• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সম্পর্ক করবেন কিন্তু বিয়ে করবেন না, তা হবে না!

  রহমান মৃধা

১৪ মে ২০২৩, ১৭:১৩
সম্পর্ক করবেন কিন্তু বিয়ে করবেন না, তা হবে না!
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা ও তার সহধর্মিণী মারিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

সঠিক মানুষটার সঙ্গে কি প্রেম করছেন, যাকে ভালোবাসেন সে কি আপনার মনের মতো? নাকি যাচাই বাছাই করার সুযোগ হয়নি অথবা প্রথম দেখায় প্রেম, প্রেম থেকে প্রীতি শেষে তিনি সাথী, একেবারে জীবনসাথী?

অনুসন্ধান করে জানা গেছে প্রথম সম্পর্ক মানুষের জীবনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে, যার ফলে ভুল-ভ্রান্তির আশঙ্কাও থাকে বেশি। তারপরও যদি বিয়ে হয়ে যায় তবে ছাড়াছাড়ির সম্ভাবনা বেশি হয় সেটা হতে পারে মনের অথবা আজীবন ডিভোর্স। ডিভোর্স হলে পরবর্তী সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে মানুষ অনেক বেশি সাবধানী হয়ে যায়। অনেকে আবার সম্পর্কের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। অনেকের মধ্যে ভয় ঢুকে পড়ে। এসব তথ্য জানার পর কী করা উচিত?

বিশ্লেষণ করুন আপনার সঙ্গীকে। দেখুন সে আসলেই আপনার পছন্দের মতো এবং ভালো মানুষ কী না। সেই সাথে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। এগুলো তার মধ্যে থাকলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন জীবনসঙ্গীকে নিয়ে।

সে কি সহানুভূতিশীল?

সঙ্গী আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে সম্পর্কের শুরুর দিকে। খেয়াল করুন অন্যদের প্রতি তার আচরণ কেমন। বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন, এমনকি অপরিচিতদের প্রতি তার আচরণও খেয়াল করুন।

প্রয়োজনে সে কি সমর্থন দেয়?

আপনার প্রতি তার আচরণ বিবেচনা করুন প্রয়োজনের সময়। যখন আপনি মানসিকভাবে দুর্বল সময় পার করছেন বা কোনো কারণে শারীরিক বা মানসিক সমর্থন দরকার, তখন সে আপনাকে কতটা খেয়াল রাখছে।

আপনার সাফল্যে সে কতটা আপ্লুত?

সঙ্গী আপনার সাফল্য কতটা উদযাপন করেন, ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। যদি কোনো ব্যাপারে আপনি তার চেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করেন, সে কি খুশি হয় নাকি আপনাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে?

রাগ হলে ভুলতে কত সময় নেয় বা কত দ্রুত ভুলে যায়? সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝি, ঝগড়াঝাঁটি হবেই। এটা এড়ানোর উপায় নেই। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেটার সমাধানে আপনার সঙ্গী কতটা মনোযোগী। যদি সে দ্রুত রাগ ভুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আপনাকে সহায়তা করে, তাহলে আপনি সঠিক সঙ্গীর সঙ্গেই আছেন।

সে কি স্বাভাবিকভাবেই সমর্থন করে?

একে অপরের প্রয়োজনের সময় দুজন দুজনকে সমর্থন করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই বা খোঁটা দেওয়াও অনুচিত। যদি আপনার সঙ্গী তেমনটা করে থাকে, তাহলে সেটা বেশ ভাবনার বিষয়ই বটে।

সে কি উৎসাহ দেয় মন থেকে?

প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সঙ্গীকে ভালো কথা বলা, তাকে উৎসাহিত করা সম্পর্কের জন্য খুবই জরুরি। তার চেয়ে জরুরি, সেই কথাগুলো মনের ভেতর থেকে আসা। খেয়াল করে দেখুন, সঙ্গী আপনাকে এগুলো আসলেই বলছে, নাকি লোক দেখানো ভদ্রতা করছে।

সত্যিকারের অনুতাপ করে সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝি যেমন হয়, তেমনি পরস্পরের প্রতি দায়িত্বেও ভুল হয়। অনেক সময়ই একসঙ্গে চলতে গিয়ে সীমা অতিক্রমের ঘটনাও ঘটে। জরুরি হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে সত্যিকারের অনুতাপ করা। সেটা আপনার সঙ্গী করছে কি না, দেখুন।

সে কি সীমা অতিক্রম বা লঙ্ঘন করে?

সম্পর্কে সীমা থাকে বলেই সীমা অতিক্রমের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে একেকজনের রুচি ও পছন্দ একেকরকম। বোঝার চেষ্টা করুন, সঙ্গী আপনার এই পছন্দ-অপছন্দের সীমাগুলোর ব্যাপারে সচেতন কি-না।

সঙ্গীকে হতে হবে সৎ, যেকোনো সম্পর্কেই সততা ভীষণ জরুরি। ভালোবাসার সম্পর্কে তার গুরুত্ব আরও বেশি। এ ব্যাপারে সচেতন থাকা দরকার। বিশেষ করে এর পরীক্ষা হয় যখন সম্পর্কের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা ক্যারিয়ার মুখোমুখি হয়ে পড়ে। তেমন হলে আপনিই বুঝে যাবেন, আপনার সঙ্গী কেমন।

তার সঙ্গ কি শান্তি ও নিরাপত্তা দেয়?

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও আপনার সঙ্গী যদি আদর্শ হয়, তার সঙ্গে থাকলেই আপনি আশ্বস্ত বোধ করবেন। এক ধরনের শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব হবে। সে কাছে এলেই আপনার শরীর সেটা অনুভব করতে পারবে।

কীভাবে পরস্পরকে জানবেন?

সফল দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো পরস্পরকে জানা। যখন আপনারা দুজনেই এ ব্যাপারে সফল হবেন, মানে পরস্পরকে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবেন, তখনই দেখবেন আপনাদের দাম্পত্য সমস্যাগুলো এমনিতেই সমাধান হয়ে যাচ্ছে। যৌথজীবন আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনকে আরও সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলছে। কাজেই এ ব্যাপারে দুজনেই বিয়ের আগে থেকেই সচেষ্ট হোন।

কীভাবে সম্পর্কের সীমারেখাকে জানবেন?

দাম্পত্য সমস্যা সমাধানে আগে থেকে কেবল আলোচনা করলেই ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সে জন্য জেনে নিন আপনাদের সম্পর্কের সীমারেখা। পরস্পরের জন্য কিছু নিয়ম বানিয়ে ফেলতে পারেন। মানে পরস্পরকে নিজেদের সবল ও দুর্বল দিকগুলো জানিয়ে সে সম্পর্কে সাবধান করে দিন। পরিষ্কার করে রাখুন, কার কোন প্রবণতা আছে। কে মানসিক চাপে কী করতে পারেন। কার কোন বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না। আর কোন কোন কাজ করা যাবে না।

কীভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রস্তুতি নিবেন?

আপনি কি প্রণয় থেকে পরিণয় করছেন? নাকি ঘটকালিতে বিয়ে? মানে দুজন দুজনকে কত দিন ধরে চেনেন? বেশি দিন না হলে দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া নিয়ে আরও কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এ নিয়ে দুজনে আলোচনা করুন। যেন ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝির পরিমাণ কম হয়। দাম্পত্যে সমস্যা বা ঝগড়া হবেই, সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখুন।

লোকের কথায় কান দেয় কেমন?

ঘরের বউ যদি ঘরের কাজই না করল, তাহলে আর বিয়ে করে লাভ কী—এমনটা ভাবেন কেউ কেউ। একসঙ্গে থাকেন না তো কী হয়েছে? আলাদা জীবন যাপন করেও পরস্পর আবেগ নিয়েই বসবাস করছেন, একসঙ্গে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন।

বিয়ের মানে তো এটাই, তাই না?

কারো কারো ক্ষেত্রে কিন্তু জীবনের কর্তব্য সমাধানের জন্যই এভাবে সংসার করতে হয়। হয়তো মা-বাবা অসুস্থ, তাঁর দেখাশোনার জন্য আপনাকে কাছে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার জীবনসঙ্গী কর্মস্থল পরিবর্তন করতে না পারায় দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন সপ্তাহের পাঁচ দিন। অনেকেই গ্রামে পরিবার রেখে শহরে চাকরি করছেন, মাসে বা দুই মাসে একবার যান বাড়িতে। ব্যক্তিগতভাবে বিবাহিত হলেও আদতে বছরের পর বছর ‘ব্যাচেলর’ জীবন যাপন করছেন তাঁরা। বিদেশ–বিভূঁইয়ের এই দূরে থাকার সংস্কৃতি আমাদের দেশে আবার বহুল প্রচলিত। তখন কেউ কিছু বললে সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই ছাড়া পরের কথা মতো কিছু করেন কিনা? এছাড়াও নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবুন!

সঙ্গী থাকতেও অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হন কি?

সম্পর্ক টিকে রাখতে শুধুই কম্প্রোমাইজ করেন কি?

মন থেকে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন কি?

বাবা-মা, ভাই-বোন এলে কেমন মনে হয়?

শুধু নিজের ভালো-মন্দ নিয়েই কি ভাবেন?

শুধু দিতে ও নিতে পছন্দ করেন?

অ্যাগ্রি ট্যু ডিজঅ্যাগ্রিতে বিশ্বাসী?

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আপনি যেমন পছন্দ করেন সেভাবে দেখুন আপনার পার্টনারের কী অবস্থা? যদি উত্তরগুলো সমান সমান হয় তবে বিয়ে করুন। নইলে ভাগুন বা দূর সম্পর্ক বজায় রাখুন। দেখবেন নিজে ভালো আছেন এবং আপনার পার্টনারও ভালো আছে। মনে রাখবেন ভালোবাসা ধরা, ছোঁয়া বা দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়, অতএব অনুভব করুন। অনুভব করতে হলে সম্পর্ক করতে হবে, বিয়ে করতে হলে অনুভব করতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নিন সম্পর্ক করবেন নাকি বিয়ে করবেন? থাকবেন নাকি যাবেন? সব কিছুর পরও প্রশ্ন সম্পর্ক করবেন কিন্তু বিয়ে করবেন না, তা হবে না।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড