মিথিলা রহমান
একদিন ছোটুকে স্কুল থেকে নিয়ে ফেরার পথে একটা বেড়ালের বাচ্চাকে দেখি। রাস্তার বেড়াল। গায়ের রঙটা সাদা-ই বটে! পথের ধুলোবালিতে রঙটা ময়লা হয়ে গেছে। না খেতে পেয়ে ম্যারাসমাস রোগীর মতো অবস্থা। কানের এক পাশে ছিলে যাওয়া চামড়া। হয়তো কেউ গরম ভাতের মাড় ফেলে দিয়েছিলো! গায়ের জায়গায় জায়গায় নোংরা লেগে আছে। পরিষ্কার করে নিলেই ঠিকঠাক হয়ে যাবে। ভাবলাম তুলে নিয়ে আসি। বেড়ালের থেকে চোখ সরিয়ে দেখলাম মানুষজন দেখছে ব্যাপারটা। টং দোকানের একজন বুড়ো হাসি হাসি মুখ করে জিগ্যেস করলেন,‘কি মা? লইবা নি?’ ছোটু হাত ঝাঁকিয়ে বলল, ‘বুবু, মামণি কিন্তু তোমাকে বকবে! এরেও ফেলে দিবে, ঘরে তো ঢুকাতে পারবা না’ আমি ছোটুকে চোখ রাঙিয়ে শাসিয়ে দিই। সে বড় না আমি বড়! বেশি বুঝে নাকি!
ধমক খেয়ে ছোটু চুপ করে রইলো। আমি বুড়ো লোকটাকে বললাম, ‘হ্যাঁ, নিবো’
লোকটা বেশ আগ্রহে বিড়ালটিকে একটা ব্যাগে ভরে দিলো। আমি ব্যাগটা হাতে নিলাম। বিড়ালটা মিউ মিউ ডাকছে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিলাম। একটা রিকশা ঠিক করে বাসায় চলে এলাম। সিঁড়ি বেয়ে উঠছি আর ভাবছি একে ঘরে ঢোকাই কি করে! ছোটু দৌড়ে তিনতলা বেয়ে চলে গেছে। বেল বাজিয়েছে। আমি দোতলার সিঁড়িতে ব্যাগটা নামিয়ে রেখে তিনতলায় উঠে যাই। মামণি দরজা খোলে। তারপর ছোটুর পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চেয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমি দরজা খুলে পা টিপে সিঁড়িতে বের হয়ে যাই। তাকে নীচতলায় রেখে এসেছি। এখন কায়দা করে ঘরে ঢোকাবার পালা। চুপিসারে ব্যাগটা নিয়ে ঢুকে পড়ি। বারান্দায় রেখে বারান্দার দরজা আটকে দিই।
রান্না ঘর থেকে খাবার জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে বাটিতে ঢেলে দিই সামনে। আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে খেয়ে নিতে বলি। খাবার পরে গোসল করিয়ে দেবো। কিন্তু ছোটুটা সব নষ্ট করে দেয়। কবে নাকি তাকে ফোনে গেইম খেলতে দিই নি। তার শোধ তুলে নিলো মাকে বলে দিয়ে। রাস্তার প্রাণীকে রাস্তাতেই ছেড়ে দিয়ে এলাম।
ওইটুকু ক্ষণের মায়াতেই সে যাবার বেলায় শেষ মিউ মিউ ডাকল। ভীষণ কষ্টে চোখে পানি চলে এলো।
মায়া বড্ড খারাপ জিনিস হে!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড