• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্কুলের দারোয়ান থেকে অধ্যক্ষ

  ফিচার ডেস্ক

১২ জুন ২০১৯, ১৮:৪৫
মাইকেল এটকিন্স
মাইকেল এটকিন্স জন্ম দিয়েছেন নতুন প্রেরণার। (ছবি : বিবিসি)

পৃথিবীতে মানুষের পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জনের অনেক গল্প রচিত হয় নিত্য। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যা সব সময়ের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে যায়। এমনই একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছেন মাইকেল এটকিন্স নামক স্কুলের এক দারোয়ান। যেই স্কুলের দারোয়ান হিসেবে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘ সময় সেখানেই নিজের একাগ্রতা আর পরিশ্রমের ফলে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন সম্প্রতি।

ব্যতিক্রমি এই ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেডম্যান এলমেন্টারি স্কুলে। মাইকেল এটকিন্স এই স্কুলে দীর্ঘ দিন প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সাফল্যের যাত্রাটা খুব সহজ ছিল না। বরং অন্যান্য সবার চেয়ে একটু বেশিই কঠিন ছিল। তার এই সাফল্যের পেছনে অবশ্য অবদান রয়েছে তার প্রাথমিক স্কুল জীবনের এক শিক্ষকের। সেইসাথে সাথে এমন কিছু বন্ধুর যাদের কাছে এটকিন্স সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।

ডেনভারের লোয়ারি এলমেন্টারি স্কুলে চাকরি শুরু করেন মাইকেল এটকিন্স। এখানে চাকরির আগে আরও কয়েকটি স্কুলে তিনি রক্ষী বা কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জীবনের শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকমই। প্রাথমিক স্কুলের পড়ালেখাটা তিনি বেশ ভালমতো উপভোগ করলেও একটা সময়ে এসে তার জন্য কিছু বিষয় মানিয়ে নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তিনি লক্ষ্য করতেন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে কিছু শিক্ষক পক্ষপাতমূলক আচরণ করতেন। তারা দেখতে কেমন, এসেছে কোথা থেকে এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষকরা ভেদাভেদ করতেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। এই ব্যাপারগুলো তাকে খুবই পীড়া দিত।

হাইস্কুল শেষ করার পর সঠিক নির্দেশনার অভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন এটকিন্স। উচ্চশিক্ষা কিভাবে গ্রহণ করবেন সেটি দেখিয়ে দেবার মতো তার পাশে তখন কেউ ছিল না। এমনকি তার পরিবারেও এমন কেউ ছিল না যে তাকে গাইড করতে পারে। কাজেই পড়াশোনা শিকেয় তুলে চাকরিতে ঢুকে যান।

কিছুদিন পর অবশ্য বুঝতে পারেন তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এখনো আছে। কাজেই চাকরি করার পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়ে যান স্টেট কলেজে। এরমধ্যে তিনি বিয়ে করে সন্তানের পিতা হয়ে পড়েন। যার ফলে উপার্জন বাড়ানোটা জরুরী হয়ে পড়ে তার জন্য। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বাবা হয়েছিলেন মাইকেল এটকিন্স।

তার মধ্যে অদ্ভুত একটা গুণ ছিল। শিশুদের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারতেন মাইকেল। এই গুণটি পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকে। তার মা কাজ করতেন একটি ডে কেয়ার সেন্টারে। এই গুণটিকে পুঁজি করে তিনি কাছের একটি স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করেন। সেই সাথে স্কুলে পার্ট টাইম ব্যবসা শিক্ষার ক্লাস করার অনুমতির আবেদনও। কিন্তু সেই চাকরিটা তার হয়নি। এতে করে মন খারাপ করে ভেঙে পড়েন নি তিনি।

এরপর বেশ কয়েকটি স্কুলে চেষ্টা করে সেসব স্কুলের কেয়ারটেকারের কাজ জুটিয়ে নেন মাইকেল এটকিন্স। এমনই একটি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন তার দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন শিক্ষিকা। তার মাধ্যমে তিনি সেই স্কুলে একটি ভালো কাজ পেয়ে যান। স্কুলের রিডিং ও রাইটিং প্যারা প্রফেশনালের পদে যোগ দেন মাইকেল এটকিন্স। ক্যারোলিন রেইডলিন যাকে মিসেস ব্রাউন বলে ডাকা হয় তার এই মহত্বের জন্যই একটি চমৎকার ঘটনার জন্ম হয়েছে।

এরপর আর পেছন ফিরতে হয়নি মাইকেল এটকিন্সকে। ধীরে ধীরে নিজের পরিধি ছাড়িয়ে যেতে শুরু করলেন। চলতি মাস থেকে স্টেডম্যান এলমেন্টারি স্কুলে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। চারিদিকে অভিনন্দনের ফল্গুধারা ছুটছে মাইকেলের জন্য।

এটকিন্সের মতে, তার প্রথম সন্তান জন্ম না হলে হয়তো এতটা পরিশ্রম তার করা হতো না। কঠর পরিশ্রম এবং মনোযোগ থাকলে এমন অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করে তোলা যায় বলে বিশ্বাস করেন এই শিক্ষক।

সূত্র : বিবিসি

ওডি/এসএম

আপনার চোখে পড়া অথবা জানা অন্যরকম অথবা ভিন্ন স্বাদের খবরগুলোও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড