• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প

কৃষ্ণকলি

রবিউল হাসান

  সাহিত্য ডেস্ক

১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০৭
গল্প: কৃষ্ণকলি

মিতার ধারনা ছিল বিবাহপূর্ব বর কনেদের মিলতে দিলে তারা লজ্জা-টজ্জা নিয়ে যেভাবে কথাবার্তা বলে তার নিজের বেলায়ও তেমনটা ঘটবে।

কিন্তু না! লোকটা এসেই দড়াম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বাড়ির সবাই জানে লোকটা খুনের দায়ে জেলখাটা আসামী। এতে কারো বিন্দু পরিমাণও ভাবান্তর নেই। গত পরশু মিতার বাবা এ নিয়ে কথা তুলেছিলেন। মিতার বড়'দা কথাটা হাসি-ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন,‘আরে লোকে কত কি বলে। কিছু দুষ্টু লোক শত্রুতা করে ছেলেটাকে বিনাদোষে জেল খাটিয়েছে।’

মিতার ধারনা ছেলেটা যদি দোষও করে থাকে তবুও তার সাথে বিয়ে দিতে কোন দ্বিমত নেই তার বড়'দার। অবশ্য মিতার মতো কুচকুচে কালো মেয়ের বিয়ে হওয়াটাই অনেক বড় ব্যাপার। কার সাথে হল না হল এসব ভাবা বোকামি।

মিতা দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। বসবে নাকি দাঁড়িয়ে থাকবে এ নিয়ে দোটানায় পড়েছে। ঠিক তখনই লোকটা কঠিন গলায় প্রশ্ন করে বসলো ‘নাম কি?’

প্রশ্নটা মিতার কাছে অবান্তর মনে হল। বিয়ে করতে যখন এসেছে নাম ধাম তো জেনেই এসেছে। এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়! পরোক্ষণে মিতার মনে হলো কথাটা একেবারে ফেলনা না। সে নিজেও জানে না লোকটার নাম কি। হতে পারে লোকটার বেলায়ও তাই।

মিতা আমতা আমতা করে বলল, ‘মিতা, পারমিতা।’ মিতা ভাবছিল লোকটার নাম জিজ্ঞেস করবে কি-না। তার আর কোন সুযোগ না দিয়ে লোকটা বলল, "রান্নাঘর থেকে তোমাদের লাইটারটা নিয়ে আসো। দেশলাই হলেও চলবে।" এই কথায় মিতা ভড়কে গেল। তার বলার ভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে স্কুলের অংকের টিচার ছাত্রদের কাছে হোমওয়ার্ক চাইছে। মিতা অস্বস্তি নিয়ে রান্নাঘর থেকে লাইটার এনে দিল। লোকটা সাথে সাথে সিগারেট ধরিয়ে বলল, ‘রুনু শুয়োরটা গতকাল কোন ফাঁকে লাইটার নিয়ে গেছে। শালাকে পেলে খুন করে জোড়া পুরাবো।’ এমন কথায় মিতা পুরোপুরি ভড়কে গেল।

মিতার বিয়ে হচ্ছিল না সেটাই ভালো ছিল। কিন্তু এমন একটা অসভ্য ইতরের সাথে...! কথাটা ভাবতেই মিতার গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠলো। লোকটা সাদা বিছানার চাদরে সিগারেটের শুকা ফেলছে। তার এমন কাণ্ডকারখানা দেখে মিতা বিরক্তির চরম পর্যায়ে। লোকটা আবার বলল, কোন কলেজে পড়ো? সেন্ট্রাল? -জ্বী। -রঞ্জু শুয়োরটাও ওখানে পড়তো। হারামজাদা আমার সাত হাজার টাকা মাটি করেছে। একবার হাতে পাই তারপর দেখবে মজা।

লোকটা সিগারেট শেষ করে উঠে বসলো। টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে খেয়ে বলল, ‘সন্তোষ শালা গল্প জুড়ে দিয়েছে। এই শালা কোথাও বসলে উঠার নাম নেয় না। শালা একদিন মরবে, আমার হাতেই মরবে। শালাকে মেরে জোড়া পুরাবো।’

লোকটাকে মিতার কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। কেউ এমন নির্দ্বিধায় নিজের বাপকে খিস্তি কাটে! তাও আবার খুন করার কথাও বলছে।

লোকটা উঠে হাঁটা ধরেছে। মিতার বুক থেকে যেন শ’মনের একটা পাথর নামলো। এমন একটা গুণ্ডা লোক বাড়ি থেকে বিদায় হলেই বাঁচে। লোকটা দরজার কাছে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ালো, মিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘এদিকে একটু আসো তো। মিতা ভয়ে ভয়ে লোকটার কাছে গেল। লোকটা ইন করা ঝোলা শার্টের ভেতর থেকে একটা গোলাপ বের করে দিয়ে বলল, মৈনাক হারামজাদা জোর করে দিয়ে বলেছে তোমাকে দিতে। কাঁটায় আমার জান যায়। এই শুয়োরটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। হাতে পেলে শুয়োরটাকে মেরে জোড়া পুরাবো।’

লোকটা চলে যাচ্ছে। মিতা গোলাপ হাতে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই ভয়ংকর লোকটা গোলাপ কাঁটার ঘা খেয়ে তার জন্য গোলাপ নিয়ে এসেছে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড