• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাতুল খন্দকারের তিনটি কবিতা

  অধিকার ডেস্ক    ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১২:২৬

কবিতা
ছবি : প্রতীকী

অবেলার বৃষ্টি

অবেলার বৃষ্টিতে ষ্টেশনে চায়ের কাপে আবার এভাবে দেখা হয়ে যাবে এতদিন পর কে জানতো। বুক পকেটে বড় যত্নে সঞ্চয় করা মুঠোমুঠো ভালোবাসা, ভালো থাকতে শিখে গিয়েছিলো তো। একা একাই। সেকি! তোমার চোখের পাতায় তিলটা ঠিক ওরকমই রয়ে গেছে। ঠোঁটের ঠিক উপরেই তিলটাও তাই। মুখ ভর্তি তিল! কত যে খেপাতাম আমি আগের জন্মের পাপ এগুলি। তুমি অভিমানে মুখ ফুলে রাখতে। বুঝতে না তিলগুলি দেখে মুগ্ধতা কাটতো না এক যুবকের। সেই প্রথম বরষার দিন ছাতা উড়িয়ে পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে আঙুলে আঙুলে আলতো প্রথম স্পর্শ। আবার ইচ্ছে করে স্পর্শ করার সাহস অর্জন। একসময় শক্ত হাতে হাত রেখে একসাথে হাত ধরে হাঁটার অঙ্গীকার। কতকিছু মনে করিয়ে দিলো আজ অবেলার বৃষ্টি। বিষম খেয়ে জানতে চাইলাম। ‘ছেলের বয়স কত হলো?’ তুমিও আচমকা ঘোর ভেঙে ইতস্তত বলতে লাগলে- ‘সাত হলো এবার।’ ওর নাম কি রেখেছি জানো। ‘রুদ্র!’ কিছুটা সময় বাকরুদ্ধ আমি। একসময় বৃষ্টি এলেই মুঠোফোনে চিঠি লিখতে- ‘রুদ্র, এখনই বেরিয়ে পড়ো। আমি আসছি বৃষ্টিস্নানে যাবো। আজ দিগন্তে হারাবো।’ আমার অনভ্যস্ত ঠোঁটে প্রথম বৃষ্টিচুম্বন। জানিয়েছিল খুব করে জীবন ছোট্ট নয়। তোমার সাথে একটা দীর্ঘ আলিঙ্গন একশো বছর বাঁচার সমান। আজ এতদিন পর তুমি আরেক রুদ্রকে নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তোমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের নামটা রেখেছো আমার নামে। হেরে গিয়েও ভালোবাসাগুলি বেঁচে থাকে হয়তো এভাবেই। ভেবেছিলাম তুমিই হেরে গেছো। আমি জিতেছি। আজ এতদিন পর। আবার এভাবে হারিয়ে দিবে বুঝিনি। আজ অবেলার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার ভীষণ জিততে ইচ্ছে করছে।

বিসর্জন

সেদিনের শেষ বিকেলের ট্রেনটা যখন ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিলো ষ্টেশন বুকের একটা পাশও খুব গভীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম দেবদারুর পাতায় ট্রেনের ঝাঁপটা বাতাস গিয়ে সোঁ সোঁ শব্দ সৃষ্টি করছিলো ঠিক যেন বিদায়ের সুর। দেবদারুর সবুজ পাতাগুলিতেই নয় শুধু হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে নরম প্রকোষ্ঠটিতেও ধাক্কা লাগছিলো। যেমন মাঘের দীর্ঘ রাতে কামড় বসায় তীব্র শীত। তেমন কাঁপন শিরায় শিরায় থেকে হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। সেই কাঁপন আমার আজও থামেনি। তোমার শেষ আবদার প্রতিবার ময়মনসিংহ যাবার সময় তোমাকে যেমন ট্রেনে ওঠিয়ে দিয়ে ট্রেন মিলিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতাম শূন্যে, তেমনি এবারও তোমাকে ষ্টেশনে রেখে আসতে হবে। আর তার ঠিক সাতদিন পর, আমাকেও ময়মনসিংহে আসতে হবে তোমার হলুদ সন্ধ্যার ঝলমলে আয়োজনে। প্রথম হলুদ ছোঁয়াটা আমাকেই দিতে হবে তোমার কপাল জুড়ে। একটাই শেষ ইচ্ছে তোমার। প্রথম হলুদ ছোঁয়াটা সবার আগে যখন দিয়েছিলাম তোমার কপালটায় খুব ফাঁকা মনে হচ্ছিলো ভিতর আকাশটা। যেমন ফাঁকা থাকে সমুদ্রের এপাশ থেকে ওপারের আকাশটা। এমন ফাঁকা এক জীবনে আর কখনও লাগেনি আমার। কেন মুখ ফুটিয়েই বলতে হবে, ভালোবাসি। আমি ভাবতাম তুমি বুঝতে। নতুন করে মুখে বলার কিছু নেই অবশিষ্ট। এই শহরের প্রতিটা অলিগলি চিনতো আমাদের চিনতো এই শহরের প্রতিটা অতন্দ্রপ্রহরী কখন আমাদের অভিমানের জল ভালোবাসার জল মিলেমিশে এক হয়। এই শহরের মেঘেরা বুঝতো কখন আমাদের রৌদ্রস্নান চাই কখন চাই বরষা। বুঝতো এই শহরের রিকশাওয়ালা নিয়ন আলোতে প্রতিটা কালো দীর্ঘ রাস্তা। ওরা বুঝতো কার চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা রোজ ছলছল করতো। কার বুকে এক আকাশ ভালোবাসা সকাল সন্ধ্যে পেখম মেলতো। তুমি বুঝতে না তা আমার বিশ্বাস হয়না। জরুরি তলবে তাজমহল রোডে ডেকে বললে- বাসায় যেতে হবে তোমার আজ শেষ বিকেলের ট্রেনেই ২৫শে মাঘ বিয়ের দিন ধার্য, না জানিয়েই পাকা কথা সবাই করেছে সম্পন্ন। আমি তখনও ঠাঁই দাড়িয়ে হাসিমুখে বলছিলাম গুরুজন সর্বস্ব। তুমি শুধু হাসি দেখতে পেয়েছিলে শেষ বিকেলের চিকচিক রোদে আমার চোখে ভালোবাসা দেখতে পাওনি একবারও সেই হিসেব আমি আজও মিলাতে পারিনি। হয়তো তুমিও আমার মতো গুরুজন সর্বস্ব ভেবে বিসর্জন দিয়েছিলে ভালোবাসা। তুমিও হয়তো বিশ্বাস করতে মুখেই কেন বলতে হবে- ভালোবাসার কথা। সেবার ময়মনসিংহ থেকে ফেরার পথে দেবদারুর পাতাগুলি মাতাল বাতাসে দুলতে দুলতে, ঘন কালো অন্ধকার আকাশটা গর্জন করতে করতে বারবার বলছিলো- বিসর্জন! সেথায় আরও বেশি ভালোবাসা থাকে।

অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি

যখন কবিতারা অভিমান করে। গানেরা আমার সুর ভুলে যায়। রাতের জোসনা অসহ্য ঠ্যাকে। বৃষ্টি হয় বিরক্তির কারণ। তখন বুঝে যাই- অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি। যখন দখিন জানালা জুড়ে লিলুয়া বাতাস শিরা উপশিরায় কাঁপন ধরায়। নিকোটিনের ধোঁয়াগুলি বিদ্রূপ হাসি হাসে আমায় দেখে। তখন বুঝে যাই- অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি। যখন শার্টের বোতাম এলোমেলো লাগিয়ে দিব্যি পুরো শহর টা ঘুরি। চুলগুলি ভীষণ উসকোখুসকো। ছাতাটা সাথে নিতে ভুলে গিয়ে কাঁকভেজা হয়ে ঘরে ফিরি। তখন বুঝে যাই- অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি। যখন সকালে নাস্তা করা হয়না। দুপুরে খাবারের থালাতে তর্জনী কাটতে কাটতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় কফির ধোঁয়ায় উষ্ণতা অনুভব না করে, হাত পা আমার ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তখন বুঝে যাই_ অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড