• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঘৃণা!

  রহমান মৃধা

১৫ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫৮
ঘৃণা!
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

আমাকে যারা চেনে তারা একবার হলেও লিখেছে বা কথা হলে বলেছে, আমি কেন দেশে আসি না? সারা বিশ্ব ঘুরি অথচ নিজ দেশে আসি না। প্রশ্নটি খুবই বাঞ্ছনীয়। উত্তরটি নানাভাবে দিই নানা জনকে এবং সব উত্তরই সঠিক দিয়েছি।

যেমন- বাবা-মা বেঁচে নেই এখন, ভাই বোন দেশের বাইরে, তারপর ইদানীং প্রযুক্তির যুগ যখন খুশি কথা বলা এমনকি ভিডিয়ো কলে দেখা সম্ভব, যার ফলে আগের মত খুব একটা দেশে যাওয়া আসা হয় না। মূলত আমার চল্লিশ বছর দূর পরবাসে বসবাস, এর মধ্যে আমি তিনবার দেশে গিয়েছি। আমার দেশে যেতে যে খরচ হয় তার পুরো অর্থ আমি দেশের দরিদ্রদের নানা কাজে ব্যয় করি, হতে পারে শিক্ষা, হতে পারে কারো চিকিৎসা, হতে পারে কারো বাসস্থান বা খেলাধুলোর জন্য ফুটবল হ্যান্ট অ্যাকাডেমি।

এছাড়াও আমি নানা বিষয়ের উপর লিখি, বিশ্বের যেখানে যা ভালো বা মন্দ দেখি সেগুলো শেয়ার করি, আমি অর্থ বা স্বার্থের কারণে এসব করিনে। আমি আমার দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। কারণ, সে যে আমার প্রিয় জন্মভূমি। এতকিছুর পরও লিখার হেডিং দিয়েছি ঘৃণা।

বিষয়টি কেমন হয়ে গেলো না? কথিত আছে আপন যখন পর হয় তখন তাকে ভুলে যাওয়া উত্তম। আমি সেই পথটি বেছে নিয়েছি। এবার আসুন কিছু অপ্রিয় সত্যকে জেনে নিই বোঝার সুবিধার্থে।

বিশ্বের সর্বত্রেই দেখা গেছে যখন কেউ কারও প্রেমে পড়ে সে আজীবন বাঁচতে চায়। আবার প্রেমে ব্যর্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে মরতেও চায়। ভালোবাসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার শরীরের মধ্যে অ্যাড্রেনালিন নামে এক ধরনের হরমোনের সৃষ্টি করে। এই হরমোনের কাজ হচ্ছে বিপদে পালাতে বা লড়াই করতে যে সাহস বা শক্তির দরকার সেটা যোগাতে সাহায্য করা। এখন যদি মনে হয় আমি পারব না বা আমার দাড়ায় হবে না তাহলে এই হরমোন শরীরে যাতে ভয় সৃষ্টি হয় সেই চেষ্টা করবে।

আর যদি মনে বিশ্বাস হয় আমি পারব তখন পারার প্রবণতা বাড়াবে। অ্যাড্রেনালিন (C₉H₁₃NO₃, একটি স্ট্রেস হরমোন এবং একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা অ্যাড্রিনাল মেডুলা মস্তিষ্কের ব্রেইনস্টেমের একটি অংশ এবং মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্নায়ু কোষে গঠিত হয়। অ্যাড্রেনালিন একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা আমাদের শরীরকে বিপদ থেকে পালাতে বা লড়াই করার জন্য যে সাহস বা শক্তির দরকার সেটা যোগাতে সাহায্য করে)।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে নিয়ন্ত্রণ করতে চিন্তা শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সুইডেনে এরা বলে ’tänk före efter’ মানে —ভেবে কর কাজ, করে ভেবো না। আমার মনে ঘৃণার পাহাড় জন্মেছে। ঘৃণার আবার পাহাড় জন্মে কিভাবে? ওই যে লিখার শুরুতে বলেছি ভালোবাসা তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেমন আজীবন বাঁচার সাধ জাগায় ঠিক মন্দ জিনিসের সংস্পর্শ ঘৃণার পাহাড় জন্মায়।

আমার মধ্যে কিছু ঘৃণা তীব্র আকারে জন্মেছে যার ফলে আমার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্নায়ু কোষে এই অ্যাড্রেনালিন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমোনটি আমাকে বিপদ থেকে পালাতে যে সাহস বা শক্তির দরকার সেটা যোগাতে সাহায্য করছে।

নিজের দেশের আপনজনেরা যখন দুঃখ দেয় তখন তাদের থেকে দূরে থাকা শ্রেয়, যার ফলে আমি দেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমার দেশে যাওয়া না যাওয়ায় কারও কিছু যায় আসে না, তবে যারা সুবিধাবাদী তাদের জন্য এটা ভালো। দিব্বি যার যা খুশি করছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই। প্রশাসনকে জানালে তারা উল্টো ঝামেলা সৃষ্টি করে। যাকে বলে শাঁখের করাত - দুই দিকে ধার করাত যা আসতে যেতে দুইদিকেই কাটে; উভয় সঙ্কট।

বাংলাদেশ প্রশাসন শাঁখের করাতের মত, এরা দুই দিকেই কাজ করে। ফোন করে বা চিঠি লিখে প্রশাসনকে জানালাম, তারা একগাদি টাকা নিলো কাজ করে দিবে বলে, পরে দেখা গেল যে জমি দখল করেছে তার থেকে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণতি করে দিয়েছে। আমি সরাসরি কাউকে দোষারোপ না করে আমার জানা সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরলাম। কারণ আমি বোকা নই, আমি সব জেনে শুনেও কিছু করি না।

এই না করাটা আমার দুর্বলতা নয় বরং এটাই আমার ক্ষমতা, এটা আমার তীব্র ভালোবাসা আমার আপনজনদের প্রতি। তবে ইদানীং প্রশাসনের কাজ কারবার দেখে একটি জিনিস শিখেছি, সেটা হলো আমার এখন লস দুই দিকে হচ্ছে না। নিজের আপনজনেরা আমার জিনিস ভোগ করছে তাতে আর কিছু না হোক ‘শাঁখের করাত’ দুই পক্ষ থেকে ইনকাম করতে পারছে না, আমারও কিছুটা লস বন্ধ হয়েছে। তবে যারা অন্যায়, দুর্নীতি বা অনীতি করে সব লুটেপুটে খাচ্ছে তাদেরকে আমি হয়ত মন থেকে ঘৃণা করি।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড