• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিবন্ধ : গদ্যকবিতা ও পদ্যের পাঠক সংক্রান্ত বিভ্রাট

  একরাম আজাদ

২৮ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫৭
ছবি
ছবি: প্রতীকী

অন্য পাঁচ জনের মতন কবিতা বলতে আমিও বুঝতাম অন্ত্যমিল। অর্থাৎ পদ্যকে। এর জন্য অবশ্য আমাদের শিক্ষকদের দুর্বলতাই দায়ী। ছোটবেলা থেকেই আমিও অন্ত্যমিল দিয়ে দিয়ে এটা ওটা বানিয়ে ফেলে সহপাঠীদের চমকে দিতাম, আর নিজেকে নিয়ে গর্ব করতাম।

এ ভুল ভাঙতে আমার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার অব্ধি অপেক্ষা করতে হয়। তখনকার এসএসসি’র বাংলা সিলেবাসে অমিয় চক্রবর্তীর 'বাংলাদেশ' নামে একটা গদ্যকবিতা ছিল। খুব মজার বিষয় হলো পুরা বইয়ের এই কবিতাকেই আমি বারবার এড়িয়ে গিয়েছি। কোনোভাবেই মনে হয়নি এও একটি কবিতা। কেও প্রমাণ করতেও চায়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ময়ূখ চৌধুরী একদিন ‘সোনালী কাবিন’ নিয়ে পড়াতে ঢুকলেন। এক ঘণ্টার ক্লাসে তার লেকচার আর আবৃত্তি শুনে মনে হলো এতদিন আমি বা আমরা ভুল ছিলাম। মানে যাকে কবিতা বলে জানতাম তা স্রেফ পদ্যই ছিল। কবিতা জিনিসটা আরও বেশি কিছু। তাকে পড়তে হয় অন্য স্টাইলে। আর গদ্যকবিতা তো আরও টাফ জিনিস!

আমার বিশ্বাস, এখনও আশি শতাংশ পাঠক গদ্যকবিতা ( অমিত্রাক্ষরের কবিতাও) পড়তে জানেন না। তারা পদ্যের মতন করে সব কিছু আবৃত্তি করতে অভ্যস্ত। এখানে আবৃত্তি নিয়েও গোঁজামিল আছে আবার। কবিতা আবৃত্তি মানে যদি আপনি বুঝে থাকেন পর্বে বিভক্ত কিছু লাইনকে মাত্রা গুনে আওড়ানো, তবে আপনি কবিতা নিয়ে আরও পড়াশুনা করা উচিৎ। পারলে কোনো আবৃত্তি কর্মশালায় তালিম নিন।

ধরেই নিলাম স্কুলমাস্টারের পাঠ শুনে আপনি ‘বিদ্রোহী’ থেকে ‘বনলতা সেন’ পর্যন্ত পড়তে শিখে গিয়েছেন; কিন্তু ওর মধ্যেও যে রস বা ভাব অনুযায়ী স্বরের পরিবর্তন জরুরী তার কী হবে? নাকি ‘বিদ্রোহী’ যে স্বরে আবৃত্তি করেছেন সেইম স্বরে ‘কেউ কথা রাখিনি’ও চেঁচিয়ে যাবেন? আর গদ্যকবিতা? যেখানে মাত্রা-পর্বের তোয়াক্কা করে না? তার কী হবে?

আবৃত্তি বলতে কেউ কেউ মনে করেন, কোনো কিছু না-দেখে পড়া হলো আবৃত্তি। কিন্তু এখানে ঢের ভুল আছে। আবৃত্তি হলো কোনো কিছুকে তার যথার্থ মান বজায় রেখে পাঠ করাকে বুঝতে হবে। বিশেষত কবিতাটি কোন রসকে উদ্দেশ্য করে লেখা তা স্পষ্ট করে তোলে আনতে হবে। গম্ভীর গলায় রাজনৈতিক কবিতা আওড়ানোর মতো করে কোনো করুণ রসের কবিতা পাঠ কখনও আবৃত্তির পর্যায়ে পড়ে না। আর গদ্য কবিতা পড়তে হয় নির্দিষ্ট স্থানে থেমে থেমে, কবিতার বিষয়কে লক্ষ্য রেখে স্বর ঠিক করে। পর্বের ভিত্তিতে পড়তে গেলে আর যাই হোক গদ্যকবিতা বুঝে উঠা আপনার সম্ভব নয়। গল্পের মতন করে পড়ে তো নয়-ই।

সুর ছাড়া যেমন গান হয়ে উঠে না, আবৃত্তি ছাড়াও কবিতা হয় না। তাই কবিতা পড়তে যাবেন না, আবৃত্তি করুন।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড