• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক অবমূল্যায়নের পরিচয় মেলে যে ছবিতে

  মো. সাইফুল ইসলাম

১২ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০৪
ছবি
ইলিয়া রেপিনের আঁকা ছবিটি; (ছবি- সংগৃহীত)

বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালুর পূর্বে নৌকা ও প্রমোদ তরীগুলো চালানো খুবই কঠিন ছিল। একসময় ঘোড়া, গাধা ও খচ্চর দিয়ে নৌকার গুণ টানানো হতো। ইউরোপের অনেক দেশ যেমন নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামের কিছু কিছু এলাকায় প্রাণীর দ্বারা নৌকার গুণ টানা হতো। এ সকল প্রাণী পণ্য ও যাত্রীবাহী ছোট ছোট নৌকা টেনে নিয়ে যেত।

পানির ওপর ঘর্ষণ বল কম কাজ করে। তাই গাড়ি ব্যবহার না করে নৌকা ব্যবহার করায় একটি ঘোড়া স্বাভাবিকের চেয়ে পঞ্চাশ গুণ বেশি মালামাল পরিবহন করতে পারতো।

সাধারণত নদীর তীর দিয়ে প্রাণীর দ্বারা গুণটানার জন্য পথ তৈরি করা হতো। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে প্রাণী নিয়ে যাওয়া নিষেধ ছিল। তাছাড়া নদীর তীরে গুণটানার উপযোগী পথ ছিল না। সে সময় মানুষই গুণটানার কাজ করত। আমাদের দেশেও নদ-নদীগুলোতে মাঝিরা একসময় গুণটানা ছোট ছোট নৌকা চালিয়ে মাছ ধরত। এছাড়াও পালতোলা নৌকায় বায়ু প্রবাহ না থাকলে গুণ টানত।

রাশিয়ার সাম্রাজ্যের সময় ভলগা ও এর শাখানদীতে বিশালাকার মালবাহী নৌকা চলত। এই নৌকাগুলো মানব শ্রমিকদের দ্বারা গুণ টেনে চালানো হতো। যারা গুণ টানতেন তাদের বলা হতো বারলাকি। নৌকা টানার এই কাজ খুব একটা সহজ ছিল না।

খুবই কঠিন কাজ হলেও ভলগা নদীর আশপাশের প্রতি হাজারে দশ জন লোক এই পেশার সাথে জড়িত ছিল। অধিকাংশ গুণ টানার শ্রমিকরা ছিল ভূমিদাস, ক্রীতদাস ও কৃষক। এরা আবার সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কোনো মালিক বা প্রভুর অধীনে কাজ করত। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হলেও অনেক অনেক শ্রমিকই স্বেচ্ছায় নৌকা টানার কাজে যোগ দিত।

আমরা বর্তমানে মাত্র ৮ ঘণ্টা কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠি। কিন্তু বারলাকিদের কাজের সময় জানলে অবাকই হতে হবে। এরা একটানা ১৮ ঘণ্টা কাজ করতো! কিন্তু খাটুনির তুলনায় খুবই কম মজুরি পেত। মজুরি কম পেলেও কাজ করতে হতো। কারণ এদের খুব বেশি টাকার প্রয়োজন ছিল।

টাকার জন্য যারা হাড়ভাঙা শ্রম বিক্রি করতেন তারা আদৌ শ্রমের মূল্য পেতেন না। গুণটানা বারলাকিদের অনেককেই জোরপূর্বক সারাবছরের জন্য একবার মজুরি দিয়ে ভাড়া করা হতো। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে একসময় গরুর রাখাল রাখার প্রচলন এমন ছিল। যেখানে স্বল্প টাকায় সারাবছর কাজ করতে হতো।

যেহেতু সারাবছরের জন্য ভাড়া করা হতো তাই শীতের মৌসুমে যখন সবকিছুর দাম কমে যেত তখন ভাড়া করা হতো। এতে অনেক গুণটানা শ্রমিক অগ্রিম টাকা নিত। এদের মজুরি আবার দেওয়া হতো বছর শেষে। তাই অধিকাংশ বারলাকিরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরত।

গুণটানা শ্রমিক তথা বারলাকিদের কষ্টকর জীবনের ছবি জনসম্মুখে নিয়ে আসেন ইলিয়া রেপিন নামক রাশিয়ার একজন চিত্রশিল্পী। ‘Barge Haulers on the Volga’ নামে একটি ছবিতে তিনি পুঁজিবাদী সমাজে ধনীক শ্রেণির শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। রাশিয়ার ইতিহাসে যতগুলো কাজ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল ইলিয়া রেপিনের ছবিটি তার মধ্যে অন্যতম ছিল। ছবিটিতে দুর্বল, অসহায় গুণটানাদের কষ্টকর ছবি তুলে তিনি তৎকালীন সামাজিক ব্যবস্থার সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- ভিলা জিরাসল : সূর্যের আলোর দিকে ঘুরে যায় যে বাড়ি!

ইলিয়া রেপিন মূলত বাইবেল থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর ছবি তুলতেন। কিন্তু একদিন হঠাৎ তার চোখে ভলগা নদীর বারলাকিদের নৌকা টানার দৃশ্য চোখে পড়ে। তখন তিনি সেখানে তাদের অবলোকন করে তার ব্যাপক আলোচিত ছবিটি অঙ্কন করেন।

তাছাড়াও ধর্মীয় ছবি অঙ্কন করা থেকে হঠাৎ এমন একটি ছবিতে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র, ধনী শ্রেণির শ্রমিক ঠকানোর গল্প, গরিব-দুস্থদের চিত্র ফুটিয়ে তোলার বিষয়টিও সবার মাঝে সাড়া ফেলেছিল। ছবিটি ১৮৭৩ সালে প্রথম জনসম্মুখে আনা হয়েছিল। ১৯১৮ সালের পর থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার জাদুঘরে ছবিটি সংরক্ষিত আছে।

সূত্র- অ্যামিউজিং প্লানেট, কালচার ট্রিপ

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড