• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নওগাঁয় জয়িতাদের অজানা কথা

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১৪
পাঁচ নারীকে জয়িতার পুরস্কার ও সংবর্ধনা

নওগাঁর রাণীনগরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রতি উপজেলার পাঁচ নারীকে জয়িতার পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলার পাঁচ জয়িতা হলেন শিক্ষা চাকরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী কুমারী স্মৃতি রাণী মহন্ত, সফল জননী নাছিমা বেগম, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় মোছা. নাছরীন সিদ্দিকা, অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী মোছা. সানজিদা আক্তার তিষা ও নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মোছা. সাবিহা সুলতানা।

আমার খুব কম বয়সে বিয়ে দেয় আমার গরীব বাবা-মা। তখন থেকেই আমার স্বামী আমার প্রতি উদাসিন। এক পর্যায়ে আমার সংসার ভেঙ্গে যায়। তবুও আমি একটুও ভেঙ্গে না পড়ে প্রবল মনোশক্তি নিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করি। আমি বর্তমানে এমএসসি বিভাগে অধ্যায়নরত। এর পাশাপাশি আমি ব্র্যাকের এক স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছি। আমি সকল অভাব-অনটন, বাধা বিপত্তিকে পিছু ফেলে এগিয়ে যেতে চাই। সমাজে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের পুরুষ সমাজকে দেখাতে চাই নারীদের অবহেলা করা উচিত নয়। এভাবেই রাণীনগরের খট্টেশ্বর রাণীনগর গ্রামের খগেন চন্দ্র মহন্তের মেয়ে কুমারী স্মৃতি রাণী তার জীবন যুদ্ধের কথা বলছিলেন।

এদের মধ্যে অপর একজন জয়িতা মোছা. সাবিরা সুলতানা। বাড়ি বিলপালশা গ্রাম। বাবা মৃত-আবু বক্কর সিদ্দিক। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য তার উপর চলে নির্যাতন। এক সময় সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। গরীব বাবা বাড়িতে এনে তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ্য করে তোলেন। পরবর্তিতে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে আর নিতে আসেনি। সে বর্তমানে তালাকপ্রাপ্ত। সে পার্লারের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ গ্রামে বিউটি পার্লারের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। এছাড়াও সে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষন গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তার পার্লারে ৮-১০জন বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এখন সে খুবই ব্যস্ত এবং একজন সফল নারী।

অর্থনৈতিক ভাবে সফল জয়িতা কুজাইল দক্ষিন পাড়া গ্রামের সানজিদা আক্তার তিষা। নদীর তীরে স্বামীর পরিত্যাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সানজিদা। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও এখন নিজের সংসারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন। তার দেখে উৎসাহিত হচ্ছে আশেপাশের অন্য নারীরাও। উপজেলার ২নং কাশিপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামে ছোট যমুনা নদীর তীরে গেলে চোখে পড়বে সবুজে ঘেরা সবজি খেত। খেতের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পেয়াজ, রসুন, আলু, ধনিয়া, মরিচ ও মুলার গাছসহ নানা সবজির গাছ।

প্রায় ৩বছর আগে সানজিদা পার্শ্ববর্তি এক কৃষকের সবজি চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হোন। পুরুষেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না এই ইচ্ছে শক্তি থেকে সানজিদাও শুরু করেন নদীর তীরে তার স্বামীর পরিত্যাক্ত প্রায় ১৫শতাংশ জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজির চাষ।

সফল নারী সানজিদা বলেন, এক সময় সংসারের কাজকর্ম শেষ করার পর অলস বসে বসে সময় কাটাতাম। পাশের এক কৃষক নদীর তীরে তার জমিতে বছরের পুরো সময় কোন না কোন সবজি চাষ করতো। সেই কৃষক নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ করতো। তখন আমার মনে একটি জেদ কাজ করলো যে পুরুষরা পারলে আমি পারবো না কেন। তখন আমার স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে শুরু করি সবজি চাষ। সবজি চাষের প্রথম বছরে বাজারে আমার জমির মূলা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিলো। এখন তার দেখাদেখি গ্রামের আশেপাশের অনেক মহিলারা সানজিদার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তাদের পরিত্যাক্ত জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করা শুরু করেছে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার মাকাম্বাম মাহমুদা বলেন আমরা অনেক কষ্ট করে এই সফল নারীদের খুঁজে বের করে আনি। এই জয়িতাদের আমরা তেমন ভাবে সম্মানিত করতে পারি না। এই সমাজে আরো যারা নির্যাতিত ও অবহেলিত নারী রয়েছেন তারা এই জয়িতাদের জীবন যুদ্ধের সফল হওয়ার কাহিনী থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন। এদের দেখাদেখি তারাও এক সময় সমাজে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারবে। তবেই আমাদের এই কষ্ট সার্থক হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড