেড বেল অনেক আগেই স্ট্যাম্পের সঙ্গে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন বসানো হয়েছে। এবার বেলের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। এই লেড বেলের বিশেষত্ব হলো, স্থানচ্যুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর লেড বাতি জ্বলে ওঠে।

অনেক সময় স্লো মোশনেও বলটি কখন স্ট্যাম্পে আঘাত করেছে, সেটা বোঝা কষ্টকর। সেই কাজ সহজ করতেই এই লেড বেল ব্যবহার করা হয়েছে।

১০.বল আরপিএম

কোনো স্পিনার বল ছোঁড়ার তার গতি মাপতে আরপিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে করে বোলারের সক্ষমতা আর সেটা মাটিতে পড়ার পর উইকেটের ধরন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

১১.সুপার স্লো মোশন

এই মেশিন দিয়ে সাধারণ স্লো মোশনের চেয়েও ধীরগতিতে ভিডিও ধারণ করা হয়। ফ্রেম পরিবর্তনের গতিও কমিয়ে আনা হয়। এর মাধ্যমে যেকোনো ঘটনা অতি সূক্ষ্মভাবে দেখা সম্ভব।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা এই স্লো মোশন প্রযুক্তির সাহায্যেই বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।

১২.ফিটনেস দেখভালের যন্ত্র

এবারের বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে উচ্চ প্রযুক্তির একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে দেখা যাবে। এই ডিভাইসের বিশেষত্ব হচ্ছে- এটি এক ধরনের পরিধেয়যোগ্য যন্ত্র, যা কি না খেলোয়াড়ের শারীরিক নানা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবে।

এসবের মধ্যে আছে—নতুন পরিবেশের সঙ্গে খেলোয়াড়ের শরীর কতটুকু মানিয়ে নিতে পারছে, কতটুকু প্রশিক্ষণ দরকার প্রভৃতি। যন্ত্রটিতে জিপিএস সুবিধা থাকায় মূলত এটি খেলোয়াড়ের ফিটনেসের দিকে নজর রাখবে। প্রশিক্ষকরা এই যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়দের প্রয়োজনমতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও ঠিক করে দিতে পারবেন। যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান স্টেট-স্পোর্টসের কাছ থেকে এই যন্ত্রগুলো কেনা হয়েছে।

তবে ভারতের আগেও অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরকেও এই যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড