রহমান মৃধা
পৃথিবী সৃষ্টির পর নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ছিল, আছে, থাকবে। যৌনতায় আকৃষ্ট হওয়া ন্যাচারাল এবং জীব এবং প্রাণীর মধ্যে এটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবজাতি ছাড়া বিয়েশাদী অন্য কোনো প্রাণী বা জীব করে বলে আমার জানা নেই। বর্তমানে বিশ্বের সব মানুষই যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সেটাও সঠিক নয়। ইসলাম ধর্মে এর বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে। অন্য ধর্মেও তেমনটি আছে তবে শতভাগ পালন করে বলে মনে হয় না। সামাজিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বিবাহবন্ধনের গুরুত্ব রয়েছে।
বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এরা যদি বিবাহ বন্ধন ছাড়াই সন্তান জন্ম দেয় এবং সেই সন্তানকে অস্বীকার করে তখন সন্তান ও সন্তানের মায়ের পুরো জীবনটাই লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অপমানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। সহ্য করতে হয় সমাজের অত্যাচার অবিচার। সেক্ষেত্রে দরিদ্রের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তানের জন্মদান অপমান, ভর্ৎসনা, নিন্দা, তিরস্কার থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
যদিও বিবাহ করার পরও অনেকেই সন্তানের ভরণপোষণ দেয় না বাংলাদেশে। এটা বিশ্বের অন্যান্য অনেক সমাজে হুবহু লক্ষণীয়। কিন্তু ধনী পরিবার বা যে সমাজে রাষ্ট্রের সচ্ছলতা রয়েছে, রয়েছে পুরো সমাজের নিরাপত্তা (যেমন সুইডেন এক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ) সেখানে বিবাহ বন্ধন থাকা না থাকার কারণে সন্তান বা মায়ের উপর সামাজিক চাপ কোনোভাবেই প্রভাব ফেলে না।
সুইডেনে অনেক সময় দেখা যায় বাবা অথবা মা ভরণপোষণ না দিলেও সন্তানের স্বীকৃতি অস্বীকার করেনা। এই না করার পেছনে যে জিনিসটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে সেটা হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। গণতন্ত্রের দেশে সমাজব্যবস্থা এত নিশ্চিত যে বাবা-মার আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও সন্তানের ভরণপোষণ রাষ্ট্র নিয়ে থাকে যা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে নেই।
আমার মনে হয় না বাবা-মা কখনো এমন গুরুদায়িত্ব এড়াতে পারে যদি সে বিশেষ করে (বাবা) অমানুষ না হয়। যদিও এমন শিক্ষিত অমানুষ আমি দেখেছি যারা দিব্যি সন্তানের ভরণপোষণের গুরুদায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে, এমন কি সন্তানের দেখা শুনাও করেনা। এদেরকে আমি মানুষ নামের দানব বলে আখ্যায়িত করে থাকি এবং করিও। পৃথিবীতে খুব কম নজির রয়েছে যে একজন মা তার সন্তানকে দূরে সরিয়ে রাখে। তবে দুষ্ট মায়ের কিন্তু অভাব নেই সমাজে, যেমন সৎ মা, শাশুড়ি মা ইত্যাদি। তবে ওভার অল ভালো স্ত্রী সমসময়ই ভালো মা হয়ে থাকেন। আর একজন ভালো মা (হোক না সৎ বা শাশুড়ি মা) সব সময় ভালো মা-ই হয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন : ফিনল্যান্ড ভ্রমণ : সেদিন সাওনাতে যা ঘটেছিল
এখন সমাজে বিয়ে বন্ধনে ধর্মীয়ভাবে আবদ্ধ না হলে আমরা বলি অবৈধ সন্তান। অবৈধ সন্তানের সঠিক পরিচয় অনেক ক্ষেত্রে গোপন করা হয়। এসব অপ্রিয় সত্য সমাজের কারো অজানা নয়। তবে রাষ্ট্র যদি সুইডেনের মতো সমাজব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে পারত তাহলে সবকিছুই দিনে দুপুরে বৈধ হয়ে যেতো। নিচের গল্পটি ফেসবুক থেকে পাওয়া, বন্ধু মহলে গল্পটি বেশ আনন্দ দিয়েছিল। গল্পটি মূলত ভালোলাগা থেকে সংগ্রহ করা এবং পরে আমার ভাবনা থেকে উপরের কথাগুলো লিখা। এবার জানা যাক গল্পটির বিষয়বস্তু। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে যেমনটি লেগেছে আমার।
মিস্টার ফয়েজ সাহেবের চারটা বাচ্চা। একদিন পত্রিকায় তিনি দেখলেন যে সরকার ঘোষণা করেছে, যার পাঁচটা বা তার বেশি বাচ্চা আছে, তাকে প্রতি মাসে সরকার ২০ হাজার টাকা করে দেবে।
ফয়েজ সাহেব তখন খুশিতে গদগদ হয়ে তার বউকে খবরটা দেখালেন। একটু আমতা আমতা করে বললেন, তুমি যদি কিছু মনে না করো তো একটা কথা বলবো? বউ বলল, কিছু মনে করব না।
মি. ফয়েজ তখন বললেন, দেখো, তোমাকে বিয়ে করার আগে আমি আরেকটা বিয়ে করেছিলাম। সেটা ছিল পালিয়ে কাউকে না জানিয়ে। তো সেই ঘরে আমার একটা বাচ্চা আছে। তুমি বললে আমি ওকে নিয়ে আসব আর তখন আমাদের পাঁচটা বাচ্চা হয়ে যাবে এবং আমরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে পাব।
বউ মোটেই রাগ না করে বলল, যাও। নিয়ে এসো সুযোগ সময় মতো।
তো বাচ্চা নিয়ে ফিরে এসে মিস্টার ফয়েজ দেখল তার ঘরের দুটো বাচ্চা গায়েব।
ফয়েজ বউকে জিজ্ঞাসা করল ব্যাপার কী?
আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে
বউ তখন শান্ত হয়ে বলল, যার বাচ্চা সে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজ কি তুমি একাই পড়েছ...!
লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড