রহমান মৃধা
আমি বাংলাদেশের নদীর উপর একটি আর্টিকেল লিখে সাইমুমকে বলেছিলাম লেখাটি পড়ে তোমার মতামত জানিয়ো। সাইমুম নতুন প্রজন্মের একজন শিক্ষার্থী। জানতাম সে আমার লেখার মূলমন্ত্র বুঝবে এবং তার রিফ্লেকশন যেমনটি হওয়ার কথা সেটাই জানাবে। সাইমুমের মন্তব্যের পুরো অংশটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম।
লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে এর পেছনে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। অবাক হয়েছি তথ্যগুলো দেখে। অনেক নতুন নতুন বিষয় শিখেছি। এত কিছুর পরও নদী নিয়ে কেন আন্দোলন গড়ে উঠছে না?’
মানুষ হিসেবে আমরা যেন যান্ত্রিক চক্রে ঢুকে গেছি। আমাদের কোনো সময় নেই। খুবই ব্যস্ত। রোবট যেমন প্রতিনিয়ত কিছু নির্দিষ্ট কাজ পুনরাবৃত্তি করে ঠিক তেমনি আমরা যেন একটা চক্রে ঢুকে গেছি। মেসে বাধ্যতামূলকভাবে এসে আমার অবস্থা যেমন, পড়া-খাওয়া-ঘুম। তাছাড়া অন্য কোথাও মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই। তেমনি মহাকাশ থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে আমাদের সবার অবস্থা।
মানুষ হিসেবে আমরা যেন কিছু না করলে থাকতেই পারি না। কিছু না কিছু করতেই হবে। তেমনি এই কাজে সাহায্য করে বিনোদন। আইনস্টাইনের সময় আপেক্ষিকতা থেকে বিনোদনকে নাম দিয়েছি ‘টাইম জাম্পিং টুল’ বিনোদন নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে হন সময় কোন দিক দিয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না। আমরা কেন জানি এখন বিনোদনের জন্যও ব্যস্ত হয়ে যাই। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব এটাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু যাইহোক, শেষ পর্যন্ত আমরা কী এমনি থাকতে পারব না?
ব্যস্ততা ছাড়া সময় কাটাতে পারবো না? জীবনের মানে কী খুঁজে দেখতে পারবো না? প্রকৃতির দিকে তাকাতে পারব না? প্রকৃত শান্তি কী বা মনের ভেতরের তৃপ্ততা কী তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবো না? তার আগেই ‘টাইম জাম্পিং’ করতে করতে জীবনের শেষ মুহূর্তে পৌঁছে যাব? এত ব্যস্ততার কারণ কি? কিসের জন্য?
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নে এমন হয়েছে যে এসবের উত্তর সবখানেই পাওয়া যায় অর্থাৎ প্রশ্ন করাই বৃথা। সবাই যেন উত্তর জানে। উত্তরগুলো সামনে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আমরা কেন সেগুলো মানি না? সেটার উত্তর জানি না। সে যাইহোক এখন হয়তো আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আমরা খুবই ব্যস্ত (ধাঁধায় আচ্ছাদিত)। আমাদের সময় নেই নদী নিয়ে আন্দোলন করার বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভালো কাজ করার।
আমি সাইমুমকে লিখেছি, ‘সব কিছুর পরও আন্দোলন করতে হবে এবং সেটা হবে অন্য রকম যা অতীতে হয়নি। যাইহোক তুমি বিশ্লেষণ করে মন্তব্য জানানোর আগেই আমি আরেকটি লেখা সবে দাঁড় করেছি। এটা পড়লে হয়ত তোমার ভাবনার দরজায় নতুন ভাবনার আবির্ভাব হবে।’
আরও পড়ুন : বন্ধ হোক বর্বরতা, শুরু হোক সৃজনশীলতা
আমার ভাবনা থেকে সাইমুমের মতো কোটি কোটি তরুণদের জন্য আমার এ লেখাটি আশা করি সময় করে পড়ে নেবে। অতীতে অনেকে বলেছেন বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদের আবেদন ভবিষ্যতে কমে যাবে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে ঘটেছে তার ঠিক উল্টোটা। জাতীয়তাবাদের ধোঁয়া তুলেই কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায়। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে রাষ্ট্রযন্ত্র যে অস্ত্র ব্যবহার করছে সেটা হলো জাতীয়তাবাদ। আর ক্রমবর্ধমান অভিবাসন সমস্যা, বিশ্বায়নের কুপ্রভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এই উগ্র জাতীয়তাবাদের লেলিহান শিখায় ঘি ঢালছে।
যদি অতীতের ভবিষ্যতবাণী আজ মিলে যেত কী ভালোই না হতো! আমি মনে করি, না মেলার একমাত্র কারণ অতীতের ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল তৎকালীন বর্তমান পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে। সময় এসেছে অতীতে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ার।
বর্তমান এক চলন্ত গতি সেতো কখনও স্থির নয় তাকে দিয়ে কিছু হবে বলে মনে হয় না। যদি বলি বিনা ভোটে বর্তমান রাষ্ট্রের মালিক, সত্ত্বেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ ভবিষ্যতে কে মালিক হবে সেটা আমরা সঠিকভাবে নিশ্চিত নই তাই বর্তমান চলমান গতিতে। যেদিন দেশের মালিক জানবে কে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে চালিত করবে সেদিন সেই মুহূর্তে বর্তমানের পতন ঘটবে। রাষ্ট্রের মালিক ক্ষমতার জোরে হওয়া সম্ভব এবং সে দেশেরই কেউ হবে এমন কথা নেই।
যেমন অতীতে ব্রিটিশ পরে পাকিস্তান রাষ্ট্র শাসন করেছে কই তাদের কেউই তো বাংলাদেশের নাগরিক ছিল না। তবে দেশের মালিক (আমি তুমি এবং সে) আমরা যখন একটু সময় ব্যয় করে অতীতের সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, দেশের ভালো, মন্দ নিয়ে ভাববো তৎক্ষণাৎ বর্তমানকে দূর করে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়ভার দেব। এখন আমরা যারা দেশের মালিক আমরা রাষ্ট্রের কাছে গোলাম হয়ে গেছি। আমাদের প্রথম কাজ এখন গোলামি থেকে নিজেদের মুক্ত করা।
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, অধমদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। যুগে যুগে নবীনদের হাত ধরেই সমাজ, সভ্যতা কিংবা সংস্কৃতি এগিয়ে গেছে। হয়েছে প্রগতিশীল। আজকে আমি যে কথাগুলো বলার জন্য পাঠকের দুয়ারে হাজির হয়েছি, তা নিশ্চয়ই কেউ কেউ আঁচ করতে পেরেছেন। নবীনদের জয়গান গাওয়ার পেছনে নবীন হিসেবে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
আইকন বা ইমেজ অথবা সংকেত সৃষ্টির যে প্রবণতা মানুষের মধ্যে আদি থেকে বিরাজমান। কীভাবে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করা যায় সেটি চিন্তা করেই বের করতে হবে। যেহেতু আমাদের কোনো প্রথাগত লিখিত কোনো নির্দেশ নেই। যেমন- দেশের মালিক কে এবং তার দায়িত্ব কী। বর্তমান যেমন স্থির নয় নবীনদের চিত্ত স্থির নয়, অশান্ত। আর অশান্ত চিত্তই পারে সমাজের অসঙ্গতিকে আঘাত করতে। অধমদের জাগিয়ে তুলতে। নবীনরা যতো প্রগতিশীল চিন্তাচর্চা করবে আমাদের দেশ ও সংস্কৃতি ততো বেশি সমৃদ্ধ হবে।
আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে
কাজের মধ্য দিয়ে নতুনত্বের খোঁজ করতে হবে। পাঠকের প্রতি অনুরোধ থাকবে সম্ভব হলে নতুন প্রজন্মকে একটু সুযোগ করে দিন দেশের বর্তমানকে ঘুরে দেখার। হোক বিবেকের জয়, হোক সুশিক্ষার জয়, হোক সুনীতির জয়, হোক উত্তম আদর্শের জয়, হোক নতুন প্রজন্মের জয়। হোক সোনার বাংলা গড়ার জয়। দেশ ও দেশের মালিকের স্বাধীনের এ যাত্রায় সবাইকে স্বাগতম।
লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড