• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাইব্রেরি একটি বিমূর্ত গ্রহ

আলোকিত মানুষ গড়তে যে তুলনাহীন

  শিহাব জাহিদ

১০ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩২
লাইব্রেরি
লাইব্রেরি (ছবি : সংগৃহীত)

ভবিষ্যৎ বর্তমান হয়েই অতীতে রূপ নেয়। রচিত হয় মহাকালের ইতিহাস। এভাবেই পৃথিবীর বয়স আজ আনুমানিক পাঁচশত কোটি বছর। এই পাঁচশত কোটি বছরের অমর ব্যক্তিত্ব, ধর্ম, দর্শন, মানবতা, আদর্শ, মতবাদ, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আবিষ্কার এবং সৃষ্টির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, পরিবর্তন-বিবর্তন সর্বোপরি পৃথিবীময় যে কৌতূহলী রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে, সেই মহাকালের অসীম সম্ভাবনাময় সীমাহীন জ্ঞানসম্পদের ভাণ্ডারকে বুকের মাঝে যে পরম মমতায় জায়গা করে দিয়েছে তার নাম হল ‘বই’।

আবার বিষয় ভিত্তিক একেকটি বইয়ের সমাবেশে যা পূর্ণরূপ লাভ করেছে, তার নাম হল ‘লাইব্রেরি’। তাই লাইব্রেরির সাধনা জ্ঞানে যদি কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে তবে সেই ব্যক্তিই মহাকালব্যাপী অর্জিত সীমাহীন জ্ঞান ভাণ্ডারের মালিক।

সারকথা, নিজেকে সভ্য-আত্মমর্যাদাশীল ও আলোকিত মানুষ হিসাবে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে লাইব্রেরির কোন বিকল্প পৃথিবীতে আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাইতো লাইব্রেরিকে বলা যায় একটি বিমূর্ত গ্রহ।

বই পড়ার জন্য দেশে এক সময় সরকারি লাইব্রেরির পাশাপাশি ছিল বেসরকারি লাইব্রেরি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা কোনো সংস্থার সহায়তায় গড়ে ওঠা এসব লাইব্রেরি পাড়া-মহল্লার পাঠককে করে দিতো নানা ধরনের বই পড়ার সুযোগ। তবে বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর জীবন এবং লাইব্রেরিতে নতুন বইয়ের সংযোজন না থাকায় পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এগুলো। তবে সমগ্র দেশ নিয়ে আলোচনা নাই করলাম, আপনাদের সঙ্গে আজ আলোচনা হবে রাজধানী ঢাকার কিছু ভালোলাগার স্থান নিয়ে।

আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি তাদের কাছে এ শহরটিকে ভালো না লাগার অনেক কারণ রয়েছে। তবে যারা বই পড়তে পছন্দ করি, তাদের জন্য ভালো লাগার ৫টি কারণ দেখাতে যাচ্ছি। যারা আসলেই বইয়ের মধ্যে ডুবে যেতে পারে তাদের বই পড়ার জন্য স্থান–কাল বিবেচনায় না আনলেও চলে। তবে কালেভদ্রে এমনও মনে হয় যে বাসার বিছানায়, সোফায়, টেবিলে অলসের মত পড়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না, মন চাইছে নতুন কোন একটা জায়গায় গিয়ে বই নিয়ে সময় কাটিয়ে আসি।

তাহলে চলুন ভালো লাগার ৫টি কারণ খুঁজি...

১. পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র

শাহবাগ মোড়ের জাতীয় জাদুঘর থেকে কিছুটা সামনে গেলেই চোখে পরবে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের প্রবেশপথ। সুন্দর অরিজিনাল প্রিন্টের দেশি-বিদেশি বইয়ের প্রতি ঝোঁক থাকলে একবার ঘুরে আসার মত জায়গা। বসে বসে পড়ার মত সুবিধা এখানে তেমন একটা ছিল না, তবে এখন বেশ ভালোই বই পড়ার মতো ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বইয়ের মত সুন্দর জিনিস হাতে ধরে দেখেও তো শান্তি। পকেটে টাকা থাকলে আরও বেশি শান্তি, যেটা না থাকলে নিজেকে বিমর্ষ অবস্থায় আবিষ্কার করতে হয়। লাখো বইয়ের সমাহার রয়েছে এখানে।

ঠিকানা: ভবন-৪, ২য় তলা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (আজিজ সুপার মার্কেটের উল্টো দিকে), শাহবাগ, ঢাকা – ১০০০। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাইব্রেরীটি খোলা থাকে।

২. বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

বাংলাদেশে বেসরকারি লাইব্রেরির মধ্যে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’। ৭০ দশকের শেষের দিকে শুরু হওয়া এই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রথম দিকে বেশ কিছু প্রতিকূলতার মধ্যে পরে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছানোর অভিনব কায়দার জন্যে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এখন ঢাকাতে রয়েছে এর নয় তলা একটি ভবন। এ ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলাতে রয়েছে লাইব্রেরি। দৃষ্টিনন্দন অভ্যন্তরীণ সজ্জা, নান্দনিক আলোকসজ্জা, উচ্চমানের শব্দ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সুন্দর বসার স্থান থাকায় নিজেকে সম্পূর্ণ রিলাক্স মনে হবে। বই প্রেমীদের জন্য স্থানটি বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট গল্পে বিস্টের লাইব্রেরিটার মত মনে হবে।

ঠিকানা: ময়মনসিংহ লেন, ঢাকা-১১০০ (বাংলামটর) সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ লাইব্রেরীটি খোলা রাখা হয়।

৩. বাতিঘর, ঢাকা

জায়গাটা অনেকটা নতুন বলা যায়। তবে তাদের কালেকশন দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হবে। ৫০০০ স্কয়ার ফিটের বিস্তৃত জায়গায় ঢুকলে মনে হবে একটা প্রাসাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। মার্বেলের গোল ছোট ছোট কিছু বসার টেবিল আর চেয়ার রয়েছে এখানে, চাইলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে ইংরেজি আর বাংলা বইয়ের বিশাল সম্ভারের মধ্যে। সংখ্যায় বলতে গেলে ১০,০০০ এরও বেশি লেখকের লেখা ১ লাখেরও বেশি বইয়ের কালেকশন রয়েছে এখানে।

ঠিকানা: ৭ম তলা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিল্ডিং, ময়মনসিংহ লেন, ঢাকা-১১০০ সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাইব্রেরীটি খোলা থাকে।

৪। বেঙ্গল বই

নামটা শুনে অনেকেই নাকমুখ কুঁচকে ফেলবে হয়তো, কারণ এটা নাকি আজকাল বই পড়ার জায়গার থেকে বেশি ছবি তোলার জায়গা হয়ে গেছে। ঘটনা অনেকাংশে সত্যি। তবে এতদিনে ছবি তোলা শেষে জায়গাটা পুরনো হয়ে গেছে, তাই এখন ফটোগ্রাফার ও মডেলদের উৎপাতের চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে বই পড়তে যাওয়া যেতে পারে। বাইরের বই নিয়ে ভিতরে ঢোকা নিষেধ।

ঠিকানা: ১/৩ ব্লক- ডি, লালমাটিয়া (ধানমন্ডি ২৭), ঢাকা ১২০৯ প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয় লাইব্রেরী। তবে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি।

৫। পিবিএস

শান্তিনগরে প্রধান শাখাটি ছাড়াও ধানমন্ডি এবং উত্তরায়ও পিবিএসের আউটলেট রয়েছে। বই, সিডি–ডিভিডি, খাতা, কলম, নোটবই, রং পেন্সিলসহ যে কোনো কিছু কেনার জন্য বা দেখার জন্য ঘুরে আসতে পারেন এখানে। ঢাকাতে একদম শুরুর দিকের বুক শপগুলির একটা এই পিবিএস চেইন।

ঠিকানা: শিল্পাশ্চর্য জয়নুল আবেদিন সড়ক, পুরাতন ১৬ শান্তিনগর, ঢাকা ১২১৭ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে লাইব্রেরীগুলো (শান্তিনগর, ধানমন্ডি, উত্তরা)।

এগুলো ছাড়াও বই পড়ার মত অনেক অনেক জায়গা চাইলেই খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকার আনাচে কানাচে। পাবলিক লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বাড়ির পাশের ছোট্ট বইয়ের দোকানটা, বইয়ের জন্য ভালোবাসা থাকলে বার্ন্স অ্যান্ড নোবেল দরকার হয়না আমাদের।

ওডি/জেআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড