• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রেলওয়ের হালচাল

  মাহবুব নাহিদ

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৩৭
ট্রেন
বাংলাদেশ রেলওয়ে (ছবি : সংগৃহীত)

আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা। কোথাও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। রাস্তাঘাট ভাল না, খানাখন্দে ভর্তি, বিভিন্ন জায়গায় জ্যাম, ফেরি বা ব্রীজে দীর্ঘ সিরিয়াল, কোথাও কোনো শান্তি নেই। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো আমাদের জন্য একদম ভাগ্যের ব্যাপার। এই সকল কিছুর মাঝেও মন্দের ভাল যাকে বলা যায় সে হচ্ছে রেলওয়ে ব্যবস্থা। মানুষ অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে ট্রেনকে কিছুটা এগিয়ে রাখে। যারা বিমানে চলাচল করার ক্ষমতা রাখে তারা এই আলোচনার আলোচ্য বিষয় না। যারা মধ্যম থেকে নিম্ন অর্থনৈতিক শ্রেনীর মানুষ তাদের জন্য ট্রেন একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই ট্রেনেও রয়েছে নানান ধরনের অসংগতি। সকল অসংগতির মাঝেও রয়েছে কিছু সম্ভাবনাও।

প্রথমত রেলওয়েতে দেখা যায় প্রতি বছরই প্রায় ১৫শ কোটি লোকসান হয়। প্রতি বছরই বাজেট বাড়ে আর বাজেটের সাথে সাথে লোকসানও বাড়ে। এত ক্ষতি আসলে কেনো হয়? ট্রেনের টিকেট তো দুই-তিনদিন আগে একটাও পাওয়া যায় না। তাহলে ক্ষতি কেনো হয়? হিসাব নিয়ে দেখা যায় আমাদের দেশের রেললাইন তৈরি করার খরচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিংবা পাকিস্তানের চেয়েও প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২০ গুন বেশি। আমাদের রেলওয়ের প্রচুর সম্পত্তি আছে নির্বিচারে নির্বিকারে নস্ট হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অব্যবহৃত ইঞ্জিন, বগি কিংবা স্লিপার বিনা কারনে পড়ে পড়ে নস্ট হচ্ছে। আমরা জনগণও এক্ষেত্রে কম দ্বায়ী নয়। আমরাও রেললাইনের লোহাজাত জিনিসপত্র খুলে নিয়ে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র বানিয়ে ফেলতে লজ্জাবোধ করি না। এরপরে বড় বিষয় হচ্ছে টিকেট। রেগুলার টিকেট বিক্রি ঠিকই হয়ে যায়। প্রত্যেক ট্রেনেই ছাড়ার সময় কোনো টিকেটই থাকে না। সব ট্রেনেই দেখা যায় উপচে পড়া ভীর। মানুষ দাঁড়িয়ে কিংবা ছাদে যাতায়াত করছে। মূলত এদের অধিকাংশই টিকেট কাটে না। এদের কাছ থেকে অবশ্য টাকা নেয়া হয় কিন্তু বিনিময়ে খুব কমই টিকেট দেয়া হয়। আমাদের দেশের যে সনাতন টিকেট কাটার পদ্ধতি তাতে কেউ চাইলেও ট্রেন ছাড়ার আগে টিকেট কাটতে পারবে না। দেখা গেলো একটা ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে আরো পাঁচটা ট্রেন মিস হয়ে যাবে। খুব সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়, প্রতিটা ট্রেন প্রতিটি স্টেশনে দাঁড়ানোর আগে একটু স্লো করে, যা যারা টিকেট কাটেনি তাদের নেমে যাওয়ার ইঙ্গিত।

ঈদের সময় তো হয় আরো খারাপ অবস্থা। সিরিয়ালে দাঁড়ানো প্রথম ব্যক্তিই অনেক সময় এসির টিকেট পায় না। রেলওয়ের যে একটা এপ বা অনলাইন ওয়েব করা হয়েছে তা সঠিকভাবে কাজ করে না। আমাদের ট্রেনের টিকেটের এতই বাজে অবস্থা যে স্বয়ং মন্ত্রী নিজে মাঠে নামতে হয়। তবে বর্তমান মন্ত্রীর কার্যক্রম রেলওয়ের উন্নতির কিছুটা হলেও আভাস পাওয়া গেছে। বিশেষ করে টিকেট কাটার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার দালালের প্রভাব কিছুটা কমানো গিয়েছে। বেশ কয়েকটি দ্রুতগামী বিরতিহীন ট্রেন ছাড়া হয়েছে। নতুন করে ৫০০ কোচ আর ১০০ ইঞ্জিন আনা হয়েছে।

ট্রেনে একটা বিশাল অংশ আছে যারা গাজীপুর কিংবা এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করে। এদের জন্য রয়েছে মাসিক টিকেট কাটার ব্যবস্থা। কিন্তু এই টিকেট কাটতে হলে দেখা যায় যে তাদের একদিনের অফিস বন্ধ দিতে হবে। এই টিকেট অনলাইন সিস্টেম করে দেয়া যেতে পারে।

আরেকটি বড় যন্ত্রণার নাম হচ্ছে সিডিউল বিপর্যয়। একসময় এটা ছিলো মহামারী আকারে। এখন কিছুটা কম হলেও খুব কমই ট্রেন পাওয়া যাবে যা সময়মতো ছেড়ে যায়। এমনকি দুপুর ১২ টার ট্রেন রাত ১২ টায় ছেড়ে যায় মাঝেমাঝে। আমাদের দেশের স্টেশনগুলো খুব একটা যাত্রীবান্ধব না। মানুষের অপেক্ষা করার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ঠিকমতো খবরাখবর পাওয়া যায় না সহ নানান সমস্যা।

এরপর আসি রেল দুর্ঘটনা নিয়ে। রেল দুর্ঘটনা খুব একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু, রেলক্রসিং এ দুর্ঘটনা ইত্যাদি। গত ৩ বছরে ৩০০ এর বেশিবার ট্রেন বগিচ্যুত হয়েছে। রেলক্রসিং এ দুর্ঘটনার পরিমান ভয়াবহ। দেশে ২৫০০ এর মত বৈধ ক্রসিং আছে যার ২১৭০টিতেই গেট, লাইনম্যান কিংবা কিছুই নেই। আর অবৈধ ক্রসিং তো হিসাবের বাহিরে। কিছুদিন আগে উল্লাপাড়ায় রেলক্রসিং এ বর-বৌ সহ মারা গেলো ৯ জন। রেল বগিচ্যুত হবার ঘটনা ঘটলো কয়েকটি।রেলওয়ের দুর্ঘটনা দেখা যাচ্ছে প্রতি বছরই প্রায় ৩০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বগিচ্যুত হবার পিছনে কারন ঘাটলে দেখা যায় দুর্বল লাইন, নাট বল্টুর অনুপস্থিতি, স্লিপার দুর্বল কিংবা নাই ইত্যাদি। ট্রেনের এত খারাপ দিকের মাঝেও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস কিংবা পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের মত বিরতিহীন ট্রেন আমাদের আশা জোগায়। তবে সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ রেললাইন, সুষ্ঠু ক্রসিং ব্যবস্থাপনা, সম্পূর্ণ দৈত লাইন হওয়া, আরো বেশি আরামদায়ক ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়া। মানুষ আশায় বাঁচে, আমরাও দেখি!

ওডি/এআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড