• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনুবাদ কবিতা

নিজার কাব্বানির ‘আমার ভেতর যে নারীর চলন’

  অনুবাদক : রেশমী নন্দী

০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:০৭
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

আমার ভেতর যে নারীর চলন চায়ের কাপে ভেসে ওঠা ছবির অর্থ বুঝতে পারলে যে কেউ বুঝে যাবে তুমিই আমার প্রেম হাতের রেখা পড়তে পারলে যে কেউ দেখতে পাবে তোমার নামের চারটি অক্ষর ফুটে আছে সেখানে, অস্বীকার করা যায় যে কোন কিছু কেবল ভালবাসার মানুষের গায়ের গন্ধ ছাড়া, লুকিয়ে রাখা যায় যে কোন কিছু কেবল ভেতরে বাজতে থাকা প্রেয়সীর পদধ্বনি ছাড়া, তর্ক করা যায় যে কোন বিষয় নিয়ে কেবল তোমার নারীত্বের আকর্ষণ ছাড়া।

তোমায় কোথায় লুকিয়ে রাখবো প্রিয়ে? জ্বলতে থাকা বনভূমির মতো প্রকাশ্য আমরা দুজনেই ক্যামেরার চোখ তাক করে আছে আমাদের দিকে তোমায় কোথায় লুকিয়ে রাখবো প্রিয়ে? তোমাকে প্রচ্ছদ পাতায় বসাতে চায় সাংবাদিকরা আর আমাকে বানাতে চায় গ্রীক হিরো রটাতে চায় কুৎসা।

তোমাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? আমাকে নিয়ে কোথায় যাবে তুমি যখন শহরের সমস্ত রেস্তোরা মনে করে রেখেছে আমাদের মুখ হোটেলগুলোতে লেখা আছে আমাদের নাম ফুটপাতগুলো পর্যন্ত মনে করে রেখেছে আমাদের পায়ের শব্দ? সাগরমুখি বারান্দার মতো বিশ্বের কাছে আমরা উন্মুক্ত স্বচ্ছ পাত্রে রাখা দুটো সোনালী মাছের মতো দৃশ্যমান। আমার লেখা কবিতাগুলো পড়লে যে কেউ বুঝে যাবে এর উৎসস্থল, আমার বইয়ের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে খুব সহজেই যে কেউ পৌঁছে যাবে তোমার আঁখিনিড়ে, আমার বাড়ির ঠিকানা পাওয়া মানেই যে কেউ পৌঁছে যাবে তোমার ওষ্ঠাধরে, কেউ যদি আমার দেরাজ খোলে দেখতে পাবে, প্রজাপতির মতো সেখানে শুয়ে আছো তুমি, আমার কাগজপত্র ঘেঁটে যে কেউ জেনে যেতে পারে তোমার জীবন কাহিনী।

তোমার রহস্য কি করে আগলে রাখবো নারী শিখিয়ে দাও আমায় কি করে ঠেকিয়ে রাখবো এর প্রকাশ, কি করে হদিশ মিলবে বেগুণি বৃত্তাবৃত স্তনের কি করে আটকে রাখবো এর পাখা মেলা ওড়া শিখিয়ে দাও আমায়, বাক্য শেষের যতি চিহ্নের মতো তোমায় কি করে থামিয়ে দেবো, শেখাও আমায় তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টিতে স্নাত হয়েও ভিজে না যেতে শেখাও আমায়, মসলার গন্ধমাখা শরীরের সুবাসে তোমাকে খুঁজে পেতে গিয়ে সংজ্ঞা না হারাতে শেখাও আমায় মনোরম স্তনচূড়া থেকে গড়িয়ে পড়তে গিয়ে যেন ভেঙ্গে না পড়ি, শেখাও আমায়।

আমার ছোটখাট অভ্যাস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখো যে কলম দিয়ে আমি লিখি যে কাগজে আমি আঁচড় কাটি যে চাবির গোছা আমার হাতে থাকে যে কফিতে আমি চুমুক দেই নিজের জন্য যে টাই আমি কিনি, আমার লেখা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখো কারণ তোমার হাত দিয়ে যদি আমি লিখি, তা হবে অযৌক্তিক তোমার ফুসফুস দিয়ে যদি আমি শ্বাস নেই, তা হবে অযৌক্তিক, তোমার ঠোঁট দিয়ে যদি আমি হাসি এবং আমার চোখ দিয়ে যদি তুমি কাঁদো, তা হবে অযৌক্তিক।

কিছুক্ষণের জন্য আমার পাশে বোসো ভেবে দেখো ভালবাসার যে মানচিত্র তুমি এঁকেছ মোঘল বিজেতার মতো নিষ্ঠুরতায় আর স্বার্থপর নারীর মতো পুরুষকে আদেশ করে “হও..এবং সে তাতে বদলে যায়” আমার সাথে সাম্যে বিশ্বাসী মানুষের মতো কথা বলো, কারণ আমার দেশে আদিবাসীরা রাজনৈতিক নীপিড়নের খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠেছে আমি চাই না আবেগের খেলায় আমাকে তুমি দমিয়ে রাখো।

এমনভাবে আমার সামনে বসো যাতে তোমার দৃষ্টিসীমা নজরে আসে, যাতে আমার দুঃখের সীমা তুমি দেখতে পাও, যাতে তোমার জলসীমার শুরুটা দেখতে পাই আমি, এবং দেখতে পাই আমার জীবনসায়াহ্নের ক্ষণ? এমনভাবে আমার সামনে বোসো যাতে আমরা একমত হতে পারি আমার শরীরের কোন অংশে এসে তোমার বশীকরণের সমাপ্তি টানবে আর রাতের আঁধারে কোথা থেকে শুরু করবে তোমার যাত্রা? কিছুক্ষণের জন্য আমার সাথে বোসো যাতে আমরা একমত হতে পারি কিভাবে একে অপরকে ভালোবাসবো যেখানে তুমি আমার দাসী নও আর আমি তোমার জয় করা অসংখ্য উপনিবেশের একটা টুকরো নই যে এখনো- সেই সপ্তদশ শতক থেকে- তোমার স্তনের মোহ থেকে মুক্তি খুঁজছে, মিলছে না সাড়া মিলছে না সাড়া।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড