• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বহু শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন

উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ভুলের সমাহার

  অধিকার ডেস্ক    ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৩১

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। ফল পুনর্নিরীক্ষণে ১০টি শিক্ষাবোর্ডে চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করে প্রতিটি বোর্ডেই বহু শিক্ষার্থী পাস করেছে। বাকিদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। এবারও ঢাকা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পায় ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এর পরদিন থেকেই ফলে আপত্তি থাকলে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। পুনর্নিরীক্ষণ শেষে শুক্রবার থেকেই পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানানো শুরু করেছে। যেখানে ফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন।

কিন্তু ফলে কেন এই বিশাল সংখ্যক পরিবর্তন? এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়োতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসএসসির মতো এখানেও তিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগ ফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ কিছু ভুল পাওয়া গেছে।

২০১৯ সালের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে নতুন করে ২৩৭ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ফেল থেকে পাস করেছিল ১৪২ জন পরীক্ষার্থী। মোট ৫৭ হাজার ৫৫৫ পরীক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল। উচ্চ মাধ্যমিকেও চিত্র মোটামুটি একই। পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৫২ হাজার ৯৮৪ জন পরীক্ষার্থী। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৫৮৬ জনের, আগে ফেল করলেও আবেদন করে পাস করেছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৯ । নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ পরীক্ষার্থী।

অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম হলেও ফল পরিবর্তনের হার কম নয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হয়েছে ৩৬৫ পরীক্ষার্থীর। ২৪ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২৯৭ জনের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ৪৭ পরীক্ষার্থী।

পুনর্নিরীক্ষণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৬৬ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৪ শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৭২৯।

পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ১৬ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় শিক্ষার্থী।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ৮ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে চারজন পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডে পাঁচ হাজার ৩৯০ পরীক্ষার্থী ১৬ হাজার ৭৮৫টি পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ৪৮ জনের ফলাফলে পরিবর্তন হয়েছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে ২৯ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। পুনর্নিরীক্ষণে নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে ১৩৬ পরীক্ষার্থীর ১৪৩টি খাতার নম্বর পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল করা ২৯ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৬২ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায়ও ১৫ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল উদ্দিন জানান, পুনর্নিরীক্ষণ শেষে গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৬৩ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৫, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ এবং গ্রেড বেড়েছে ৩৩ পরীক্ষার্থীর। এ বছর আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তিন হাজার ২০৪ পরীক্ষার্থী ৭ হাজার ৪০৫টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল।

প্রায় একই হারে পরিবর্তন এসেছে যশোর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলেও। পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের কাজে সম্পৃক্ত বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনর্নিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে সরকারী নাজিম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে সরকার একটি যুগান্তকারী কাজ করেছে। এর ফলে একটি দিনেই পরীক্ষা হচ্ছে প্রতিবছর, ফল প্রকাশ হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে। এর ফলে শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন লাখ লাখ খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে কখনও কখনও কিছু ভুল ধরা পরে। তবে সেই হারও ধীরে ধীরে কমে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে আবেদনের ভালো ব্যবস্থা থাকায় আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে। এখন কেউ কেউ মনে করেন খাতা নতুন করে দেখা বা পুনর্মূল্যায়ন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু এটা আসলে সম্ভব নয়। এটা করতে গেলে পুরো ফল প্রকাশই অনিশ্চিত হয়ে পরবে। মাসের পর মাস লেগে যেতে পারে ফল প্রকাশ করতে। তারপরেও যখন ফল প্রকাশ হবে দেখা যাবে তখনও অনেকে ফল নিয়ে আপত্তি করবেন।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড