• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘বিশ্ব দরবারে দেশকে তুলে ধরতে ব্রান্ডিং করতে হবে’

  আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি

২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১০
‘বিশ্ব দরবারে দেশকে তুলে ধরতে ব্রান্ডিং করতে হবে’
অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন দৈনিক অধিকারের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আহমাদুল কবির (ছবি : অধিকার)

বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের খ্যাতি ও সুনামকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য জোরেশোরে ব্রান্ডিং করতে হবে। এই ব্রান্ডিংয়ের মানে হচ্ছে দেশের আলোকিত দিকগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। সম্প্রতি দৈনিক অধিকারের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাতকারে কথাটি বলেন মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান।

ময়মনসিংহ জেলার কৃতি সন্তান হিসেবে পরিচিত প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ায় মেধা ও প্রজ্ঞায় যারা নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানও একজন। যিনি মেকানিকাল সাইন্টিস্ট হিসেবে বিশ্বের ৪৯তম এবং এনার্জিতে ৫০তম স্থান দখল করেছেন। এ ছাড়া বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় ঠাই করে নিয়েছেন অধ্যাপক সাইদুর।

ল্যাঙ্কাস্টার জরিপে ২০২০ সালের সেরা চারজন গবেষকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোমেটেরিয়ালস এবং এনার্জি টেকনোলজির প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান রয়েছেন সেরা চারে।

সাইদুর রহমান বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের খ্যাতি ও সুনামকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য জোরেশোরে দেশকে ব্রান্ডিং করতে হবে। এই ব্রান্ডিংয়ের মানে হচ্ছে দেশের আলোকিত দিকগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। ব্রান্ডিংয়ের সুফল হচ্ছে, দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং খাড়া করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনশক্তি, পর্যটন, দেশে তৈরি পণ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সেবাও মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়।

তিনি আরও বলেন, ইদানীং বিশ্বের বিভিন্ন শহরেরও একটি ব্রান্ডিং ইমেজ রয়েছে। মূলত সেই ইমেজ দেখেই মানুষ ঠিক করে কোন শহরে বেড়াতে যাবে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই ব্রান্ডিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে রেডিও, টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে তা উঠে আসছে। যেমন- মালয়েশিয়া ‘ট্রুলি এশিয়া’, ভারত ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’, চীন সারা বিশ্বের ‘কারখানা’ এবং শ্রীলঙ্কা ‘রিফ্রেশিংলি শ্রীলঙ্কা’ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া থাইল্যান্ড নিজেকে তুলে ধরছে ‘অ্যামেজিং থাইল্যান্ড’ নামে। ইত্যাদি ইত্যাদি নামে চলছে বিভিন্ন দেশের ইতিবাচক প্রচারণা।

তার মতে, উপযুক্ত ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের ইমেজ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কিছু নয়। কেননা আমাদের দেশে মেধার অভাব নেই। পোশাক শিল্পের পর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের চমকপ্রদ অগ্রগতি হয়েছে। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার নয় শতাংশেরও বেশি এবং বিশ্বের ১৬০টি দেশে বাংলাদেশ এখন ওষুধ রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের অন্যতম ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার এবং বেক্সিমকো সম্প্রতি আমেরিকার বাজারে প্রবেশের অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধ শিল্পের ব্রান্ডিং বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।

আরও পড়ুন : সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে নিসচার ৫ প্রস্তাবনা

পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয় জানিয়ে অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান বলেন, এক সময় সোনালী আঁশের দেশ বলতে বাংলাদেশকেই চিনত সারাবিশ্ব। মেধা ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাটকে বাংলাদেশ ব্রান্ডিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের একটি গ্রহণযোগ্য ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন ঐক্যমত।

সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, দেশ এবং প্রবাসের বাসিন্দা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা দেশের ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে কাজ করতে পারেন। বিশ্বের জনশক্তির বাজারে শুধু শ্রমিক রপ্তানির কথা না ভেবে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের ইমেজ বদলে যাবে। সমস্যা আমাদের আছে ঠিকই, কিন্তু গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে হলে নেতিবাচক দিকগুলোকে পিছনে রেখে বিশ্বের কাছে দেশকে নিয়ে একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। যা বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে দেবে।

সাইদুর রহমান ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় পুরস্কারও পেয়েছেন সাইদুর। তিনি ল্যাঙ্কাস্টারের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শক্তি প্রযুক্তি বিভাগ এবং মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোম্যাটরিয়ালস অ্যান্ড এনার্জি টেকনোলজির অধ্যাপক।

তার এই কাজের মধ্যে ল্যাঙ্কাস্টারের এনার্জি রিসার্চ গ্রুপের নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য ন্যানোম্যাটরিয়ালের গবেষণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্বের পাঁচ শতাধিক জার্নালে তার গবেষণা প্রকাশ করেছে।

তার গবেষণাপত্র বিশ্বের অন্যান্য গবেষকদের কাছে সব থেকে সমাদৃত। তার গবেষণা কাজগুলো ৪৫ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। ওয়েব অব সাইন্স ন্যানোফ্লুয়েড গবেষণায় তিনি প্রথম স্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বসেরা গবেষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ছাড়া Clarivate analytic awarded him highly cited researcher for 8 years in a row for being top 1% in his research field. He secured and manged RM25Million research funding. Professor Saidur built impressive research laboratories with state of art research equipment to conduct cutting edge research. He supervised more than 80 postgraduate students.

অধ্যাপক সাইদুর রহমানের গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, গবেষকদের উদ্দেশ্য বলেছেন, আমার গবেষণার অভিজ্ঞতাটি ভাগ করে নেওয়ার জন্য যারা প্রস্তুত রয়েছেন; সবাই মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হব। তিনি তার মেধা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানিয়েছেন।

সাইদুর রহমানের মতে, একটা সময় ছিল দরিদ্রপীড়িত বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনত, এরপর কায়িক পরিশ্রম করা কর্মীদের দেখছে বিশ্ব। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যে মেধার ও কৃতিত্বের বিস্ফোরণ দেখাচ্ছে বাংলার মেধাবী সন্তানরা সেসব প্রকাশ পাচ্ছে এখন। এ যেন সেই একাত্তর সালের স্বাধীনতা অর্জনের মতোই। যার যা আছে তাই নিয়ে লড়াই করে বিশ্বের বুকে কৃতিত্ব দেখিয়েছে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতা হতে পারে। বাংলাদেশি গবেষকদের জন্য অনলাইন গবেষণা সেমিনার সময়ে সময়ে আয়োজন করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন : বিশ্বে ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার প্রাণ নিল করোনা

তিনি আরও বলেন, এনার্জি এখন বিশ্বের অন্যতম অনুষঙ্গ, উন্নয়নের বা ভোগের অন্যতম চালিকা শক্তি। অল্প বিনিয়োগে অধিক এনার্জি উৎপাদন, টেকসই উন্নয়ন এ গবেষণা এবং এর প্রয়োগের বিকল্প নেই।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড