• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ এর ৫ম পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : হৃদিতা তুই এমন কেন

  তানভীর আলাদিন

১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৪৫
গল্প
ছবি : প্রতীকী

রিকশাটা হঠাৎ কষে ব্রেক করতেই আমার ভাবনার জগতে ছেদ পড়লো। মাঝ বয়সী আমার রিকশাওয়ালা তেড়ে গিয়ে অপর রিকশাওয়ালার সার্টের কলার চেপে ধরলো। তাদের তর্কাতর্কি থেকে বুঝলাম একে অপরকে চাপা দিয়ে পাশ কাটতে গিয়ে দুই রিকশার চাকায় লেগে গেছে। এসময় আমার রিকশার চালককে অপর রিকশার তরুণ চালকটা ‘রোহিঙ্গা’ বলেছে। রিকশার ক্ষতির চেয়ে মনে হচ্ছে যেনো তাকে রোহিঙ্গা বলাতেই তার বেশি ক্ষতি হয়েছে! সে তরুণ চালকটার গালে বসিয়ে দিলো একটা থাপ্পড়... ব্যাস, কেওয়াজটা বড় হতে লাগলো, সেই সঙ্গে পেছনে বাড়তে লাগলো যানজট। এবার আমি নামলাম, যুদ্ধংদেহী দু’জনকে দু’দিকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হলাম। আমার রিকশাওয়ালা ভ্যান-ভ্যান করতে-করতে আমাকে নিয়ে রিকশাটা টানতে লাগলেন। এবার আমার উদ্দেশ্যে বক্তব্য ছাড়লেন, স্যার আপনার লাইগা ওই শালার’পো বাইচ্ছা গেছেগা, হউরের পো’র কত্তো সাহস আমারে কয় রোহিঙ্গা?

আমি বললাম, রোহিঙ্গা বলাতে তুমি এমন ক্ষেপলা কেনো? তোমারে তো ‘মিয়ানমারের সেনাপ্রধান’ বলেনি? রোহিঙ্গারা তো নির্যাতিত, দেশ ছেড়ে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে? ওরা তো মজলুম, ওদের সঙ্গে তুলনা করাতে তুমি ক্ষেপলা।

রিকশাওয়ালা বলে- স্যার রোহিঙ্গাদের আমি পছন্দ করিনা, ওরা ভীরু, ওরা মইরতে শিখছে, মাইরতে শিখে নাই, হেরা নিজেগো বিপদের প্রতিবাদ না কইরা, মোকাবেলা না কইরা, উল্টা আমাগো ঘাড়ে আপদ হইয়া বইসা রইছে।

আমার ফোনটা বেজে ওঠতেই দেখি শানুদি’র ফোন। শানুদি আমার জেঠাতো বোন হলেও তিনি আমার আপন বড়বোনের চেয়ে বেশি, যদিও আমার আপন আর কোনো ভাই-বোন নেই। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর শানুদি’র বাসাটাই আমার ঠিকানা। তাছাড়া আমার মেয়ে শুভ্রা’তো শানুদি’র কাছে থেকেই বড় হলো। গত বছর পাঁচেক আগে শানু’দিইতো একটা চমৎকার ছেলের সঙ্গে শুভ্রা মা-মণির বিয়ে দিয়েছে। মেয়ে আমার এখন অনেক সুখি। না দেখি শানু’দির ফোনটা ধরি, ফোনটা ধরতেই- ‘অপু তুই কইরে ভাই?’

-শানু’দি আমিতো রিকশা চড়ে ঢাকা শহর দেখছি, কতো বদলে গেলো শহরটা. -আচ্ছা আজ আর দেখতে হবে না, বাসায় চলে আয়। -কেনো দিদি? কোনো বিশেষ প্রয়োজন? আমিতো সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো। -না, এখনই আয়, শুভ্রা মা-মণি বাসায় এসেছে, মনে হয় জিসানের সঙ্গে অভিমান করেই এসেছে, আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, তবে তার মন মেজাজ খারাপ, তা বেশ বুঝতে পারছি, তুই আয় ভাই, তারপর জানতে চাইবো - না দিদি, মনে হয় না, কারণ জিসান তো ঢাকায় নেই, দুই সপ্তাহের জন্যে তো জিসান বরিশাল গেছে। -আরে পাগলা, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মান-অভিমান করতে বরিশাল কেনো, আমেরিকাও ঘরের মধ্যে, তুই তাড়া-তাড়ি আয়, তোর মেয়েকেতো তোর চেয়ে আমিই ভালো চিনি, মেয়েটা হয়েছে ঠিক তার মায়ের মতো অভিমানি, ঠিক যেনো আরেকটা ‘হৃদিতা’! হৃদিতার মতোই ভাঙ্গে তবুও মচকায় না! তাই আমি ওকে ঘাটাতে চাচ্ছি না, তুই দেশে না থাকলে বিষয়টা আমিই খতিয়ে দেখতাম, এখন তুই যেহেতু আছিস বাপপাগলা তোর এই মেয়েকে তুই-ই সামলা। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় ভাই।

(চলবে...)

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড