শব্দনীল
ছোট বেলায় রবীন্দ্রনাথের সাথে পরিচয় হয় ‘আমাদের ছোট নদী’ দিয়ে। পরিচয় ঘটে চিক চিক করা বালি, শালিকের ঝাঁক, শেয়ালের ডাক, হাঁটু জলের সাথে। শৈশবের কৌতূহলী সময় পার হওয়ার সাথে সাথে তার কবিতা, গল্প, নাটক পড়তে শুরু করতেই অচেনা এক অদ্ভুত টান অনুভব করি। আর এই টানকে যদি বলা হয় ভালোবাসা। তবে, রবীন্দ্রনাথই আমার প্রথম প্রেম।
কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যখন যৌবনে পা দিচ্ছি দিচ্ছি ভাব তখন চোখের সামনে ভেসে উঠত একটি চৌকি খাট, পিছনে একটা ডোরা দাগের শতরঞ্জ ঝোলা, পাশে একটা ফুলদানিতে ফুলের তোড়া। আর, গালিচার ওপরে শাড়ির বাঁকা পাড়টির নিচে ঝুলতে থাকা দুখানি পা এর ছবি। যে ছবিটি রবি ঠাকুর এঁকে ছিলেন ‘হৈমন্তী’ গল্পের কিশোরী চরিত্রে। যে চরিত্র এখনো লালন করি বুকের ভিতরে।
রোদ যেমন মেঘের ভিতর থেকে একটু একটু করে উকি মারে তেমনি যৌবনের শুরুতে প্রথম মানুষটি যখন আসি আসি করছি তখনো রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম ভালো করে। তাই তো প্রশ্ন করতে পেরেছিলাম সখী ভালোবাসা কারে কয়। আবার সেই উত্তরও পেয়েছি তার কাছ থেকে, আমারও পরানো যাহা চায়।
জীবনের পথ চলতে গিয়ে আনন্দ-ব্যদনা, হাসি-কান্নার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ এবং আমার মাঝে এক ধরনের সখ্যতা তৈরি হয়ে গেছে। যার জন্য তার কবিতা, গল্প বা গানে আমি যাই চাই তার সব কিছুই বিদ্যমান।
যদি প্রেম নিয়ে আলোচনা করি তবে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’র কথা বারবার মনে আসবেই। অমিত-লাবণ্যের এক অমর প্রেম তৈরি করে গিয়েছিলেন শিলং পাহাড়ে, আবার যদি অবৈধ প্রেমের কথা দেখি, তবে চোখে পড়ে ‘চোখের বালি’। ত্রিকোণ প্রেম- চতুষ্কোণ পরিমন্ডল -দ্বন্দ -মানসিক আবর্তনের নানা দিক খুঁজে পাই তার কাব্যে।
অন্যদিকে যদি রবীন্দ্রনাথের জীবনের দিকে তাকাই, তবে সেখানে দেখতে পাব প্রেম-বিরহের এক নিদারুণ খেলা। তিনি যেমন প্রেমে পড়েছেন বারে বারে তেমনি, আঘাতও পেয়েছেন সমতালে। সাহিত্য উৎকর্ষে এই প্রেম এবং আঘাত দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মনে করি। যদি তাকাই কাদম্বরীর দিকে তবে বুঝতে বাকি থাকে না এই বউঠানই ছিল রবীন্দ্রনাথের কাব্যোকাশের ধ্রুবতারা।
দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের সমস্ততা দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে গেছেন, আমরা যা কিছুই উপলব্ধি করি বা প্রয়োজনে আহরণ করি তাই জীবন। প্রেমই যেখানে বেদনা অনস্বীকার্য, সেখানে বিশ্বাস মানুষকে উন্নতির সেই শিখরে নিয়ে যায়। যেখান থেকে পৃথিবীকে মনে হয় ভরসা আর বিশ্বাস জীবনের একমাত্র চলমান পথ। তিনি বলেছেন, ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই হবে’।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড