‘ভালো কাজের চেষ্টা থাকলে ভালো কাজ করা যায়’

পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার শেষ নেই। সঙ্গে আছে বিভিন্ন ভয় ভীতি। কিন্তু খারাপের মাঝেও যে ভালোর বিচরণ থাকে তার উদাহরণ তৈরি করেছেন তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এই এলাকার সাধারণ মানুষের মন থেকে পুলিশ ভীতি দূর করার চেষ্টা করে আসছেন প্রথম থেকেই। এলাকায় মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাস দমনের কাজও করেছেন। একাধারে ২৩ বার ডিএমপির শ্রেষ্ঠ ডিসি হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তারই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

প্রশ্ন : তেজগাঁওয়ের আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কেমন ছিল? বিপ্লব সরকার : আমি সব সময় পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। পুলিশ সদস্যরা যেনো জনগণের অনুভূতিটা ধরতে পারে সেই চেষ্টাই ছিলো। তারা যেনো আমাদের কাছে এসে ভরসা পায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থেকেছি। মানুষ আসলে সমস্যায় পড়ে থানায় আসে। থানায় এসে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা বলে। তাদেরকে ভালো সার্ভিস দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। অনেকেই আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। কেউ কেউ অল্প সন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার হয়ত অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। তবে আমার চেষ্টা ছিলও এই এলাকার মানুষদের পুলিশিং সেবার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করার। সন্ত্রাস দমন ও মাদক নির্মূলে কাজ করেছি। পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের কনস্টেবল, এসআইদের নিয়ে এসব কাজ করেছি। আমার একার পক্ষে কাজ করা কখনোই সম্ভব ছিল না।

প্রশ্ন : ডিএমপির একাধারে ২৩ বার শ্রেষ্ঠ ডিসি হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পান? বিপ্লব সরকার : শ্রেষ্ঠ ডিসি হওয়ার জন্য তো আমি কাজ করিনি। জনগণের সমস্যা নিবারণের জন্য কাজ করেছি। ভালো কাজের চেষ্টা থাকলে ভালো কাজ করা যায়। আর যখন ভালো কাজ করা হয়, তখন ভালো কাজের পুরস্কার পাওয়া যাবে। ভালো কাজ কখনও বৃথা যায় না। এর একটা রিওয়ার্ড আছে। আর যখন ভালো কাজের মূল্যায়ন পাওয়া যায়, পুরস্কার পাওয়া হয়, তখন অনুপ্রেরণা আরও বেড়ে যায়। তাছাড়া এটা আমার একার অবদান নয়। আমার কনস্টেবল, এসআই সবাইকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে হয়ত ভালো কিছু কাজ করতে পেরেছি। আমার সব সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

প্রশ্ন: একজন পুলিশ অফিসারের বদলির খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম। অনেকে আপনার বদলি যাতে না হয় এজন্য লেখালেখি ও করছে। পুলিশ অফিসারদের বদলি এমনটা স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় না। আপনার ক্ষেত্রে কেনো এমনটা হলো? বিপ্লব সরকার : দেখুন সরকারি চাকরিজীবীদের বদলি হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। এক জায়গায় তো আর স্থায়ীভাবে থাকা যায়না। তবে মানুষ হয়ত চেয়েছে এই এলাকায় আরও বেশি দিন থাকি। আমার প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা তা দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি। আমি তেজগাঁওয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বরত রয়েছি। এই এলাকার মানুষদের ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষ যদি বিন্দুমাত্র ও সন্তুষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি এলাকার মানুষ এবং পুলিশের মাঝে মেলবন্ধন করার চেষ্টা করেছি। সাধারণ মানুষের মন থেকে পুলিশ ভীতি দূর করার চেষ্টা ছিল সব সময়।

প্রশ্ন : শিশুদের নিয়েও আপনি কাজ করেছেন। এসব কাজ কেনো করেন? বিপ্লব সরকার : শিশু বলতে দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে কাজ করি। এরা আমাদের সমাজের বিশাল একটি অংশ। এই বিশাল অংশকে অবহেলিত রেখে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের পক্ষ থেকে যদি সামান্য কাজ করতে পারি, তাহলে হয়ত তারা আলোর মুখ দেখতে পারে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে দুঃস্থরা আর দুঃস্থ থাকবেনা।’ আমাদের সমাজে যারা বিত্তবান আছে তারা যদি প্রতিদিন একটা ক্ষুদ্র অংশও দুঃস্থ শিশুদের জন্য রাখি তাদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে। সমাজে বৈষম্য কমে আসবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

ওডি/এমএ