• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পরিবেশ আমাদের, দায়িত্বও আমাদের

  নেহাল আহম্মেদ প্রান্ত

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:২২
মতামত
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের পরিবেশ হানি ও জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর ভূমিকাই বেশি। অধিক জ্বালানি পোড়ানো, অঢেল রাসায়নিক বর্জ্য নির্গতকরণ, সীমাহীন যান্ত্রিক ও ধাতব ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র-অদৃশ্যমান কণিকা বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া তথা সামগ্রিকভাবে পরিবেশের বিপদ বাড়াতে ধনী দেশগুলোই অগ্রণী। এসব দেশের আপত্তিকর কাজের জন্য ভারসাম্যহীন হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু। বস্তুতপক্ষে, আমাদের পরিবেশের বিপন্নতার নেপথ্যে গরিব দেশের চেয়ে ধনী দেশের অবদান ঢের বেশি।

আমাদের পরিবেশ দূষিত হওয়ার জন্য এবং জলবায়ুর ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কারণে রোগ, শোক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিতে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নাজেহাল। পরিবেশের কারণে বাড়ছে প্রাণঘাতী রোগের প্রকোপ।

খেয়াল করলেই দেখা যাচ্ছে যে, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে নিরাপদ জীবন-জীবিকা ও নিশ্চিন্ত বসবাসকে। লাগামহীন শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনাঞ্চলের সঙ্কোচন, যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ, জ্বালানি পোড়ানোর ঘটনা পরিবেশকে বিপন্ন করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শতাব্দীর শেষে ৩ থেকে ৪ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীর। যা চরম প্রভাব ফেলবে মানুষের জীবনে। মানুষ হবে উষ্ণায়নের পৃথিবীতে চরমভাবে বিপদগ্রস্ত।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার যাবতীয় চুলচেরা বিশ্লেষণকে বোঝাচ্ছে। ইউএনএফসিসিসি (UNFCCC) বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে।

বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ সেই পরিচিতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয় ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এসে নথিভুক্ত করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল নথিভুক্ত করা হয় বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে।

তাপমাত্রার এই পরিসংখ্যানে আপাতদৃষ্টিতে যদিও মনে হচ্ছে তাপমাত্রা কমছে, কিন্তু বস্তুত, অতীতের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল কম। অথচ বর্তমানে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। কেননা, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বা WWF-এর গবেষণায় দেখা যায়, শুধু ঢাকা শহরেই মে মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ওই মাসের তুলনায় বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২০০৯ প্রেক্ষিত)। নভেম্বর মাসে এই তাপমাত্রা ১৪ বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ দিকে, আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০ দশমিক ৫ শতাংশ। এমনকি ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২১০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : জীবনে প্রথম ফ্রান্স ভ্রমণ

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধ্বসের মাত্রাবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে ২ থেকে ৩ বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। এমনকি, ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফ্ট-এর তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচ-এর প্রতিবেদন (২০১০) অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে বড় ধরনের প্রায় ২৫৪টি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে।

কাজেই জলবায়ু রক্ষা করতে আমাদের সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের পরিবেশ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। আমাদের স্বার্থে ও প্রয়োজনেই আমাদের উদাসীনতা পরিহার করে পরিবেশের প্রতি অধিকতর মনোযোগী ও দায়িত্ববান হতে হবে।

লেখক: যুগ্ম আহ্বায়ক, সবুজ আন্দোলন পরিষদ

ওডি/নিলয়

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড