• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুস্তিগীর থেকে সফল উদ্যোক্তা শিরিন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মে ২০১৮, ১১:২৮

এক সময় ক্রীড়াঙ্গনে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, সেখানে হয়েছেন সফল। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অর্জন করেছেন পদক। আর এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। পালন করছে মুরগি। পুকুরে চলছে মাছ চাষ আর ডাঙায় লেবু চাষ। পোল্ট্রি ফার্মের মাধ্যমে প্রতিদিন আয়ও করছেন বেশ। বলছিলাম ...স্বর্ণজয়ী রেসলার বা কুস্তিগীর শিরিন সুলতানার কথা। ২০০৯ সালেই জাতীয় রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতে নেন শিরিন। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা জিতেছেন দেশ সেরার পদক। ক্রীড়াঙ্গনেও যেমন তারকা ছিলেন, বর্তমানে ব্যবসা পেশায়ও সফল শিরিন।

শিরিনের ব্যবসার শুরুটা হয় ২০১৩ সালে। সে সময় খেলার পাশাপাশি পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু করেন। শিরিন বললেন, ‘বাড়িতে আমাদের বেশ জায়গাজমি খালি ছিল। আমি একদিন ভাবলাম এখানে পোল্ট্রি ফার্ম করা যায়। শুরু করি ৩ হাজার ৬০০ মুরগি দিয়ে। এখন আছে ৩০ হাজারের বেশি।’

ময়মনসিংহের মেয়ে শিরিন। একজন কুস্তিগীর। পরিবারে আর কেউ নেই কুস্তিতে। এমনকি পুরো ময়মনসিংহ বিভাগে তিনি ছাড়া আর কোন মহিলা নেই রেসলিং খেলায়। মাঠে যেমন লড়াকু ছিলেন, ব্যবসায়ও ঠিক তেমনি। শিরিন তার এখনকার গল্প বলছিলেন, ‘প্রতিদিন নতুন মুরগি জন্মাচ্ছে আর বিক্রিও তো হচ্ছে। মাছ চাষেরও দুটি প্রকল্প আছে। প্রকল্পগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ২০ জন কর্মী।’

ক্রীড়া জগতে প্রবেশের কথাও শোনান শিরিন সুলতানা। বলেন, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে একমাত্র তিনিই এসেছেন রেসলিংয়ে। অন্যরা ব্যবসায়ী। তাতে কী? ২০০৮-০৯ মৌসুমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতা থেকে মাত্র এক মাসের প্রশিক্ষণ পান। এরপর শুরু হয় কুস্তি প্রতিযোগিতা। ২০০৯ সালেই জাতীয় রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক, তারপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা শিরোপা জয়।

কুস্তির শুরুটা ২০০৪ সালে। যখন রেসলিং শুরু করি, তখন নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা থেকে স্টেডিয়াম ঘেরাও পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।

কেবল রেসলিংয়ে নয় অন্য খেলাতেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন শিরিন সুলতানা। ২০১০-২০১৩ চার বার জাতীয় রোইয়িং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ২০১৫ সালে জাতীয় মহিলা কাবাডিতে স্বর্ণপদক জেতেন। জাতীয় উশু চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক পান ২০১০ ও ২০১১ সালে। ২০১৪ সালে জিতে নেন স্বর্ণপদক। অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কমনওয়েলথ গেমসে রেসলিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিভাবান কুস্তিগীর শিরিন।

এরপর আস্তে আস্তে চলে আসেন ব্যবসায়। প্রথম দিকে পরিবারের মানুষদের কিছুটা আপত্তি থাকলেও তার সফলতার পাশে ছিলেন সবাই। এখন পোল্ট্রির ফার্মের পাশাপাশি মাছ এবং লেবু চাষ শুরু করেছেন। ‘মাছের আরও তিনটি প্রকল্প শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। অনেকটা জায়গা নিয়ে দেশি লেবু আর পেঁপে চাষ শুরু করেছি। খুব তাড়াতাড়িই ফলন পাওয়া যাবে।’

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই লড়াকু মেয়ে বারবার চমক দেখিয়েছেন দেশে-বিদেশে। দেশের মাটিতে জয়ের পাশাপাশি আছে বিদেশ বিজয়ও। দ্বিতীয় ইন্দো-বাংলাদেশ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পান ২০১২ সালে। ২০১৩ সালে এশিয়ান রেসলিং প্রতিযোগিতায় পান ব্রোঞ্জ । এছাড়া পদক অর্জন করেছেন এশিয়ান গেমস, এশিয়ান ইনডোর এবং মার্শাল আর্ট গেমস পুরস্কার, ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে, কোনটাই বাদ যায়নি। পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট আনসার মেডেল, ক্রীড়া লেখক সম্মাননা, হিউমান রাইটস সম্মাননা, মে দিবস সম্মাননা স্বীকৃতি।

শিরিনের মতে, ইচ্ছে থাকলে বাংলাদেশের নারীরা সহজেই ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে পারে। রাখতে পারে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড