• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মৃতদেহের সঙ্গে বাস করাই যাদের রীতি!

  ফিচার ডেস্ক

০২ আগস্ট ২০১৯, ১৬:০৭
মৃতদেহ
মৃতদেহকে এভাবেই পোশাক পরিয়ে রাখেন তারা; (ছবি- ইন্টারনেট)

মানুষ মরণশীল, প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় বা হবে। ইহজগত ত্যাগ করলে মানুষ হয়ে যায় শব। ভিন্ন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শবদেহকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার পাঙ্গালার রীতি পুরোই উল্টো। মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত নয় বরং তার সঙ্গে বসেই খাবার খাওয়া, গল্প করা এসব করা হয় সেখানে।

ঘাবড়ে গেলেন? সিনেমা বা রূপকথা কথা নয় বাস্তবেই সেখানে এমনটা হয়ে থাকে। আর এটাই সেখানকার রীতি। পরিবারের কারও মৃত্যু হলে তাকে সমাহিত করেন না তারা। মৃত ব্যক্তিকে প্রতিদিন গোসল করানো, তার পোশাক বদলানো এমনকি খাওয়ানোও হয় সেখানে।

ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সুলায়েসির পাঙ্গালায়। সেখানে বাস করে থোরাজা সম্প্রদায়ের মানুষ। মূলত খ্রিস্টান ধর্মের অধিকারী তারা। তবে তাদের বিশ্বাস ভিন্ন। তারা ছোট বেলা থেকেই এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছেন যে- মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয় বরং এটি জীবন যাত্রার একটি অংশ। আর তাই যুগ যুগ ধরে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করে আসছেন তারা।

থোরাজা সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, মৃত্যু মানেই আত্মার দেহত্যাগ নয়। কারও মৃত্যু হয়েছে মানে তিনি জীবিত আছেন কিন্তু ভীষণ অসুস্থ। আর এই অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটাচলা, খাওয়া এমনকি কথাও বলতে পারেন না। এই সম্প্রদায়ের কারোর আত্মীয় স্বজন মারা গেলে তারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বদলে বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করেন।

মৃত

মৃত প্রিয়জনের পোশাক বদলাচ্ছেন এক ব্যক্তি; (ছবি- ইন্টারনেট)

প্রথমে কফিনে প্রিয়জনের দেহ রাখা হয়। প্রতিদিন সময় করে মৃতদেহকে পানি, খাবার দেওয়া হয়। এমনকি জীবিত থাকতে যাদের ধূমপানের অভ্যাস ছিল, এমন ব্যক্তিদের মৃতদেহকে প্রতিদিন সিগারেটও দেওয়া হয়। প্রতিদিন সময় করে শবদেহকে পরিষ্কার করিয়ে নতুন পোশাক বদলানো হয়। সবকিছু এমনভাবে করা হয় যেন মৃত ব্যক্তি কখনো মনে না করেন যে পরিবারের বাকি সদস্যরা তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

মৃত

মৃতদেহকে নিয়মিত পরিষ্কার করা ও পোশাক বদলানোর কাজটিও করা হয় যত্ন সহকারে; (ছবি- ইন্টারনেট)

এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিন কফিনের ঢাকনা খুলে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্পও করেন তারা। কফিনে শুয়ে থাকা প্রিয়জন অর্থাৎ শবদেহ থেকে মেলে না কোনো উত্তর। এভাবেই কোনো পরিবার প্রিয়জনকে এক সপ্তাহ, কোনো পরিবার এক মাস নিজেদের কাছে রাখেন। যাদের সামর্থ্য বেশি তারা এক বছরও রেখে দেন। কারণ মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। শবদেহকে ঠিক রাখতে প্রয়োজন পড়ে নানা রাসায়নিকের।

এরপর আসে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্ব। এ সময় মহিষ বলি করা হয়। থোরাজাদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর মহিষই তাদের স্বর্গের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাস, মহিষের পিঠে চেপেই স্বর্গে যান তারা। আর তাই মৃত ব্যক্তির জন্য অন্তত একটি মহিষ বলি দেওয়া বাধ্যতামূলক।

একটি মধ্যবিত্ত পরিবার একজন মৃত ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ২৪টি মহিষ বলি দেন। সামর্থ্য থাকলে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। মহিষ বলিদানের এই পর্বটিকে থোরাজারা ‘রাম্বু সোলো’ বলে থাকেন। তাদের কাছে প্রথম বলি দেওয়া মোষের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার অর্থ হলো, প্রিয়জনেরও মৃত্যু।

তাদের বিশ্বাস, এরপর যত বেশি মহিষ বলি দেওয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তির আত্মা স্বর্গে পৌঁছাতে পারবে। অবশ্য, দরিদ্ররা একটি মহিষই বলি দেন। বলির পর ওই মহিষের মাংস উপস্থিত আত্মীয় স্বজনদের খাওয়ানো হয়।

মৃত

মৃতদেহের সামনে রাখা হয় খাবারও; (ছবি- ইন্টারনেট)

মৃতদেহকে কবর দেন না থোরাজারা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে মৃতদেহ সমেত কফিন কোনো নির্দিষ্ট গুহায় রেখে দেওয়া হয়। তারপরও প্রিয়জনকে ভুলেন না তারা। বছরে একবার সেই গুহায় পরিবার পরিজন সবাই জড়ো হন। তখন মৃতদেহকে কফিন থেকে তুলে নতুন পোশাক পরানো হয়, খাওয়ানো হয়।

আর এভাবেই মৃতদেহের প্রতি তাদের সম্মান জানানোর রীতি চলতে থাকে।

সূত্র- বিবিসি

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড