ফারুকী গালিব
আজ মাসের একত্রিশ তারিখ। নিয়মানুযায়ী ত্রিশ তারিখের মাঝেই আমাদের বেতন দেয়ার নিয়ম। কিন্তু দেয়নি, আর পকেটে ফুটো পয়সাও নেই। তাই ভাবছিলাম কি করবো, কি কি করে সময় কাটাবো। ঘরে বসে কাটালে মামী হয়তো বলতে পারে কি আজ বাইরে কাজে গেলেনা কিংবা বস ও ঝাড়ি দিতে পারে তুমি টিম লিডার হয়েও বাসায় কেন? তাই তড়িঘড়ি করে কোন কিছু না ভেবেই ছুট দিলাম শ্যামলী পার্কে। এমনিতেই আমার কাজ ছিল ফিল্ডে, একটি ফোন কোম্পানির পোস্টপেইড গ্রাহকদের নাম ঠিকানায় গিয়ে বাসার ছবি তোলা, তার অভিযোগ শোনা এবং সর্বোপরি তিনি যে ভুয়া ঠিকানা দেননি তা যাচাই করা।
যা হোক যা বলছিলাম, দেড় কি.মি প্রখর রোদে হেটে শ্যামলী পার্কে পৌঁছেই দেখলাম ছায়ায় বসবার মত একটা বেঞ্চ ও খালি নেই। সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। অগত্যা রোদেই বসে থাকলাম একঘন্টা, যেন হাবিয়া দোযখে আছি এমন ফিলিংস। গাছের ছায়ার নীচে একটা বেঞ্চ খালি হতেই তড়িঘড়ি করে সেখানে বসে পড়লাম। বসে বসে বই পড়ছি এমন সময় খুব মোলায়েমভাবে একজন বলে উঠল "এক্সকিউজ মি, আমি কি এখানে বসতে পারি? চেয়ে দেখি ৬০-৬৫ বছর বয়সের একজন বৃদ্ধ। আমি ইশারায় বসতে বললাম। চারিদিকে হকাররা শশা, ডাব ফেরি করছে অথচ আমি গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার। তাই আমার মৃদুকন্ঠ তার কানে পৌছলো কিনা সন্দেহ! তিনি পাশে বসলেন এবং একটু ইতস্তত করতে লাগলেন। আমি বই বন্ধ করে তার দিকে চাইলাম। তিনি একবার আমার দিকে চেয়ে আরেকবার বইয়ের দিকে চেয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে বললেন। বুঝলাম ভদ্রলোকটি সদ্য রিটায়ার্ড করেছেন, কথা বলার মানুষ নেই তাই আমাকে পেয়ে একটানা বকে যেতে লাগলেন। এর মধ্যে চা ও সিগারেটওয়ালা এলে উনি নিজের জন্য চা নিয়ে সিগারেটের সাথে আনন্দে টানতে লাগলেন। সকালে নাস্তা করেছি কিন্তু সিগারেট খাইনি। বারবার সিগারেটের নেশাটা চাগাড় দিয়ে উঠছিল তাই বিদায় বলে উঠে চলে এলাম। শ্যামলী পার্কের পাশ দিয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে বিহারী ক্যাম্পের ভিতর দিয়ে হেটে আসতে লাগলাম। চারদিক থেকে বিরিয়ানী, পরোটা, গোশত লুচির লু হাওয়া নাকে এসে সুড়সুরি দেওয়াতে ক্যাম্প থেকেও চলে এলাম, এসে বসলাম রেসিডেনসিয়ালের পেছনে শাহজাহান রোড়ে। সময় যেন কাটতেই চায়না। অফিস থেকে ফোন দিয়ে বললো ৪ টায় স্যালারী দিবে অথচ এখন মাত্র দেড়টা বাজে। আমি উদাস দৃষ্টি হেনে সামনের দেয়ালে "সুবোধ তুই পালিয়ে যা " গ্রাফিতিটি দেখতে লাগলাম। এমন সময় একটা সাদা গাড়ী ফোস করে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল এবং একজন ছোকড়া ড্রাইভারের পাশের জানালা খুলে একটা জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে আবারও সাই করে চলে গেল। কি হল জানিনা হঠাৎ করে আমি দাড়িয়ে দু পা হেটে সিগারেটটার কাছে চলে গেলাম। সিগারেটটা তুলে দুটো টান দিব ভেবে একটু নীচু হয়ে দেখলাম সিগারেটটা প্রায় শেষ, তবুও লকলকিয়ে ধোয়াগুলো আকাশের পানে উড়ে চলেছে আর আমি ফাকা পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধোয়াগুলোকে অনুসরণ করছি।আর তীব্রভাবে অপেক্ষা করছি কখন সিগারেট টা নিভে যাবে, ধোয়া উঠা বন্ধ হবে, আমার আমার একাউন্টে স্যালারী ঢুকবে। অথচ সিগারেট নিভেনা, তার ধোয়া উঠা শেষ হয়না এবং আমার স্যালারীও একাউন্টে ঢুকে না। আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র ই ইকুয়াল টু এমসি স্কয়ার কে আরেকবার সত্য প্রমান করে আমার অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে, চলতে থাকে। যেন কোনদিনই শেষ হবার নয় এ অপেক্ষা!! অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা। একমুঠো ভাত, দুই পিস মাংস আর একটা সিগারেটের অপেক্ষা।
ওডি/
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড