• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছোট গল্প: একজন নুরজাহানের গল্প

  শানজানা আলম

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৮
গল্প
ছবি : প্রতীকী

নুরজাহান ঘুমাতে যায় রাত পোনে-বারটার দিকে। বাসার সবার খাওয়া শেষ হলে সব গুছিয়ে যেতে বারটা বাজে মাঝে মাঝে। সাধারণত ঘুম থেকে উঠতে হয় সাড়ে ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে। উঠেই প্রথম কাজ রুটির জন্য আটা সিদ্ধ করা। ঢাকায় এই বাসায় আছে প্রায় তিন বছর। বাসার ম্যাডাম ভাল বলে অন্য বাসায় যাওয়ার চেষ্টাও করেনি। এর আগে যে বাসায় ছিল সেখানেও প্রায় আড়াই বছর। বারবার কাজ বদলানোটা ভাল লাগে না। বেতন ঠিক আছে, ঝামেলা কম। তাই এক জায়গায় থাকাই ভাল।

তার উপর অনেক দায়িত্ব। একটা ছেলে আছে সাত বছরের। স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে, তাই রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলো, আর যাওয়া হয়নি ওখানে। কিছু দিন আগে সেই স্বামীর মৃত্যু সংবাদে কেঁদে কেঁদে নাকের জল চোখের জল এক করেছে কতক্ষণ। ছেলেটা গ্রামে তার মায়ের কাছে থাকে। তাই মায়ের খরচ চালানোও ওর দায়িত্ব। ছোট দুইটা বোন আছে। গত বছর একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। সামনের ঈদে অন্য জনেরও বিয়ে দিবে সে। পাত্র ঠিক করে এসেছে গত কুরবানির ঈদে। ছেলেটা ঢাকায় জুতার দোকানে থাকে। আয়-ইনকাম ভালো, চেহারা-ছবিও একদম খারাপ না।

কিন্তু সে পড়ালেখা করে এমন মেয়ে চায়। তাই ছোটবোনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়ে এসেছে, আগে সেও কাজ করতো। এই বাসায় বড় সুবিধা হচ্ছে ঘর মোছা আর কাপড় ধোয়ার জন্যে একজন বুয়া আছে। তার সাথে গফসফ ও করা যায় আবার একটু এদিক-ওদিক হলে ঝারি দিতেও ছাড়ে না। যেন ওই মালিক এই বাসার। সারাদিনের প্রধান কাজ রান্না করা। তারপর আর তেমন চাপ থাকে না। তারপর ধীরে সুস্থে মোবাইল নিয়ে বসে, যেন রাজ্যের সব সমস্যা ওর একার। অবশ্য পরিবারের প্রধান টাকা ইনকামের মেম্বার হওয়ায় বাড়ির সবাই নুরজাহানের কথা বেশ গুরুত্ব দেয়।

সারাদিনের কাজের মধ্যে অর প্রিয় কাজ হল বাজারে যাওয়া। দোকানে যাওয়া, যতবারই পাঠাও কখনো না করে না। আর একটা কাজ খুব ভাল লাগে, বারান্দা দিয়ে মতি মিয়ার খোজ রাখা। মতি মিয়া নুরজাহান আগে যে বাসায় ছিল তার দারোয়ান। বাসাটা সামনেই। বাড়ি সিলেট। দেশে বউ ছেলে আছে।

তবু নুরজাহানের প্রতি একটা টান অনুভব করে। হয়ত ওর অসহায়তার গল্প শুনে, নাহলে ওর সাথে চাল, ডাল বাজারের হিসাব নেই বলে। মতি মিয়া ছাদে একটা রুমে থাকে। নিজেই রান্না করে। নুরজাহান যখন ওই বাসায় ছিল তখন ও নাকি মাঝে মাঝে রান্না করে দিত। আমি জিজ্ঞাস করতে বললো, ‘ আফু হেয় ভাত পোড়াইয়া ফালায়। মায়া লাগে দেইখা তাই কাপড় দিতে ছাদে উঠলে রান্না বসায়া দিয়া আইসা পরতাম।’ আমি থিসিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ওর গল্প শুনি, ওকে লক্ষ্য করি।

এই বাসার বারান্দা ভরা গাছ। তার ফাঁকে একটু জায়গা নুরজাহান আলাদা করে নিয়েছে। যেন ওই জায়গাটা একান্তই ওর। এখান থেকে মতি মিয়ার দিকে খেয়াল রাখা যায়। দিনের কাজ শেষে রাতে সিরিয়াল দেখতে বসে। যদিও সিরিয়ালের ‘কাইজা ফ্যাসাদ ‘ বেশি পছন্দ না। রোমান্টিকই তার ভাল লাগে। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আবার বিয়ে করবা না?’

এই প্রশ্নের উত্তরে হাসে বললো, ‘ না গো আফু, ওই ঝামেলায় আর আমি নাই। শুধু একটাই ইচ্ছা আছে, বাড়ির ঘরটা অনেক শরিক হওয়ায় ছোট হইয়া গ্যাছে। নিজে একটা ঘর যদি উঠাইতে পারি। পোলা তো যাইব আর কয়দিন পর বউ নিয়া আলাদা হইয়া।’

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড