নিশীতা মিতু
উত্তর মধ্য জার্মানির একটি শহর হামবুর্গ। এলবে ও আলস্টার নদীর তীর ঘেঁষে এই শহরটির অবস্থান। পূর্ণ নাম স্বাধীন হানজেয়াটীয় হামবুর্গ শহর। জার্মানির ২য় বৃহত্তম শহর এটি। হামবুর্গের মূল শহরে ১৭ লক্ষ মানুষের বাস। শহরের আয়তন প্যারিস শহরের ছয়গুণ।
আপনি যদি একজন ঐতিহ্য ও সুর সংগীতপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই জার্মানির এই শহরটির প্রেমে পড়বেন। বুকে নদী ধারণ করা হামবুর্গ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চলুন জেনে নেওয়া যাক-
দারুণ যোগাযোগ ব্যবস্থা
হামবুর্গে এত বেশি সেতু আছে যে, সেখানকার লোকেরা আর তা গোণেন না। যদিও পরিসংখ্যান বলছে শহরটিতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ সেতু রয়েছে যা সংখ্যায় আমস্টারডাম ও ভেনিসের সম্মিলিত সেতু সংখ্যার চেয়েও বেশি। ১৯৭৫ সালে এলবে নদীর ওপর নির্মিত কোলব্রান্ডব্রুকে নামের সাসপেনশন বা ঝুলন্ত সেতুটি শহরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। আলস্টার নদীর মোহনায় বাঁধ দেবার ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আলস্টার নামের দুইটি হ্রদ তৈরি হয়েছে।
১৮৪২ সালে একটি অগ্নিকাণ্ডের পর, বেশ অনেকগুলো সেতু পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। এরপর ইস্পাত আর গলিত লোহা দিয়ে সেতুগুলো তৈরি হয়।
স্রোতের তালে চলা
এলবে নদীর তীর ঘেঁষে এখানে দিনে-রাতে সবসময় নৌকা চলতে থাকে। সকাল বেলা নদীর উপকুলের ফ্যাঁকাসে বালুর ওপর দিয়ে যখন আপনি হেঁটে যাবেন, তখন এই নৌকাগুলোর সাইরেনের শব্দ আর গাঙচিলের ডাক মিলে অন্যরকম সুরের আবহ সৃষ্টি করবে। খোলা সমুদ্রের চেয়ে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে হামবুর্গ বন্দর অবস্থিত।
সংগীতে সেরা
হামবুর্গের একটি নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে বিশাল ধনুকের মতো দেখতে একটি জাহাজ দিগন্ত ছুঁয়ে পাল তুলে যাত্রা করে। পুরনো লাল ইটে নির্মিত একটি গুদামঘর রয়েছে তাতে। কোকোয়ার জন্য নির্মিত এই কাঁচের গুদামটি ১১০ মিটার উচ্চতা অব্দি উন্নিত। ২০১৭ সালে সেখানেই তৈরি করা হয়েছে কনসার্ট হাউজ। ভাবুন তো, অজানার উদ্দেশে ভেসে যাচ্ছেন আপনি আর কানে ভেসে আসছে নানা সুর। কেমন লাগবে?
রাজহাঁসের গান
জরাজীর্ণ শীত কাটিয়ে হামবুর্গে বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে সেখানকার শত শত রাজহাঁস। শীতের পর তাদের ফিরে আসা তদারকি করে সিটি কাউন্সিলের হাঁস অফিসার। শোয়ানেনওয়েসেন নামের এই ব্যক্তিটিকে ‘হাঁসের বাবা’ বা ‘সোয়ান ফাদার’ বলা হয়। সফেদ রঙা এই হাঁসগুলো যেন হামবুর্গের আভিজাত্যের প্রতীক। আর সেখানে তারা বিচরণ করে স্বাধীনভাবেই।
ঐতিহাসিক যত ভবন
হামবুর্গের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে রেনেসাঁস ধাঁচের সিটি হল। যা ১৮৯৭ সালে নির্মিত। ১২শ শতকের সেন্ট পিটারের গির্জা, ১৩শ-১৫শ শতকের সেন্ট জেমসের গির্জা, ১৪শ-১৫শ শতকের সেন্ট ক্যাথরিনের গির্জা এবং ১৮শ শতকের উঁচু চূড়াবিশিষ্ট সেন্ট মিখায়েলের গির্জা।
হামবুর্গের সংস্কৃতি
সংস্কৃতির নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে শহরটিতে। এর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কুনস্টহালে নামের জাদুঘর, ১৯ আর ২০ শতকের অসংখ্য চিত্রকর্মের বিরাট সংগ্রহ রয়েছে সেখানে। এছাড়াও রয়েছে হস্তশিল্প ও সজ্জাশিল্পের জাদুঘর। হামবুর্গ শহরে একটি জাতিতত্ত্ব জাদুঘর রয়েছে যেখানে দক্ষিণ সাগর, আফ্রিকান এবং সাইবেরীয় নিদর্শন আছে।
হামবুর্গের অর্থনীতি
জার্মানির প্রধান সমুদ্র বন্দর হিসেবে পরিচিত হামবুর্গ। এটি একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার জন্য বিশাল ব্যবস্থাবিশিষ্ট বন্দরটি রেলপথ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত। শহরটিতে একটি বিরাট মাছ ধরার নৌকাবহর আছে। রয়েছে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের বিরাট বিরাট কারখানা।
আরও পড়ুন : মেঘের রাজ্যে কিছুক্ষণ
আনন্দ সবসময়
হামবুর্গে গিয়ে আপনি মনমরা হয়ে বসে থাকার সুযোগ পাবেন না। খেলাধুলা, প্রদর্শনী, বাণিজ্য মেলা, রাস্তার ধারে নানা উৎসব— কিছু না কিছু এখানে চলতেই থাকে। অর্থাৎ এখানে গেলে আপনি পুরোটা সময় উপভোগ করতে পারবেন আনন্দে।
সামনে কোথাও ভ্রমণের কথা ভেবে থাকলে সেই তালিকায় রাখতে পারেন নদীর তীর ঘেঁষা জার্মানির এই শহরটির নাম। আনন্দে কাটবে সময়।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, হামবুর্গডটকম, ডিডব্লিউডটকম
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড