• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘তোমার শহর’ উপন্যাসের ৮ম পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : তোমার শহর

  রোকেয়া আশা

১৫ জুন ২০১৯, ১০:০৫
উপন্যাস
ছবি : প্রতীকী

আকাশটা নীল ছিলো কিছুক্ষণ আগে। আকাশের নীলের একটা আলাদা শেড আছে; তবে সেটা আসমানী না। আসমানী বা আকাশী আসলে আকাশের সাধারণ রঙ না। তবুও এই রঙটাকে আমরা বলি আকাশী। তবে আকাশের রঙ তখন আকাশীও ছিলো না, গভীর নীল ছিলো। ওশান ব্লু। সমুদ্র নীল।

আমার চোখের সামনেই দেখতে দেখতে উজ্জ্বল আলোয় ভরা নীল আকাশটা কমলা লাল হয়ে গেলো। সেই অদ্ভুত রঙের দিকে তাকানো যায় না। তাকালেই মনে হয়, ওখান থেকে কারা যেন চিৎকার করছে। বিভৎস একটা আগুনে পুড়ে যেতে যেতে দগ্ধ কিছু মানুষের আর্ত চিৎকার।

আমি দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ি৷ আমার চোখ পড়ে মাটির দিকে। এক বিন্দু সবুজ নেই কোথাও। মাটি নয়, যে ভূমিতে আমি বসে আছি - সেখানে মেটে গন্ধও নেই কোথাও। রঙটাও অন্যরকম; ধূসর। আমি আর সহ্য করতে পারি না। উঠে দাঁড়াই। তারপর ছুটতে শুরু করি। আমি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়াচ্ছি তখন, কোথাও যদি একজন কারো মুখের আদল দেখতে পাই - অথচ আমার চারপাশ কি গভীর শূন্য! কোথাও কেউ নেই, কিচ্ছু নেই!

আমি কল্পনায় অন্তত কোন প্রিয়মুখ ভাবার চেষ্টা করি। স্পষ্ট করে কোন আদলই আসছে না সেখানে। আমার কল্পনাও এই বিভৎস পুড়ে যাওয়া আকাশের মত করেই আমাকে প্রতারিত করছে বারবার। আম্মুর মুখ ভাবার চেষ্টা করি, তারপর আব্বুর, তুপুকে ভাবতে চাই অথচ কোন মুখই সামনে আসে না তখন। আমি জোর করতে চাই নিজেকে। রাশা আপু, নিবিড় ভাই কিংবা জেরিন বা সম্রাট কারো আদলই আসে না।

একটা অপার্থিব ভয় আমাকে ঘিরে ধরে। আমি চিৎকার করে উঠি সেই নিষ্প্রাণ নিষ্ঠুর আকাশের নিচে। আমি চোখ খুলি পুরো শরীরে একটা ভয়াবহ ঝাঁকুনি খেয়ে। মাথার ভেতরে তখনও দপদপ করছে। আমার এই ঘরটা কখনো অন্ধকার থাকে না, জানালার ওপাশ থেকে আলো এসে পড়ে। আজ অন্ধকার। ফ্যানটাও চলছে না। লোডশেডিং। মশারী টানানো নেই। সারাদিন সম্রাট আর জেরিনের সাথে ঘোরাঘুরি করে ফিরে এসে অনেকক্ষণ বারান্দায় একটা মোড়া নিয়ে বসেছিলাম। শাড়িটাও বদলানো হয়নি আর। বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় গায়েই শুকিয়েছে। ঘরে ঢুকে কোনমতে দরজা বন্ধ করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম আমি। বোধহয় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। টের পাচ্ছি, আমার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ফেরার পরই টের পেয়েছিলাম গা কাঁপিয়ে জ্বর আসছে। স্বাভাবিক। কিন্তু কপালে হাত দিলাম। দেখি জ্বর নেই।

ফোনটা হাতে নিলাম কয়টা বাজে দেখার জন্য। ফোনের স্ক্রিনের ওপর ম্যাসেঞ্জারের নোটিফিকেশন চোখে পড়লো তখন। ঢুকতেই দেখি নিবিড় ভাইয়ের ম্যাসেজ। এখন রাত দুটো বেজে সাতাশ মিনিট। নিবিড় ভাই ম্যাসেজটা দিয়েছিলেন নয়টার দিকে। ‘বৃষ্টিতে ভিজেছিস, ভিজেছিস। কিন্তু তোর তো খুব ঠাণ্ডার ধাত। একটুতেই জ্বরজারি বাঁধিয়ে ফেলিস। ঘুমানোর আগে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিস।’ আমি কোন রিপ্লাই দিতে পারি না ম্যাসেজের। হাতে থাকা ফোনটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ইশ! এত মায়া কেন লাগছে আমার? উনার ছোট্ট একটা ম্যাসেজ পেয়েই আমার এভাবে চোখে পানি কেন আসছে!

পরদিন সকালেও ফোনের রিংটোন শুনেই আমার ঘুম ভাঙে। তন্ময় ভাইয়া। রিসিভ এখন করবো নাকি পরে করবো ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়। প্রায় সাথে সাথেই আবার ফোন এলো। এবার একটু নড়েচড়ে উঠে ফোনটা রিসিভ করে ফেলি। দরকারী কিছু না হলে তন্ময় ভাইয়া পরপর দুবার ফোন দেবে না। - হ্যাঁ ভাইয়া বলো। - উঠে টিএসসি চলে আয়। কাজ আছে। - এখনই? - হ্যাঁ এখনই আয়। দ্রুত আসবি, ঠিক আছে? আমি ঠিক আছে কি নেই বলার সুযোগই পাই না। ফোন কেটে দিয়েছে ভাইয়া। আমি শাড়িটা দ্রুত পাল্টে নেই। আকাশী জিন্স, ছাই রঙের টিশার্ট। দ্রুত ব্রাশ করে এসে একটা রাবারব্যান্ড হাতে নিয়ে বের হই। যেতে যেতে পনিটেইল করে চুল বেঁধে ফেলবো। হলের বাইরে বের হয়েই বিরক্ত হয়ে গেলাম। একটা রিকশাও নেই আশেপাশে কোথাও। অগত্যা হেঁটেই রওনা হলাম। যথেষ্টই বেলা হয়েছে। কাল সারাদিন যে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়েছে, আজ তার কোন চিহ্নই নেই। ঝকঝকে রোদ চারদিকে। উজ্জ্বল আলোয় চারপাশ ছেয়ে আছে একদম। এই শহরটা মায়ার শহর। বর্ষার এই উজ্জ্বল রোদেও এত মায়া - ভালো লাগে আমার। টিএসসি পৌঁছেই দেখি তন্ময় ভাইয়া একগাদা আর্টপেপার সামনে রেখে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে আছে। আমাদের ক্লাবের রুমটায়। - তুমি আসলে কি করছো? মানুষটা ল্যাপটপের ভেতরে এমনভাবে ঢুকে ছিলো, কিছুই টের পায়নি। আমি আবার গলা খাকারি দিয়ে ডাকলাম। - ভাইয়া! এবারে চোখ তুলে তাকালো। - ও তুনু। শোন, আমি এখানে একটু কাজ করছি। তুই এখানে আর্ট পেপারগুলোতে চটপট লিখে ফেল। - কি লিখবো? - ইভেন্টের সাথে যায় এমন কিছু কথাবার্তাই লিখবি। যা মাথায় আসে তোর। মানে যুক্তির চর্চা, বিতর্ক - এসবের সাথে মিলিয়ে কিছু শ্লোগান লিখবি। আমি মুখ বাকিয়ে মার্কার হাতে নেই। তারপরই তন্ময় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি, - আর কাউকে ফোন দাও নি? - নিবিড় ভাইকে দিয়েছি। ভাই আসছে। হবে? আমি ভ্রু কুচকে ভাইয়ার দিকে তাকাই। - আমি কি উনার কথা জিজ্ঞেস করেছি নাকি? ভাইয়া কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার নাক টেনে দেয়। তারপর মুখ অন্ধকার করে ফেলে। একটা মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার কপালে হাত রাখে। - এই তুনু, তোর কি জ্বর আসছে? আমি খুব সহজ গলায় বলি, - না তো! - গা তো বেশ গরম। - বাইরে চড়া রোদ। এরমধ্যে হেঁটে আসলে গা একটু গরম হওয়া অস্বাভাবিক না। ভাইয়া আর কিছু না বলে কাজ শুরু করে। আমি লিখতে লিখতে আবার কথা শুরু করি। - এই যে এত্তগুলা পোস্টার লিখে দিচ্ছি, এরপর আমার জন্য কোন পারিশ্রমিক আছে? তন্ময় ভাইয়া মাথা তুলে হাসে। - তোকে এককাপ চা খাওয়াবো লেখা শেষ হলে। - সিরিয়াসলি? এত্তগুলা লেখার জন্য মাত্র এক কাপ চা? - বেশি হয়ে গেছে? তাহলে একটা এক টাকার ক্যান্ডি। আমি উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুলতে যাবো, এমন সময় বাইরে তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার আর তারপর কিছু মানুষের ব্যস্ত হৈচৈয়ের শব্দ। আমি আর তন্ময় ভাইয়া দ্রুত উঠে বের হই, কি হয়েছে দেখার জন্য।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড