• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দাসপ্রথার প্রাচীনকথা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

  ফিচার ডেস্ক

০২ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৩৮
ছবি
ছবি : সংগৃহীত

একবার ভাবুন তো আপনাকে কেউ গোয়ালঘরের গরুর মতো বেঁধে রেখেছে, যাতে আপনি পালাতে না পারেন। কিংবা ঘোড়সওয়ার যেভাবে ঘোড়াকে চাবুক মারে সেভাবে আপনাকে কেউ চাবুক মারছে। হ্যাঁ, ঠিক এমনই ছিল একসময় পৃথিবীর একদল মানুষ যারা মানুষকে অর্থের বিনিময়ে দাস বানিয়ে রাখত আর গরু ও ঘোড়ার মতো ব্যবহার করত। ২৩ আগস্ট ১৯৪৯ সালের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাসত্ব বিলোপ করতে বিশ্বব্যাপী দাসপ্রথা ও ব্যবসা নিষিদ্ধকরণের ওপর কনভেনশন গৃহীত হয়। এজন্য দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক দাসত্ব বিলুপ্তি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মানব পাচার, যৌন দাস, জবরদস্তিমূলক শিশু শ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে, যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।

দাসত্ব বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তে দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তার আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে। দাসদের অনুমতি ব্যতিরেকে স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার, বা শ্রমের মজুরি পাওয়ার অধিকার নেই। কিছু সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করা আইনসংগত, এবং অন্যান্য স্থানে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

দাসত্ববিরোধ আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কি প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জোরপূর্বক শ্রম দেওয়াকে দাসত্ব হিসেবে ধরে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী।

এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে পরবর্তী অর্থ শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস। মানুষ পরিবহন মূলত হয়ে থাকে নারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় ব্যবসায় খাটানোর জন্য। এটিকে বর্ণনা করা হয় ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দাস বাণিজ্য’ হিসেবে।

অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করার কারণে একই সাথে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অপরাধ ক্ষেত্র। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনা বেচার একটি প্রথা ছিল। যা দ্বারা বিভিন্ন মূল্যের বিনিময়ে মানুষ কেনা যেত। এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে। দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হতো। বর্তমানে যেমন পণ্য বেচা কেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী বিক্রি অথবা ক্রয় এর জন্য আলাদা বাজার ছিল। তখন দাসদাসী আমদানি এবং রপ্তানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো এবং এটা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ত। সাধারণত দাসদাসীরা আফ্রিকান হত। আফ্রিকান দাসের মধ্যে হাবশি ও কাফ্রির চাহিদা ছিল বেশি। বাংলায় এসব দাসদাসী ৫ থেকে ৭ টাকায় কেনা যেত এবং স্বাস্থ্যবান দাস প্রায় ২০ থেকে ২২ টাকায় কেনা যেত ।

দাসদের দিয়ে ২ ধরনের কাজ করানো হতো— কৃষি কাজ এবং গার্হস্থ্য কাজ। তখন সমাজে গুটি কয়েক দাস রাখা একটি সামাজিক মর্যাদার ব্যাপার ছিল। তাছাড়া উচ্চ বিত্তরা তাদের দাসদের দিয়ে বিভিন্ন কৃষি কাজ করাতেন। যেমন: হালচাষ, সেচের পানি, মাটি উর্বর করানো, গবাদি পশু পালন, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজ করত। দাসীদের সাধারণত রাখা হতো যৌন লোভ লালসা পূরণ করার জন্য। তাদের উপপত্নী করে রাখা হত এবং তাদের সন্তানদেরও দাস রূপে রাখা হতো বা বিক্রি করা হতো। ব্রিটেনের সরকার এই দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে এবং ১৮৪৩ সালে অ্যাক্ট ফাইভ আইন দ্বারা দাসদাসী আমদানি ও রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো আজও পৃথিবী থেকে দাসপ্রথা উঠে যায়নি, দাসপ্রথার ধরন বদলে গেছে মাত্র। হয়তো বা আরও ২০০-৩০০ বছর পর এই সময়ের দাসপ্রথা কতটা নির্মম ছিল তা নিয়ে আলোচনা হবে, যেমন আমরা এখন ২০০-৩০০ বছরের পূর্বের দাসপ্রথা নিয়ে আলোচনা করি।

তথসূত্র- পয়েম ভেইন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড