• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও গুড়

  হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট

০২ নভেম্বর ২০২০, ১৪:২০
খেজুরের রস
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও গুড় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশার চাঁদর, জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। দেশের উত্তরের গ্রামীণ জনপদে মৌসুমী খেজুরের রস দিয়েই শীতের আমেজ শুরু হতো। তবে কালের বিবর্তনে বাস্তবতা এখন ভিন্ন!

শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা। আর শীতকালে নতুন ধানের চাল দিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা পায়েস তৈরিতে খেজুরের রস ও গুড়ের কোনো জুড়ি নেই।

কিন্তু সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুরের রস এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক নগরায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ এবং এই গাছের রস।

এক সময় লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমেছে গাছির (গাছের রস সংগ্রহ করেন যারা) সংখ্যাও।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের নিয়ম হলো প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশের কাছাকাছি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর গাছের ভেতরের রস বের করার জন্য গাছের সাদা অংশ বের করতে হবে। পরিষ্কার করা সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মাটির পাত্র যেমন ঘটি, কলস ইত্যাদি দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়। গাছিরা প্রতিদিন বিকালে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি বাঁধে রসের জন্য।

আবার কাকডাকা ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকায়। কেউ কেউ এই রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে কিংবা হাটে-বাজারে (কাঁচা রস) খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে। এছাড়া কেউ কেউ সকালেই এই রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও গুড় তৈরি করার কাজ শুরু করেন। গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সুস্বাদু এই খেজুরের রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। যা দিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার পায়েস ও হরেক রকমের পিঠা।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, আগে শীত আসলে মিষ্টি রোদে বসে সবাই খেজুরের রস খেতাম। কিন্তু এখন সারা গ্রাম খুঁজেও হঠাৎ দুই একটা খেজুরের গাছ বা গাছির সন্ধান পাওয়া যায়। তাই সকলেরই খেজুর গাছ লাগানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খেজুরের রসের কথা শুধু বই পুস্তকে পড়বে, কিন্তু বাস্তবে তা পাবে না।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের গাছি মান্নান বলেন, বাবাকে রস সংগ্রহ করতে দেখছি সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন প্রচুর রস আসত বাড়িতে। খেজুরের গুড়ের গন্ধে মৌ মৌ করত পুরো বাড়ি। কিন্তু বর্তমানে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।

আরও পড়ুন : হিমেল হাওয়ায় লালমনিরহাটে শীতের আগমনী বার্তা

অপরদিকে গাছি উমর আলী জানান, সাধারণত একটি খেজুর গাছের রসের উপযুক্ত হতে প্রায় ৫ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। আর একটি গাছ থেকে রস পাওয়া যায় ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। তবে প্রতিটি গাছে কী পরিমাণ রস পাওয়া যাবে, তা নির্ভর করে গাছির দক্ষতা এবং গাছের ওপর।

সচেতন মহলের দাবি, করোনা ভাইরাসজনিত কারণে এখন আর আগের মতো খেজুরের রস খেতে চায় না মানুষ। আগের মতো আর খেজুর রস বিক্রি না হওয়ায় কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। মাঝে মধ্যে দু-একজনকে দেখা যায় গাছে হাড়ি বেধে দিয়ে রস সংগ্রহ করছে। তবে বাজারে ক্রেতা কমে যাওয়ায় তারাও এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আগের মত আর গাছিদের দেখা যায় না,হাতে গোনা দু একজনকে দেখা যায় মাটির হাড়িতে করে ভার সাজিয়ে রস ও খেজুর গুড় নিয়ে বের হয়েছে গ্রামে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড