• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুসংস্কারেই গুজব

  মাহবুব নাহিদ

২২ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩৩

ছোটবেলায় আমরা বাবা মায়ের কাছে হুঁশিয়ারি বাক্য শুনতাম যে, একা একা যাওয়া যাবে না। কোথাও একা পেলে নাকি ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে। এই ছেলেধরার অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না তা গুরুজনরাই বলতে পারবে। কিন্তু এই আধুনিক যুগে এসে আবার সেই ছেলেধরার ঘটনা ফিরে এসেছে। এখন আর তা কুসংস্কারের পর্যায়ে নেই। এটা এখন একটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই ঘটনা অবশ্য ফিরে এসেছে আরেক কুসংস্কারের হাত ধরে। ছোটবেলায় আমরা আরও একটি কুসংস্কার শুনতাম যে, কোনো ব্রিজ যা জাহাজ বানাতে নাকি মানুষের মাথার প্রয়োজন। সেই মানুষ নেয়ার জন্য কল্লাকাটা ঘুরে বেড়ায়। এই ধরনের কুসংস্কারের কতটুকু ভিত্তি আছে তা বলা মুশকিল।

তবে সম্প্রতি পদ্মাসেতু নিয়ে এই গুজবের উদ্ভব হয়েছে যে পদ্মাসেতুতে নাকি মানুষের মাথা লাগবে। আমাদের দেশে তো এমনিতেই একটা ইস্যু পেলেই হয়। একটা ইস্যু নিয়ে মোটামুটি দুই-এক সপ্তাহ ফেসবুক, টুইটার আর চায়ের দোকান গরম হয়ে থাকে। সেই তুলনায় এটি একটি গরম ইস্যু। অনেকেই অবশ্য কথাকে বিশ্বাসও করে ফেলেছে। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। এই বিশ্বাসের আগুনে ঘি ঢেলে দিল নেত্রকোণায় এক মাদকাসক্তের ব্যাগে এক শিশুর মাথা পাওয়ার ঘটনা। আমাদের বিশ্বাস করাতে তো একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসই তো যথেষ্ট, সেখানে শিশুর মাথা তো অনেক বড় ব্যাপার। প্রথমত, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অনেক জল্পনা কল্পনা রয়েছে। শুরু থেকেই নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে এই পদ্মা সেতু। সকল কিছুর মাঝেও বেড়ে উঠছে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুকে বিতর্কিত করার জন্য এটি কোনো অপপ্রচেষ্টা কি না সেটা খুবই তীক্ষ্ণভাবে খতিয়ে দেয়া উচিত।

কিন্তু এই ছেলেধরা আর কল্লাকাটা ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ইদানীং দেখা যাচ্ছে গণপিটুনি নামক আরেক ভয়ঙ্কর ঘটনার। আসলে মানুষ এখন ছেলেধরা বা কল্লাকাটা আসার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এমন সময় সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই এই ঘটনা ঘটছে।

বেশ কিছুদিন ধরে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটা গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে এদের মধ্যে অধিকাংশই নিরীহ মানুষ, মানসিক প্রতিবন্ধী অথবা নারী। বাড্ডায় এক নারী হয়তো স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করানোর তথ্য নিতে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে কিন্তু সেই মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারা হলো। একই দিনে সাভারে আরেক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়েছে। আমাদের দেশে ঘটনাগুলো কেন যেন একা ঘটে না। একই ঘটনা কয়েক জায়গায় পরপর ঘটে। একটা মানুষকে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে নিজ দায়িত্বে মানুষ খুন করার অধিকার তো কাউকে দেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাঘ্যমে ঘোরাঘুরি করছে আর মানুষের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও মানুষে মানুষে যে হানাহানি, মানুষের মাঝে যে বর্বরতা তা ভাবনার বিষয়। তবে বিচার না হওয়াটা একটা বড় কারণ। গণপিটুনির ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। এর আগেও এসব ঘটনা ঘটেছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক বিচার হয়নি। আট বছর আগে ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকার সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে ছয় ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই ঘটনা নিয়ে তখন সারা দেশে তুমুল আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার আট বছরেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। এ ঘটনায় আসামি ৬০ জন, সবাই জামিনে আছেন।

কাউকে গণপিটুনি দেয়ার সময় আমরা যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যাই কে কত মারতে পারে তা নিয়ে। আমরা অনেকেই কাকে মারছি কেন মারছি তাও জানি না। কখনো এমন না হয়ে যায় যে যাকে মারলাম সে আমারই ঘরের একজন অভাগা!

মানসিক দায়বদ্ধতা থেকে এই কর্ম থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড