সাহিত্য ডেস্ক
ফেক আইডিতে হঠাৎ করেই ইরার সাথে আকাশ নামের এক ছেলের পরিচয়। পরিচয় থেকে আলাপ আর আলাপ থেকে গভীর প্রণয়ের সূচনা। আর পাঁচটা সাধারণ প্রেমের সূচনা যেভাবে হয়।
প্রায় প্রতিদিনিই আকাশ আর ইরার কথা হয়। তবুও যেন তাদের কথার শেষ নেই, প্রেম বলে কথা।
ও বলাই হয় নি,আকাশ অনার্স ফোর্থ ইয়ারে আর ইরা অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। বাবা মার আদরের একমাত্র মেয়ে ইরা।
আর আকাশের সব থেকেও যেন কিছু নেই। বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে যেমনটা হয়। আকাশ তার বাবার কাছেই মানুষ।
বাবার ব্যস্ত ব্যবসায়ের কারণে ছেলের প্রতি তার আর অতটা নজর দেওয়া হয়ে উঠে না। অনাদরে, ভালোবাসাহীনভাবে আকাশের বেড়ে ওঠা। একটুকু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকাশের হৃদয়টা মরুভূমির মত হয়ে গেয়েছিল।
আর ইরার ভালোবাসায় আকাশের তৃষ্ণার্ত মরুভূমিতে সুখের শ্রাবণের বর্ষণ আনে।
আকাশ শান্তশিষ্ট হলেও ইরা খুব চঞ্চল। আর এই চঞ্চলতাই আকাশকে ইরার প্রতি নেশা ধরায়।
তো হঠাৎ একদিন, আকাশ ইরাকে দেখতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে।ভালোবাসার মানুষকে কেই বা না কাছে পেতে চায়? ভালোবাসার মানুষের নাম শুনলেই যে হৃদয়ে উন্মাদনার সুর বাজে।
আকাশের কথায় ইরাও আর না করে না। কারণ, ইরার মনও আকাশের প্রতি টানে। ইরা আকাশকে তার ঠিকানা দেয়।
তবে তখনও তাদের দেখা হয় নি, এমনকি ফোনে পর্যন্ত কথাও হয়নি। ইরার জেদ একটাই সামনাসামনি দেখা করবে। ইরার ইচ্ছাটাকেই আকাশ প্রাধান্য দেয়, বরাবর যেমনটা দিয়ে এসেছে।
আকাশ ইরাকে জানিয়ে দেয়, কবে সে আসবে।
ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য ইরার হৃদয় যেন উথাল-পাঠাল হতে লাগলো। কবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে? এই ভেবে ইরার দিনগুলো যেন আর কাটে না।
ওদিকে আকাশও তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় আছে। কবে সেই মিলনের সাক্ষাত বেলা আসবে?
অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান হলো। আকাশ তার প্রিয়ের কাছে আসার জন্য যাত্রারম্ভ করে।
আকাশ যেদিন আসবে সেদিন সকালে ইরার তাড়াহুড়া দেখে কে? ইরার আম্মুও ভেবে পায় না, ইরার কি হয়েছে? এমনিতেই প্রতিদিন দেরী করেই ক্লাসে যায়। আজ যেন ওর রাজ্যের তাড়া।
তাড়াতাড়ি কোন রকমে ইরা বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে চলে যায়।
স্টেশনে এসে যেন ইরার সময় কিছুতেই কাটতে চায় না। সময়ের চাকা যেন একটুও ঘুরছে না, ইরার মনে হয়। শুধু ইরার নয় প্রতিটা মানুষের মনেই মাঝেমাঝে এরকম অদ্ভুত অনুভূতির উদয় হয়।
আকাশ প্রতিনিয়তই ইরার সাথে চ্যাট করে যাচ্ছে। আকাশ যখন বলে এইতো প্রায় এসে গেছি। ইরার আনন্দ দেখে কে?
কিন্তু সেই আনন্দ বোধয় বেশিক্ষণের নয়। নিমেষেই ইরার রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়।
চ্যাট করতে করতে হঠাতই আকাশ আর রিপ্লাই দেয় না, এমনকি মেসেজও সিন করে না।ইরার মনে অজানা ভয়ের শিহরণ জাগে, কপাল বেয়ে চৈত্রের ঘাম ঝরে। ইরা ছটফট করতে থাকে। বারবার আকাশকে মেসেজ করে কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই।
হঠাৎ কারো কণ্ঠে ইরা শুনতে পায়, স্টেশনের থেকে কিছুদূরে নাকি চলমানরত ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা শোনামাত্রই ইরার মাথায় যেন সমস্ত আকাশ ভেঙে পড়ে। কোনমতে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ইরা সেদিকে দৌঁড় ছুটে।
ইরা দৌঁড়িয়েই চলেছে কিন্তু এই গন্তব্যের কোথায় শেষ ইরার তা অজানা! মাঝে মাঝে রেল লাইনের পাথর ওপর পরে যাচ্ছে কোনমতে ওঠে আবার দৌঁড়। পথঘাটে কপাল ফেটে দরদর করে রক্ত পরছে ইরার সেদিকে খেয়াল নেই।
আসলে ভালোবাসার মানুষের কিছু হলে আমাদের বাস্তবের জ্ঞান কারোরই থাকে না। সমস্ত জ্ঞান হারিয়ে সবাই নির্বোধ হয়ে যায়।
অবশেষে ইরা সে স্থানে পৌঁছায়। চারদিকে মানুষের প্রিয়জন হারানোর আর্তনাদিত চিৎকার, ট্রেনে কাঁটা ক্ষত বিক্ষত লাশ পরে আছে, কারো বা মাথা কাঁটা কারো বা ছিন্নভিন্ন দেহের টুকরাংশ। ইরার চোখ ঝলসে যায়। ইরা পাগল প্রায় হয়ে আকাশকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু কি করেই বা খুঁজে পাবে সে তো আকাশকে দেখেওনি। তবুও ইরাকে একে ওকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু সবাই তাকে নিরাশ করে।
ইরার চোখ দিয়ে অনবরত শোকার্ত অশ্রু আর কপাল বেয়ে অনবরত বিন্দু বিন্দু রক্ত কণা ঝরে চলেছে। ইরা গগনবিদারী চিৎকার দিয়েও দিতে পারে না, সমস্ত হৃদয় যেন তার ফেঁটে যাচ্ছে।
হঠাতই ইরার চোখ পরে, লাইনের ওপাশের একটি কাটা হাতের ওপর।যে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরা একটি ফোন।
ইরা সাহস করে হাতের মুঠো থেকে ফোনটি নেয়, ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ইরার চোখ থমকে যায়। কারণ, ফোনটি আকাশের আর আকাশের নামের পাশে এখনও সবুজ বাতি জ্বলছে।
কিন্তু আকাশ? আকাশের জীবন বাতি নিভে গেছে।
ইরার আর হুঁশ থাকে না।
যখন হুঁশ ফিরে ইরা তাকে হাসপাতালের শয্যায় আবিষ্কার করে।পাশে তার বাবা-মা দাঁড়িয়ে।ইরাকে তারা কিছু জিজ্ঞেস করে না, এই ভয়ে যদি তার অবস্থা আরও খারাপ হয়।
ইরা পরে জানতে পারে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসে তার পকেটে রাখা ফোন থেকে তার বাসায় ফোন করে।
কিন্তু তার হাতে থাকা ফোনটি কোথায় গেল ইরা সে উত্তর আর খুঁজে পায় না।
ইরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কিন্তু তার মন সুস্থ হয় না।কারণ, অদেখা সেই তুমি যে ইরার মনে প্রতিক্ষণেই বিরহের ঝড় তোলে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড