• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘প্রতিশোধ’ গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

  রিফাত হোসেন

১৮ জুন ২০১৯, ১৪:২৪
গল্প
ছবি : প্রতীকী

সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল তারিন। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ি থেকে বের হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অয়নকে ফোন করে বলল, ‘হ্যাঁ জান, কোথায় তুমি?’

অয়ন একটা রেস্টুরেন্টের নাম বলে ফোন কেটে দিল। তারিন ও চলে গেল সেই রেস্টুরেন্টে।

অয়ন বলল, ‘শোন, তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমার লোক তোমার বাড়ির চারিদিক নজরে রাখছে সবসময়। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’

- আমার খুব ভয় করছে। আমি শিওর ওটা রিফাত-ই ছিল। ওকে চিনতে আমি একটুও ভুল করিনি। তুমি বিশ্বাস কর, ও এখনো বেঁচে আছে।

অয়ন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘উফফ তারিন, এইসব অযৌক্তিক কথা তোমার মুখে মানায় না। একজন মৃত ব্যক্তি কখনো ফিরে আসে না।’

তারিন চুপ করে রইল। কারণ ও জানে অয়নকে রিফাতের ফিরে আসার কথাটা বলে কোনো লাভ হবে না। ও কিছুতেই এটা বিশ্বাস করবে না এখন। দু’জনেই কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইল। অয়ন তারিনের একটা হাত ধরে বলল, ‘জান, তোমাকে একটা অনুরোধ করব?’

- হুম বল?

- এখানে বসতে ভালো লাগছে না। আমার এক বন্ধুর বাসা খালি আছে, চলো আমরা সেখানে গিয়ে আজকে সারাদিন সময় কাটাই।

তারিন কিছুটা রেগে গিয়ে বলল, ‘অয়ন, তুমি যানও আমার এইসব ভালো লাগে না। তুমি কী বলতে চাচ্ছো আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার পক্ষে বিয়ের আগে এইসব করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি ঠিকই৷ কিন্তু বিয়ের আগে তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া আমার পক্ষে অসম্ভব।’

অয়ন কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে এলো। তারিন পিছন থেকে অনেক ডেকেও অয়নকে ফিরাতে পারল না। রেস্টুরেন্টে আরও কিছুক্ষণ বসে থেকে তারিন ও চলে এলো নিজের বাড়িতে। বাড়িতে এসে বেশ কয়েকবার অয়ন কে ফোন দিলো তারিন। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। অয়ন একবারও ফোন রিসিভ করেনি। অয়নের উপর খুব রাগ হচ্ছে তারিনের। সাথে কিছুটা কষ্ট ও হচ্ছে, কারণ রেস্টুরেন্টে ওভাবে অয়নকে বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি।

সকাল পেড়িয়ে দুপুর হলো। তারপর বিকেল, তারপর রাত হয়ে গেল। তবুও অয়নের কোনো খবর নেই। আজও সেই অন্ধকার রাত, সেদিন ও ছিল অন্ধকার রাত। রাস্তার মোড়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে দাঁড়িয়ে ছিল তারিন। শরীরে ছিল কালো একটা বোরকা। তারিন এমনভাবে পুরো শরীর ঢেকে রেখেছিল যেন কেউ ওকে চিনতে না পারে। আস্তে আস্তে রাত গভীর হতে থাকে, তবুও প্রিয় মানুষটার কোনো খোঁজ নেই। হঠাৎ পাশে কারোর উপস্থিতি টের পায় তারিন। আড়চোখে পাশে তাকিয়ে দেখে একটা যুবক দাঁড়িয়ে আছে। বেশ লম্বাচওড়া শরীরের আকৃতি। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট আর সাথে কালো একটা টুপি পড়ে আছে যুবক। বেশ অবাক হয় তারিন। কিছুটা ভয় ও পেতে থাকে। যুবক ছেলেটা একটু একটু করে তারিনের দিকে এগিয়ে আসে। খুব কাছাকাছি চলে আসার পর তারিন ওকে চিনতে পারে। তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘রিফাত তুমি এখানে?’

কান্নাস্বরে রিফাত বলে, ‘আমি তো তোমাকে কখনো কষ্ট দিইনি। বিয়ের পর থেকে তোমার কোনো চাওয়া-পাওয়া আমি অপূর্ণ রাখিনি। তাহলে কেন আমাকে রেখে এভাবে চলে যাচ্ছো? কী অপরাধ আমার? আমি তো তোমাকে শুধু ভালোবাসি। এটাই কী ছিল আমার অপরাধ?’

তারিন মৃদু হাসি দিয়ে বলে, ‘ভালোবাসাটা কোনো অপরাধ নয়। আর তোমারও কোনো দোষ নেই। দোষ তো আমার বাবা-মায়ের, তারা আমার মতামত না নিয়েই তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার মতামত শোনার বা জানার প্রয়োজনবোধ করেনি তারা। আত্মাহত্যার হুমকি দিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে আমার বাবা-মা। একবারও আমার মতামতের কথা জানতে চায়নি। আমার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না তাদের। সবসময় তাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে।’

- তাই বলে এভাবে একটা চিঠি লিখে তুমি বাড়ি থেকে চলে আসবে।

- আমার কিছু করার ছিল না রিফাত। আমি একজনকে ভালোবাসি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও চলে আসবে আমাকে নিতে। তারপর আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাবো।

তারিনের একটা হাত ধরে রিফাত করুণ কণ্ঠে বলল, ‘প্লিজ তারিন, এইরকম করো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। তোমাকে খুব ভালোবাসি আমি। তোমার চিঠিটা আমি ছাড়া কেউ দেখেনি এখনো। আজকে রাতের ঘটনাটা কেউ কোনোদিন জানতে পারবে না। প্লিজ তুমি অতীতের সবকিছু ভুলে যাও। আমি তোমার স্বামী। আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারবে না তুমি।’

তারিন এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, ‘নিজের ভালো চাও তো এখান থেকে চলে যাও রিফাত। এমনিতেই তুমি আমার অনেক ক্ষতি করে ফেলেছো। তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না। এক্ষুনি আমার ভালোবাসার মানুষ চলে আসবে। তাই বলছি এখান থেকে চলে যাও।’

রিফাত নিজের রাগটা সামলাতে পারল না। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তারিনের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। তারপর রাগী কন্ঠে বলল, ‘তোমার লজ্জা করে না বিয়ের পর নিজের প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যেতে। একজন মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়ে তুমি কীভাবে এই কাজটা করলে?’

- অয়ন আমার জীবনের একটা অংশ। তোমার সাথে বিয়ে হলেও আমি ওকেই ভালোবাসি। এতক্ষণ তোমার সাথে খুব ভালো করে কথা বলেছি। কিন্তু আর না, এই মুহূর্তে যদি তুমি এখান থেকে না যাও তাহলে আমার আসল রূপটা দেখতে পারবে তুমি।

অবাক কণ্ঠে রিফাত বলল, ‘মানে?’

তারিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিফাতকে বলল, ‘প্লিজ রিফাত তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক। একবার অয়ন এসে গেলে তোমাকে আর বাঁচাতে পারব না আমি। ও খুবই ভয়ঙ্কর একটা মানুষ। তোমার জন্য এতদিন ওর থেকে দূরে ছিলাম আমি। তোমার ওপর খুব রেগে আছে ও।’

- আমি তোমাকে রেখে কোত্থাও যাব না।

এই কথা বলে রিফাত তারিনের হাত ধরে টানতে শুরু করে। তখনই ওদের সামনে হাজির হয় অয়ন।

(চলবে.....)

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড