• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে কেমন চাপে পাকিস্তান?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ নভেম্বর ২০২০, ১১:৫৬
ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে কেমন চাপে পাকিস্তান?
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ছবি : দ্য ডন)

মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া ইস্যুতে পাকিস্তানের টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্য নিয়ে কিছুদিন যাবত দেশটির ভেতর ও বাইরে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বেসরকারি জিএনএন টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের ওপর চাপ রয়েছে।

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমেরিকায় ইসরায়েলের গভীর প্রভাব রয়েছে যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আরও বেড়েছে ... চাপটা সেখান থেকেই।

মধ্যপ্রাচ্যের ভাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশও কি পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে - এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলেও তা সামলে ইমরান খান উত্তর দেন, সব কথা সবসময় বলা যায় না। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো।

ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে কেউ কি পাকিস্তানকে কোনো লোভ দেখাচ্ছে? - এই প্রশ্নে বিব্রত ইমরান খান উত্তর দেন, বাদ দেন এসব প্রশ্ন, অন্য কথা বলেন। আমাদের দেশ যখন নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে, তখন এসব প্রশ্ন করবেন।

আরও পড়ুন : চীনকে রুখতে ভয়ঙ্কর সাবমেরিন বানাচ্ছে তাইওয়ান

যদিও পরপরই ইমরান খান বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ বিকিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি নিয়ে তিনি ভাবছেন না। যতক্ষণ না ন্যায়সঙ্গত এমন কোনো মীমাংসা হয় যা ফিলিস্তিনিদের মন:পুত হয় ততক্ষণ আমার ভেতর দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই।

অবশ্য সেই সাথে ইমরান খান বলেছিলেন, বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় আপোষ করতে হয়। নবীও বৃহত্তর স্বার্থে হুদাইবিয়ার চুক্তি করেছিলেন।

সাক্ষাৎকারটি প্রচারের সাথে সাথেই ইমরান খানের এসব কথা নিয়ে পাকিস্তানের ভেতর এবং বাইরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসরায়েলের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কথার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে।

হৈচৈ দেখে সাক্ষাৎকারটি প্রচারের দুদিন পরেই ১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানের সরকার বিবৃতি জারি করে বলে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের ওপর কোনো চাপ নেই। তবে তাতেও বিতর্ক আলোচনা থেমে নেই। বিশেষ করে 'ভাতৃপ্রতীম' মুসলিম রাষ্ট্রের কাছ থেকে চাপ তৈরির যে প্রশ্ন ইমরান খান এড়িয়ে গেছেন সেই দেশটিকে হতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে।

আরও পড়ুন : আফগানিস্তানে জোড়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত ১৪

পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক কানওয়ার খুলদুন শহিদ ইসরায়েলি দৈনিক হারেতজে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন। তার মতে, চাপ দিচ্ছে এমন যে ভাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশের নাম ইমরান খান করতে চাননি সেই দেশটি সৌদি আরব।

কানোয়ার শহিদ বলেন, তাদের ওপর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নির্ভরতার সুযোগ সৌদিরা নিতেই পারে। পাকিস্তানের প্রায় ২০০ কোটি ডলারের জরুরি ঋণ সাহায্য সৌদি আরব আটকে রেখেছে যা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ওই সাংবাদিকের মতে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে, কারণ তার মতে, সেনাবাহিনী মনে করে তাতে ভারত-ইসরায়েল কৌশলগত সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আনা যাবে। সৌদি আরবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানী ওই সাংবাদিক ইঙ্গিত করেন যে, সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও হয়ত সৌদি আরব ইসরায়েল নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান বদলের চেষ্টা করছে।

কিন্তু এই বিশ্লেষণের সাথে সবাই অবশ্য একমত নন। পাকিস্তানের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাসান আসকারি রিজভি বলেন, সৌদি আরব পাকিস্তানের ওপর এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে কতটা চাপ দিতে পারে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

আরও পড়ুন : অত্যাধুনিক সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল ভারত

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে, ফলে ওয়াশিংটন যদি এ নিয়ে পাকিস্তানকে কিছু বলে থাকে তাতে তিনি অবাক হবেন না।

'নানা কৌশলগত ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের সাথে অব্যাহত কথাবার্তা পাকিস্তানের হয়। সে সব যোগাযোগের সময় ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কিছু পরামর্শ, প্রস্তাব আসতেই পারে। এটাকে অনেকে চাপ হিসাবেও দেখতে পারেন ...আমি এতে বিস্মিত নই।'

তবে চাপ বা পরামর্শ যেটাই আসুক তাতে পাকিস্তানের সায় দেয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? হাসান রিজভি মনে করেন পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসরায়েল বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নেওয়া ইমরান খানের জন্য 'রাজনৈতিক আত্মহত্যা' হবে।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে কোনো চাপ বা পরামর্শে নিশ্চিতভাবে ইমরান খান স্বস্তি বোধ করবেন না। এমনিতেই দেশের প্রধান বিরোধ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে তিনি বড় ধরণের চাপে পড়েছেন। তার ওপর ইসরায়েলকে স্বীকৃতির যে কোনো ইঙ্গিতে কট্টর ইসলামি দলগুলোর যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা সামাল দেওয়া তার জন্য কঠিন হবে।

আরও পড়ুন : মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করার হুঁশিয়ারি ইরানের

তার মতে, এসব ইসলামি দলগুলো ভোটে না জিতলেও রাস্তায় অরাজকতা তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম। আমি কোনোভাবেই মনে করি না যে ইমরান খান এখন তেমন বিপদ ডেকে আনতে চাইবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড