• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লড়াই করুন, ভালো থাকবে সম্পর্ক!

  নাবিলা বুশরা

২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৩৩
সম্পর্ক
সুন্দর সম্পর্কের জন্য কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকাও প্রয়োজন (মডেল: বাঁধন, তাহেরা; ছবি: আল-আমিন পাটওয়ারী)

'কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া...'

কথাটা গানের লাইনের হলেও বাস্তব জীবনের সত্য আসলে এটাই। আমরা সবাই ভালোবাসা চাই, ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে চাই। সারাজীবন একসাথে পথ চলে, সুখ-দুখের সঙ্গী হয়ে জীবন কাটিয়ে হয়ত মরতেও চাই। কিন্তু আসলেই কি এমনটা হয়? যতই প্রেমের গান শুনি, যতই ভালোবাসার গল্প বলি, আদৌ ভালোবাসা কতদিন পর্যন্ত টিকে থাকে? সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস কতটা সময় অটুট থাকে? অনেক সময় দেখা যায় ছোট ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুইজনের চলার পথ ভিন্ন হয়ে যায়।

রাহাত আর সুপর্নার গল্পটাও এমন। কলেজ জীবনে দুইজনের বন্ধুত্ব, এরপর প্রেম, প্রেমের পরিণয় হয় বিয়েতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে দুইজনের চাকরীজীবন, আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো-সবই চলছিল ঠিকমতই। কিন্তু সংসারে দুইজনের চলতি পথেই কোথায় যেন সুরটা কেটে গেছে। রাহাতের মনে হচ্ছে সুপর্না বদলে গেছে। আর সুপর্নার মনে হচ্ছে আজকাল রাহাত বড্ড বেশি কাজপাগল হয়ে যাচ্ছে। আগের মত তাদের ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে না, বন্ধুদের মাঝে গিয়ে দেয়া হচ্ছে না আড্ডাও। জীবন-পালে হাওয়া লাগাতে মরিয়া দুজনেই, কিন্তু কে সেই পাল উড়িয়ে দেবে তাই যেন ঠিক করা হচ্ছে না। আর এভাবেই দুজনের ভেতর বাড়ছে দূরত্ব। আর এই দূরত্ব একসময় গিয়ে দাঁড়াল দুইজনের মুখ না দেখাদেখিতে। ফলাফল পথ ভিন্ন, ঘর ভিন্ন। কিন্তু মন? তার খবর কি কেউ রেখেছে?

মুদ্রার অপর পিঠের গল্প সাহাল আর রুবানার। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় দুজনের। নতুন জীবন শুরুর আগে দুইজন দুইজনকে জানার সময় পাননি সেভাবে। বিয়ের পর রুবানা জানতে পারেন সাহালের আগে একটি সম্পর্ক ছিল যার দীর্ঘতা ছিল প্রায় চার বছরের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই প্রেম সাহাল ভুলতে পারছে না কোনোভাবেই। আর রুবানা সবকিছু জানে ব্যাপারটাও সাহালকে বেশ কষ্ট দিচ্ছিল। রুবানা মুখে কিছু না বললেও মাঝে মাঝে তার কথায় কিছুটা দ্বিরুক্তি প্রকাশ পায়। দুজনের মাঝে দ্বন্দ্ব চলে আসে। ঠিক তখনই সাহাল ভাবে ব্যাপারটা নিয়ে রুবানার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন। এদিকে রুবানার মাঝেও এই ভাবনা। সাহালকে বারবার এভাবে অপ্রস্তুত হতে দেখে রুবানাও তার সাথে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমদিকে দুজনের ভেতরেই ব্যাপারটা নিয়ে অস্বস্তি কাজ করলেও কিছু সময় পর সাহাল বেশ স্বাভাবিকভাবেই রুবানার সাথে খোলাখুলি ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে। সবকিছু মন দিয়ে শোনে রুবানা। সব কথা শেষে সে সাহালের হাত ধরে শুধু একটা কথাই বলে, 'সবকিছু ভুলে নতুন করে আমায় নিয়ে পথ চলতে পারবে না সাহাল?' এই একটা কথা, একটা ভরসাই বদলে দিয়েছিল রুবানা-সাহালের জীবন। আজ তাদের ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবন। মাঝেমধ্যে ছোট কিছু বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলেও আলাদা হয়ে যাওয়ার মত সিদ্ধান্ত কখনও তাদের নিতে হয়নি।

আমাদের চারপাশে এমন সাহাল, রুবানা, রাহাত, সুপর্নারা রয়েছে। আমরা কারও কথা জানি, অনেকেরটাই জানি না। একটা সম্পর্কে আসলে বিশ্বাস আর ভালোবাসার জায়গা অনেকখানি। তবু জীবনের পথে চলতে চলতে অনেক বাধা আসবে, কষ্ট আসবে, সবকিছু ছেড়ে, সবাইকে ছেড়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সবকিছু থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পর্কে উত্থান-পতন থাকবে, আবার সেটা থেকে বের হয়ে আসার চিন্তা করতে হবে নিজেদেরকেই। এমনটাই বিশ্বাস করেন নিউ ইয়র্কের ডা. লেস আর ডা. লেসলি। ডা. লেস আমেরিকার নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর। অলিভেট ইউনিভার্সিটির 'সেন্টার ফর হেলদি রিলেশনশিপ'র প্রতিষ্ঠাতাও এই দম্পতি। সম্পর্কের দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করেন তারা দুইজন। তাদের মতে, সম্পর্কে যদি ঝগড়া না হয়, মনোমালিন্য না হয় তবে সেটা আসলে খুব বেশিদিন টিকেই থাকে না। তবে এর রেশ খুব বেশি হওয়া যাবে না একদম। দুইজনের দিক থেকেই কিছুটা কম্প্রোমাইজের বিষয় থাকতে হবে। একজন যদি উদাস হয়ে যায়, আরেকজনকে হাত ধরতে হবে। যদি একজন খুব বেশি রেগে যায় তাহলে আরেকজনকে সেই সময়ে হতে হবে একদম ধীর আর স্থির।

লেস বলেন, মনোমালিন্য হচ্ছে একটি সম্পর্কে ফুয়েল দেওয়ার মত ব্যাপার। একটা বিয়ের সম্পর্কে দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ কখনোই এড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় নয়। তবে হ্যাঁ এটা দীর্ঘ সময়ের জন্যেও নয়। যদি ঠিকভাবে সামলানো যায়, তাহলে এটিই হতে পারে সম্পর্ক স্থায়ী করার একটা অনন্য পন্থা। দ্বন্দ্ব সম্পর্কের সত্যকে সামনে নিয়ে আসে আর আমরা নিজেদের ঠিক সে সময়েই চিনতে পারি। আমেরিকান-খ্রিস্টান লেখক রুথ গ্রাহামকে যখন নিজেদের ভেতর লড়াই নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি বলেছিলেন, 'অবশ্যই লড়াই কার্যকরী! নইলে আমার আর আমার স্বামীর মাঝে কোনও ভিন্নতা থাকত না, জীবন একদম বোরিং হয়ে যেত!' আমি আর লেসলিও এমনটাই ভাবি। আসলে সম্পর্কের ভিতটাই এমন।

স্বামী-স্ত্রী দুইজন দুইজনকে যতই ভালোবাসুক না কেন তাদের ভিতর অবশ্যই দ্বন্দ্ব থাকা চাই! এটা আসলে একটা বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য খুব জরুরি।

কাজেই ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসুন। কিন্তু নিয়ম মেনে লড়াইটাও করুন!

তথ্যসূত্র: ফোকাস অন দ্য ফ্যামিলি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড